আইন-শৃঙ্খলার ব্যাপক অবনতির কারণে কক্সবাজার সদর উপজেলার ভারুয়াখালী ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের মধ্যে আতংক এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। রশিদ নগর-ভারুয়াখালীর প্রধান সড়কের,করিরটেক,ঘুনারপাড়া মাদ্রাসা সংলগ্ন, মরহুম আবু সামা চেয়ারম্যানের পূর্বপাশে এবং মোশারফ পাড়া একের পর এক ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। প্রায় প্রত্যেক রাতে কোনো না কোনো স্টেশনে, বাড়িতে ছোট-বড় চুরির ঘটনা ঘটেই চলেছে। ভারুয়াখালী বাজার, হাইস্কুল স্টেশনে, আনুমিয়ার বাজার, উল্টাখালী সহ গ্রামের অলিতে গলিতে গড়ে ওঠা বিভিন্ন দোকান প্রতিনিয়তে বড় বড় তালা ভেঙ্গে চুরির স্টাইলে ডাকাতি করছে। টমটম,অটোরিকশা, মোটরসাইকেল চুরির ঘটনা ঘটেছে একের পর এক বাড়ি ঘরের আসবাবপত্র চুরি করে নিয়ে যাওয়া কোনভাবে থেমে নেই। ভারুয়াখালী ইউনিয়নে ডাকাতি,খুন, চুরি রাহাজানি,মারামারি প্রত্যহ কারণ হয়ে রয়েছে। সচেতন মহলের দাবি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও প্রশাসনের মাধ্যমে একটি সাঁড়াশি অভিযান চালানো অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
প্রসঙ্গত,দক্ষিণপাড়া জানে আলম নামে এক প্রবাসী জানাই,ভারুয়াখালীত ডাকাতি এই নামটি যুগের পর যুগ পেরিয়ে যাচ্ছে তারপরও মুছে যাচ্ছে না সড়ক ডাকাত। কেন কি কারণে এসব ডাকাতের দমন করা যাচ্ছে না আমি বুঝতে পারছি না। আমরা বিদেশ থেকে কয়েক বছর পর পর আসি আমার ঢাকা,কক্সবাজার চিটাগং থেকে আসতে কোন রকমের ভয় লাগেনা, কিন্তু দুঃখের বিষয় ভারুয়াখালীতে নিজের জন্মভূমি ঢুকতেই ভয় লাগে। আমার জানামতে জনপ্রতিনিধিদের দুর্বলতার কারণে ডাকাতি সংঘটিত হয়ে থাকে। জনপ্রতিনিধিরাই জানে কে ডাকাতি করছে চুরি করছে।
৬ নং ওয়ার্ডের হাজিরপাড়া নুরুল কবির নামে এক প্রবাসী জানান, ২৭ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে তাহার বাড়ির দেয়াল ভেঙ্গে (শীংগাত করে) বাড়িতে থাকা স্বর্ণ গহনা, টাকা পয়সা ও মোবাইল থেকে শুরু করে সকল দামি দামি জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে গেছে। এর পূর্বেও আরেকবার আমার বাড়ি চুরি করে আমাকে সর্বশ্রান্ত করেছিল।
সাবেক পাড়ার গোলাম রহমান জানান, আমার এলাকায় চুরের যন্ত্রণায় এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই বাড়ি চুরি করা একটি স্বাভাবিক অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘরের দরজা জানালা যেভাবে বন্ধ করে রাখা হোক না কেন কৌশলে বাড়িতে ঢুকে মোল্লা জিনিসপত্র নিয়ে যায় তো স্বাভাবিক, রান্না করার রাইস কুকার,গ্যাস সিলিন্ডার সোলা সুদ্ধ নিয়ে যাচ্ছে। চুর ধরা পড়লেও তেমন বিচারও পাওয়া যায় না।
হাই স্কুল স্টেশনের সালাউদ্দিন সওদাগর জানাই, ২৭ অক্টোবর বৃহস্পতিবার গভীর রাতে আমার দোকানে তালা ভেঙ্গে নগদ টাকা সহ আমার দোকানের মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে গেছে। আমার ৬৫ হাজার টাকার উপরে নগদ টাকা ও মালামাল নিয়ে গেছে। এ বিষয়ে আমি থানার একটি জিডি করে করছি।
এর পূর্বে হাই স্কুল স্টেশনে নবী আলম সওদাগর এর দোকান তিনটি তালা ভেঙ্গে চুরি করছিল, তিনি বলেন, হাই স্কুল স্টেশনের দোকান চুরি করা স্বাভাবিক নিয়মে চলতে আছে। এর পূর্বে এই স্টেশনে আরো ৪-৫ টা দোকান চুরি হয়েছে এবং আমার দোকানও এই পর্যন্ত দুইবার চুরি হয়েছে।
