বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১২:১৭ অপরাহ্ন

ই-পেপার

রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘোলাটে করার অপচেষ্টা চলছে : প্রধানমন্ত্রী

চলনবিলের আলো ডেস্ক:
আপডেট সময়: বুধবার, ২ নভেম্বর, ২০২২, ৮:৫৩ অপরাহ্ণ

সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বব্যাপী একটা সংকট চলছে; এই সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক অবস্থাকে ঘোলাটে করা ও ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা চলছে। জাতীয় স্বার্থে এই প্রবণতাটা পরিহার করতে হবে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

বুধবার (২ নভেম্বর) জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ আহ্বান জানান।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে সম্পূরক প্রশ্নের সুযোগ নিয়ে জাতীয় পার্টির সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, বৈশ্বিক সংকটের প্রভাব মোকাবিলায় একাত্তরের মতো রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তোলার সম্ভাবনা আছে কি? জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, যুদ্ধের ভয়াবহতা ও ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি নিয়ে আমি খোলামেলা মানুষের কাছে কথা বলেছি। যদিও অনেকে আমার সমালোচনাও করেছেন। এখানেও কেউ কেউ বলেছেন, আমি এ ধরনের কথা বললে মানুষ ভয় পেয়ে যাবে। মানুষকে ভয় পাওয়ার জন্য না, সতর্ক করার জন্য এবং প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য এটা বলেছি। আমাদের মাটি অত্যন্ত উর্বর। আমরা ফসল ফলাব, খাদ্য উৎপাদন করব। আমরা যে পারি, সেটা বিশ্বে বুঝিয়ে দিয়েছি অনেক ক্ষেত্রেই।’

প্রশ্নকর্তাকে উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সব দল নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা বললেন? আমার প্রশ্ন এখানে, দেশ যখন এমন ক্রান্তিলগ্নে পড়ে, তখন আমাদের যারা বিরোধী দল আছে, আমি সবার কথা বলছি, তাদের মাঝে ওই উদ্বেগ আমরা দেখিনি। বরং দেখেছি এই সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক অশান্ত পরিবেশ কীভাবে সৃষ্টি করা যায়, সেটাই যেন তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে। এটা করাটা কি সমীচীন হচ্ছে? সমীচীন হচ্ছে না। তাহলে ওই অনুভূতিটা কোথায়? অনুভূতিটা থাকতে হবে দেশের পক্ষে। দেশপ্রেমটা থাকতে হবে। আজ বিশ্বব্যাপী ক্রাইসিস। এই সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক অবস্থাকে ঘোলাটে করা আর ঘোলাপানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করা, এই প্রবণতাটা পরিহার করতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঐক্যবদ্ধ শুধু মুখে বললে হবে না; নিজের থেকে পাশে দাঁড়াতে হবে। আমরা কিন্তু সবাইকে নিয়ে কাজ করি। আমরা যখন উন্নয়নটা করি, কোন এলাকাটা আমাদের ভোট দিল বেশি আর কোন এলাকা দিল না; সে বিবেচনা করি না। জনমানুষের জন্য আমাদের উন্নয়ন। গণমানুষের কথা চিন্তা করে কাজ করি। ঠিক তেমনি দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা বসে থাকিনি। অনেকে তো সমালোচনা করে যাচ্ছেন; বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এক মুঠো চালও দিয়ে বা পানি থেকে কাউকে উদ্ধার করতে দেখিনি।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমরা সবসময় ঐক্যে বিশ্বাস করি। যারা আসবেন তাদের সঙ্গে আমরা কাজ করব। এতে কোনো সন্দেহ নেই।’

একই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কেবল নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ কষ্টে ভুগছে। পণ্যমূল্য পরিবহনের জন্যও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যেখান থেকে খাদ্য বা তেল কিনতাম, যুদ্ধের কারণে কিনতে পারছি না। বিকল্প জায়গা খুঁজে বের করছি। সেখান থেকে যাতে আমরা খাদ্য, ডিজেল, তেল, সার আনতে পারি; সেই ব্যবস্থা করছি। এমনকি এলএনজি আমদানির জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছি ও নিয়েছি।’

গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, সেই সঙ্গে স্যাংশন। এর ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। সারা বিশ্বের অবস্থাই খুব টালমাটাল। শুধু বাংলাদেশ নয়। বরং বাংলাদেশ অনেক উন্নত দেশ থেকে ভালো অবস্থায় আছে বলে মনে করি। ইউরোপ, আমেরিকা, গ্রেট ব্রিটেনসহ বিভিন্ন দেশের অবস্থা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রতিটি জায়গায় জ্বালানি তেলের অভাব, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য ব্যবস্থা সব জায়গায় লোডশেডিং। গ্রেট ব্রিটেনে বিদ্যুতের দাম ৮০ ভাগ বেড়েছে। তারা সবকিছু রেশন করে দিচ্ছে। সেই পরিস্থিতিতে আমাদের দেশে যাতে প্রভাবটা না পড়ে, তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি।’

জাতীয় দৈনিকের রিপোর্ট, বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির প্রতিবেদন ও ওয়ার্ল্ড ফুড প্রজেক্টের রিপোর্টের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির রুমিন ফারহানা বলেন, বাংলাদেশে ৬৮ শতাংশ মানুষ খাবার কিনতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। এই রিপোর্ট ওয়ার্ল্ড ফুড প্রজেক্টের। সিপিডি বলছে, দক্ষিণ এশিয়ায় খাবারের দাম সবচেয়ে বেশি। যে ৪২টি দেশে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে বাংলাদেশ তার একটি। এমনকি প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত বারবার বলছেন দুর্ভিক্ষ হতে পারে, সবাই যেন সাবধান হয়। পত্রিকায় লিড নিউজ চাল আটা ভুট্টার দামে রেকর্ড। রুমিন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার কী পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছে, তা জানতে চান।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগেই বলেছি ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার কিছু লোক থাকে এবং সেসব লোকের কথাই সদস্য বলেছেন। যে পত্রিকাগুলোর নাম তিনি নিয়েছেন তার মধ্যে একটা পত্রিকা কিন্তু আমি কখনো পড়ি না। পড়ি না এই কারণে, তারা সবসময় উল্টোদিকে থাকে। এরা কখনো বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকুক, তা চায় না। একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তারা পছন্দ করে। পছন্দ করে এজন্য যে, তাদের একটু ভালো হয়, কোনো রকম কদর বাড়ে সেজন্য। বাংলাদেশে তো দাম বেড়েছে, আমি তো অস্বীকার করছি না। আর দাম বেড়েছে বলেই না আমরা ভর্তুকি দিয়ে স্বল্পমূল্যে যারা ক্রয় করার সক্ষমতা রাখে না, তাদের দিচ্ছি।’

সিপিডির নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে প্রতিষ্ঠানটির কথা উনি উল্লেখ করেছেন, সে প্রতিষ্ঠানের তো কোনো কিছুই ভালো লাগে না। তাদের ভালো লাগে কখন, যখন সেনাশাসন ছিল, যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল, তাদের একটু কদর বাড়ত। এই আশায় তারা বসে থাকে এটাই বাস্তবতা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর