আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ঐতিহাসিক ও আলোচিত সংসদীয় আসন ১৫৪ ময়মনসিংহ-৯ নান্দাইল আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাসদ ও জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে চলছে মনোনয়ন দৌড়। পরস্পরের দোষত্রুটি খুজঁছেন আর ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা সহ গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রার্থীগণ স্ব-স্ব দলের চেয়ারপার্সন সহ দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে যোগাযোগ সহ দৃষ্টি আকর্ষনের পথ খুজে বেড়াচ্ছেন। এমনকি সারা বছর যারা জনবিচ্ছিন্ন ছিলেন তারাও এখন বিভিন্ন কৌশলে প্রার্থী হওয়ার কথা জানান দিচ্ছেন। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা পুরোপুরি নির্বাচনমুখী। অন্যদিকে নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা বা কোন প্রক্রিয়ায় ভোট হবে এ নিয়ে দ্বিধায় আছে বিএনপি। তার পরও ভেতরে ভেতরে মাঠ গোছাচ্ছেন দলটির সম্ভব্য প্রার্থীরা। নির্বাচন নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যেও চলছে নানা আলোচনা। প্রতিদিনই পাড়া-মহল্লায়, চায়ের স্টলগুলোতে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। নান্দাইলে প্রায় ডজন খানেক মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নিজেদের যোগ্য মনে করে আগাম নির্বাচনী কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
স্বাধীনতা সংগ্রামের পর থেকে ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নান্দাইল আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক ৬ বার, বিএনপি’র ধানের শীষ ৪ বার ও জাপা’র লাঙ্গল প্রতীক ১ বার বিজয়ী হয়। জানাযায়, ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্যে ৩টি নির্বাচনেই বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় প্রার্থীগণ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তন্মধ্যে ১৯৭৩ সালে নৌকা প্রতীকে মরহুম রফিক উদ্দিন ভূইয়া, ১৯৮৮ সালে লাঙ্গল প্রতীকে খুররম খান চৌধুরী এবং সর্বশেষ ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মেজর জেনারেল আব্দুস সালামের মনোনয়ন পত্র ঋণ খেলাপীর দায়ে বাতিল হলে বর্তমান সাংসদ আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন বিনা প্রতিদ্বন্ধীতায় সাংসদ নির্বাচিত হন।
এ আসনটিতে বার বার আওয়ামী লীগ নির্বাচিত হলেও পিছিয়ে নেই বিএনপি। তাই আওয়ামী লীগ যোগ্য ও দক্ষ প্রার্থী বাছাইয়ে ব্যর্থ হলে আসনটি হারানোর আশঙ্কা প্রকাশ করছে আওয়ালীগের শীর্ষ নেতাকর্মীরা। বর্তমানে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নান্দাইল আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য ৮জন মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থী রয়েছেন। তন্মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন। যিনি নান্দাইলের বিভিন্ন রাস্তা-ঘাট, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠান সহ উপজেলায় প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যাপক উন্নয়নের পাশাপাশি জুয়া, অশ্লীল যাত্রা ও মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহন করেন। সাবেক সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল অব: আব্দুস সালাম যিনি নান্দাইল উপজেলা আওয়ামীলীগ এর দলকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের নৌকার নিশান উড়াতে চান।
