নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে তৃণমূল পর্যায়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। মেয়াদোত্তীর্ণ বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় প্রতিদিনই সম্মেলন হচ্ছে। সম্মেলনস্থলে কেন্দ্র থেকে ছুটে যাচ্ছেন দলের কেন্দ্রীয় উচ্চপর্যায়ের নেতারা। তারা দিক-নির্দেশনা ও প্রয়োজনীয় বক্তব্য দিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি যে সব জেলায় বিক্ষোভ সমাবেশ করছে সেই সব জেলার নেতাদের দেওয়া হচ্ছে বিশেষ বার্তা। বিরোধীদের সরাসরি মাঠে মোকাবিলা না করে কৌশলে মাঠ দখলের রাখার চেষ্ট চলছে। সবকিছু মিলিয়ে তৃণমূল আওয়ামীলীগ এখন উজ্জীবিত হয়ে ওঠেছে।
আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, আগামী ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে দলের জাতীয় কাউন্সিল। এ কাউন্সিল সামনে রেখে ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ সব জেলা, মহানগর ও উপজেলার সম্মেলন শেষ করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলনের পাশাপাশি সবগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের তাগাদা দিয়েছেন তিনি। দলীয় সভাপতির নির্দেশনার পর তৃণমূল সম্মেলনে ব্যস্ত দলটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তারই ধারাবাহিকতায় করা হচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ ইউনিটের সম্মেলন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে আওয়ামী লীগের মোট ৭৮টি সাংগঠনিক জেলা এবং সাড়ে ছয়শর মতো উপজেলা, থানা ও পৌর কমিটি রয়েছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০টি জেলার সম্মেলন শেষ করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। অর্ধেকের বেশি উপজেলায় সম্মেলন শেষ হয়েছে। বাকিগুলোতে সম্মেলনের জন্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে রবিবার (২৭ নভেম্বর) পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী ২৯ নভেম্বর নেত্রকোনা, আগামী ৮ ডিসেম্বর ময়মানসিংহ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়াও প্রতিদিনই কোনো না কোনো উপজেলায় সম্মেলন হচ্ছে। এসব সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সরাসরি অথবা ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকছেন। সমাবেশস্থলে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যরা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, স্থানীয় এমপিসহ দলের একাধিক উচ্চপর্যায়ের নেতারা ছুটে যাচ্ছেন। মঞ্চে বসেই নেতাকর্মীদের দিক-নির্দেশনামূলক বার্তা দিচ্ছেন। নির্বাচনের আগে নেতাকর্মীদের করণীয় বিষয়ে কর্মপরিকল্পনাও দিচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকেই জানান, সারা দেশে বিএনপি যেভাবে সমাবেশ করছে এবং সেসব সমাবেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের যে উপস্থিতি তা নজর এড়ায়নি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিএনপির সমাবেশের জন্য পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি না দিলেও জেলার আওয়ামী লীগের নেতাদের কঠোর বার্তা দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের নেতারা সরাসরি বিএনপিকে মোকাবিলা না করলেও কৌশলে তাদের ঠেকানোর কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে, ক্ষমতাসীন দল থেকে বারবার বলা হচ্ছে- বিএনপি তাদের দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে। কিন্তু সমাবেশে বা তাদের কার্যক্রমের নামে কোনো বিশৃঙ্খলা করলেই তা কঠোর হাতে দমন করতে প্রস্তুত আওয়ামী লীগ।
রবিবার (২৭ নভেম্বর) পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপির উদ্দেশে হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, সমাবেশে সরকার কোনো বাধা দেবে না, তবে আগুন ও লাঠি নিয়ে খেলতে এলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদের বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ বাস্তবায়নে কাজ করা হচ্ছে। তারিখও নির্ধারণ করা হচ্ছে। আশা করি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই মাঠপর্যায়ে সম্মেলন শেষ হয়ে যাবে। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত করাই আমাদের লক্ষ্য।
শুধু দলের জেলা-উপজেলা শাখা নয়, নির্ধারিত ১০ ডিসেম্বরের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন। ২৬ নভেম্বর মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৬ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এবং ১৫ ডিসেম্বর যুব মহিলা লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। যে কোনো সময়ে হতে পারে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলন। যদিও কেন্দ্রের আগে নগরের সম্মেলন হবে কি না-সে বিষয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলা হয়নি।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বলেন, সারা দেশে মেয়াদোত্তীর্ণ ইউনিটের সম্মেলন শেষ করার নির্দেশনা রয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী দায়িত্বপ্রাপ্তরা তাদের দায়িত্বে থাকায় এলাকায় সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা ও সম্মেলন করছেন। প্রতিদিন কোথাও না কোথাও সম্মেলন হচ্ছেই। আশা করি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সম্মেলন শেষ হবে। তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগই একমাত্র রাজনৈতিক দল; যে দলের কেন্দ্রীয় ও ইউনিট শাখাগুলো নির্ধারিত সময়েই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দলের জাতীয় সম্মেলন ঘিরে তৃণমূল পর্যন্ত দলকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। চলছে জেলা, উপজেলা, পৌর এবং ওয়ার্ড-ইউনিয়নের সম্মেলন। ঘোষণা হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ কমিটিও।