রমজানুল মোবারক কোরআন নাজিলের মাস। রাব্বুল আলামিন রমজানের পরিচিতি তুলে ধরে বলেছেন, ‘মাহে রমজান, যে মাসে অবতীর্ণ করা হয়েছে আল কোরআন, বিশ্ব মানবতার কল্যাণ ও হেদায়েতের জন্য।’ (বাকারা : ১৮৫)। এ আয়াতে কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার মাস রমজানুল মুবারক বলা হয়েছে। সে কারণেই এ মাসকে কোরআনের মাস বলা হয়। কাজেই এ মাসের প্রধান আমল হলো তেলাওয়াতে কালামে পাক। পবিত্র কোরআনের তেলাওয়াত এবং তা শোনার জন্য রমজানের প্রতি রয়েছে ২০ রাকাত তারাবির বিধান।
তারাবির মাধ্যমে পড়া ও শোনা হয় সুরা ফাতিহা থেকে সুরা নাস পর্যন্ত পুরো কোরআন। এ ছাড়া একাকী তাহাজ্জুদ ও আওয়াবিন নামাজেও তেলাওয়াত করা যায় কোরআনে কারিম। যারা নামাজে পড়তে পারবে না, তারা দেখে দেখে তেলাওয়াত করতে পারে। স্বাভাবিকভাবে কোরআন তেলাওয়াতে প্রতিটি হরফে ১০টি করে নেকি পাওয়া যায়। কিন্তু রমজানের ফজিলতের কারণে তা ৭০ গুণে বৃদ্ধি হয়ে প্রতি হরফে পাওয়া যায় ৭০০ নেকি। সাধারণত নামাজে তেলাওয়াত করলে প্রতি হরফে পাওয়া যায় ১০০ নেকি। রমজানে নামাজে তেলাওয়াত করলে তা ৭০ গুণ বৃদ্ধি হয়ে সাত হাজার নেকি প্রতি হরফে পাওয়া যায়।
অনেকে মনে করে, না বুঝে কোরআন পড়লে কোনো নেকি পাওয়া যায় না। এ ধারণা একান্তই ভুল। না বুঝে পড়লেও উল্লিখিত নেকি পাওয়া যায়। এতে সন্দেহ পোষণের কোনো কারণ নেই। শরিয়তে এটি একটি স্বীকৃত বিষয়।
নবী করিম (সা.) রমজানুল মুবারকে হজরত জিব্রাইল (আ.)-এর সঙ্গে কোরআন ‘দাওর’ করতেন প্রতিদিন। অর্থাৎ জিব্রাইল (আ.) পড়তেন আর প্রিয় নবী (সা.) শুনতেন, আবার প্রিয় নবী (সা.) পড়তেন জিব্রাইল (আ.) শুনতেন। এভাবে চলত পুরো রমজান। পবিত্র এ মাসে একজন মুমিনের জন্য অন্যান্য নফল ইবাদতের সঙ্গে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সর্বাধিক নেকির আমল হলো তেলাওয়াতে কোরআন। তবে এ কথা স্মরণ রাখতে হবে, কোরআন তেলাওয়াতের এ নেকি পেতে হলে কোরআন সহিহ-শুদ্ধভাবে পড়তে হবে। ভুল পড়লে নেকির পরিবর্তে গুনাহ হওয়ার আশঙ্কা আছে। বাংলা উচ্চারণে কোরআন পড়া শরিয়তে বৈধ নয়। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
তারাবিতে খতমে কোরআন যিনি পড়ান, যদি তিনি এর বিনিময় নেন তখন এ পড়া ও শোনার কোনো নেকি পাওয়া যাবে না। সঙ্গে সঙ্গে নামাজও শুদ্ধ না হওয়ার আশঙ্কা আছে। এ ব্যাপারটিও লক্ষণীয়। যদি কোথাও বিনিময়বিহীন খতমে কোরআন পড়ে এমন হাফেজ পাওয়া না যায় সেখানে সুরা তারাবি পড়াই উত্তম।