এছাড়া রয়েছেন নান্দাইল উপজেলা পরিষদের বিপুল ভোটে নির্বাচিত উপজেলা পরিষদর সাবেক চেয়ারম্যান ও নান্দাইল উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য আব্দুল মালেক চৌধুরী স্বপন, গাজীপুর মহানগর আওয়ামীলীগের উপদেষ্ঠা নান্দাইল উপজেলার কৃতি সন্তান বিশিষ্ট সমাজ সেবক আলহাজ্ব জালাল উদ্দিন মাস্টার। যিনি নান্দাইলের বতর্মান রাজনৈতিক কলহ ভেঙ্গে নতুন রূপরেখার মাধ্যমে নান্দাইলকে বদলে দিতে সকলের সহযোগীতা কামনা করেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক গ্রন্থনা প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য শাহজাহান কবির সুমন, ময়মনসিংহের চিকিৎসকদের নেতা ডাঃ মতিউর রহমান, সহকারী ডেপুটি এটর্নী জেনারেল অব: (বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট) এডভোকেট আব্দুল হাই, ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এডভোকেট কবির উদ্দিন ভূইঁয়া। তবে মাঠ পর্যায়ে বর্তমান সংসদ আনোয়রুল আবেদীন খাঁন তুহিন এবং সাবেক সংসদ মেজর জেনারেল আব্দুস সালামের তোড়জোড় বেশ ব্যাপক থাকলেও পিছিয়ে নেই এডভোকেট মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার মোস্তাফিজুর রহমান খান, জালাল উদ্দিন আকন্দ সহ আরও অনেকেই নাম আসছে। তবে আসনটি ধরে রাখতে ১৪ দলের প¶ে সিনিয়র আইনজীবি ও জেলা জাসদের সভাপতি এডভোকেট গিয়াস উদ্দিন আহম্মেদ এবং জাতীয় পার্টির নেতা হাসনাত মাহমুদ তালহা, হাসনাত মাহমুদ তারিক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিএনপি থেকে ৫ জনের নাম মাঠে প্রচার রয়েছে। তন্মধ্যে সাবেক এমপি আনোয়ারুল হোসেন খান চৌধুরীর পুত্র ময়মনসিংহ উত্তর বিএনপির অন্যতম সদস্য ইয়াসের খাঁন চৌধুরী। যিনি তারুণ্যদের সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি’র হাতকে শক্তিশালী করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ধানের শীষ উপহার দিবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন। সাবেক এমপি খুররম খান চৌধুরীর পুত্র নাসের খান চৌধুরী, মালেয়শিয়া বিএনপির প্রকাশনা সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা এমডি মামুন বিন আব্দুল মান্নান যিনি বিএনপি’র ধানের শীষের মাধ্যমে নান্দাইলকে নতুনরূপে সাজাতে সকলের সহযোগীতা কামনা করছেন। নান্দাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র পৌর বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এএফএম আজিজুল ইসলাম পিকুল যিনি একাধিকবার কারাবরনকারী, নির্যাতিত, বিএনপি’র সকল আন্দোলনে অংশগ্রহনকারী সংগ্রামী নেতা। এছাড়া বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব:) শামসুল ইসলাম শাসছ। তিনিও একজন শক্তিশালী হিসাবে কাজ চলছে। এছাড়াও ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ (চরমোনাই) এর প্রার্থী হিসাবে মুফ্তি আবুল হাসিম মাঠ পর্যায়ে প্রচারের কাজ করছেন।
নান্দাইল উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মেজর জেনালের (অব:) আব্দুস সালাম ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আমিনুল ইসলাম শাহান জানান, সম্মলনের মাধ্যমে উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটি গঠিত হয়েছে। মূল আওয়ামীলীগের কোন কোন্দল নাই। দলীয় সভা নেত্রী মেজর জেনালের অব: আব্দুস সালামকে মনোনয়ন দিলে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত হবে। অপরদিকে বর্তমান আওয়ামীলীগের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন জানান, তাঁর বিগত দুই মেয়াদে নান্দাইল উপজেলার সকল ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। নেত্রী আমাকে আবারও মনোনয়ন দিলে এই আসনটি নেত্রীকে উপহার দিতে পারব।
বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খান চৌধুরীর পুত্র ইয়াসের খান চৌধুরী ২০১৮ সনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রাপ্ত হয়ে ছিলেন। তিনি বলেন, বিএনপি শেখ হাসিনার অধিনে নির্বাচনে যাবে না। দল যদি নির্বাচনে যায় আর আমাকে মনোনয়ন দেয় তবে এই আসনটি বিএনপির বিজয় সুনিশ্চিত হবে। অপরদিকে সাবেক এমপি খুররম খান চৌধুরীর পুত্র নাসের খান চৌধুরী বলেন, আমি কেন্দ্রের নিদের্শনার অপেক্ষায় আছি। দল নির্বাচন করলে এবং আমাকে মনোনয়ন দিলে আসনটি বিএনপির দখলে যাবে। উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫৪ ময়মনসিংহ-৯ নান্দাইল আসনে ভোট কেন্দ্র ১২১টি, মোট ভোটার সংখ্যা ৩লাখ ৫৪ হাজার ৭৪৬জন। পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৮১ হাজার ৮৪১জন, মহিলা ভোটার ১ লাখ ৭২ হাজার ৯০৫জন।