ভারুয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান ৫ নং ওয়ার্ডের বর্তমান এমইউপি এম এ কাশেম জানান, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে এটা সঠিক। যেখানে জুয়া, মাদক, ডাকাতি,খুন এবং চুরির ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমার দৃষ্টিকোণ থেকে ইয়াবা ও মাদক ব্যবসায়ী এবং মাদক সেবনকারী বৃদ্ধি পাওয়াতে প্রতিনিয়তে ডাকাতি, খুন, চুরি, ধর্ষন থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপকর্ম সীমা ছাড়িয়ে গেছে। যেখানে আমাদের মত জনপ্রতিনিতিদের পাত্তা দিচ্ছে না অপকর্মে জড়িত থাকা সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারিরা। ভারুয়াখালীতে আইন-শৃঙ্খলার অবনতির একটি নিত্যনৈমিত্তিক কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির কারণে সাধারণ মানুষ এখন আতঙ্কে আছে। আইন শৃঙ্খলা সম্পর্কে ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগ বিষয় জানতে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি এইবারে মেম্বার হওয়ার পর থেকে ভারুয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক কোন মিটিং বা উদ্যোগ গ্রহণ করছে এমনটা আমি দেখি নাই। আমার অভিজ্ঞতা থেকে ভারুয়াখালীতে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে পেতে চাইলে প্রথমে মাদকের সাথে জড়িত সিন্ডিকেট ও মাদক কারবারি কে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
পুলিশ নীরবতা পালন করায় অপরাধীরা প্রশ্রয় পাচ্ছে এবং অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সরজমিনে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে, দেখা যায় ভারুয়াখালীতে আইন-শৃঙ্খলা অবনতির কিছু কারণ উপলব্ধি হয়। যেখানে দেখা যায়, মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক সেবনকারী অত্যাধিক হারে বৃদ্ধি। কিছু অর্থলোভী মানুষ কাজের তাদের স্বার্থ উদ্ধারে এবং জবরদখল করতে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের ভাড়াটিয়া গুন্ডা হিসাবে ব্যবহার করে যাচ্ছে পাশাপাশি কিছু কিছু জনপ্রতিনিধিরাও এভাবে সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে থাকে। স্বার্থন্বেষী মানুষ টাকার জোরে কিশোরদের লাঠিয়াল শক্তি হিসেবে ব্যবহার করে ধীরে ধীরে তৈরি করছে কিশোরগ্যাং। এসব কিশোরগ্যাং একপর্যায়ে সে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভয়ংকর অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী পরিণত হচ্ছে এবং পেশাদার মাদকাসক্ত হিসেবে পরিণত হচ্ছে। এইভাবে ভারুয়াখালীতে সৃষ্টি হচ্ছে অসংখ্য অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্ত কিশোরগ্যাং। তখন একপর্যায়ে পরিণত হয় ভয়ংকর ডাকাত ও ভাড়াটিয়া অস্ত্রধারী গুন্ডা। ওই সন্ত্রাসীরা ভাড়াটিয়া হিসাবে অর্থের কাছে জিম্মি হয়ে যে কোন ধরনের অবৈধ কাজ করতে সক্ষম হয়। এর ধারাবাহিকতায় একপর্যায় এসে মাদকের টাকা না পেয়ে ডাকাতির,চুরি,খুন পর্যন্ত করছে। ধারাবাহিকভাবে খুন ও হত্যা চলছে। যেমন কিছুদিন পূর্বে নবাব মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে কুপিয়ে হত্যা। ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের উল্টাখালী আব্দু রহিমের ছেলে আজিজুল হক’কে তার বাড়ির পাশে গভীর রাতে কুপিয়ে জবাই করে হত্যা। জামাইয়ের হাতে শ্বশুর-শাশুড়ি জোড়া খুন। এইরকম অসংখ্য খুনের খুনিরা কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে তাদের অন্ধকার জগতের বাণিজ্য আছে চলছে।
এইভাবে চলছে ভারুয়াখালীর সকল ধরনের অপকর্ম। যার কারণ আইন-শৃঙ্খলা দিনের পর দিন অবনতি হয়ে ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে। মামলার সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছ। সাধারণ জনগণ আতঙ্কে বসবাস করছে। সাধারণ জনগণ এইসব সন্ত্রাসী অস্ত্রধারী কালোবাজারি, মাদকাসক্ত, মাদক ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে শাস্তি প্রদান করা, প্রশাসনের কাছে হস্তক্ষেপ কামনা করেন।