শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ১১:৪৫ অপরাহ্ন

ই-পেপার

বঙ্গবন্ধু নৌপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নের প্রথম পথপ্রদর্শক

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
আপডেট সময়: শুক্রবার, ১২ আগস্ট, ২০২২, ৭:৩৫ অপরাহ্ণ

বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ যেমন পরস্পর অভিন্ন, তেমনি নদ-নদীসহ প্রাকৃতিক জলসম্পদ ও নৌ পরিবহন ব্যবস্থা এ দেশের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এর সঙ্গে মিশে আছেন কালের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এক কথায় নৌপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর অবদান ছিল প্রথম পথপ্রদর্শক। এ কারণেই হয়তো অন্নদাশঙ্কর রায় লিখেছিলেন, ‘যতদিন রবে পদ্মা মেঘনা গৌরী যমুনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।’
নৌ পথের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর অবদান প্রসঙ্গে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন, মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত পাকিস্তানের রেখে যাওয়া ‘খনক’ নামের একটি মাত্র ড্রেজার দিয়ে বিশাল আয়তনের অভ্যন্তরীণ নৌপথের নিয়মিত পলি অপসারণ ও নদী খনন সম্ভব নয়। বঙ্গবন্ধু তার সংক্ষিপ্ত শাসনামলে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের জন্য দু’দফায় নেদারল্যান্ডস থেকে সাতটি উন্নতমানের ড্রেজার সংগ্রহ করেছিলেন। যে গুলো এখনও বিআইডবিøউটিএ’র বহরে যুক্ত ও সচল রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করেছিলেন, নদীমাতৃক কৃষিপ্রধান ও প্রাকৃতিক মৎস্যনির্ভর প্রিয় মাতৃভূমিকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে আত্মনির্ভরশীল করতে অমূল্য জলসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার অনস্বীকার্য। সে জন্য নদ-নদী সচল রাখা, নৌ পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও উন্মুক্ত জলসম্পদ রক্ষা করা আবশ্যক। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনসহ নানা ঝুঁকি মোকাবেলায় শত ব্যস্ততা ও প্রতিক‚লতার মধ্যেও তিনি নদী খননে মনোযোগী ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলে নেদারল্যান্ডস থেকে প্রথম দুটি ড্রেজার ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুকে শুভেচ্ছাস্বরূপ দিয়েছিল নেদারল্যান্ডস। অন্য পাঁচটি ১৯৭৫ সালে সে দেশ থেকে ক্রয় করা হয়েছিল।
জাতির পিতা বাংলাদেশের অনন্য প্রাকৃতিক সম্পদ সুন্দরবনকে নিয়েও ভাবতেন-এমনটি উল্লেখ রয়েছে সাংবাদিক আশীষ কুমার দে’র লেখা বই ‘নদী রক্ষা ও নৌখাতের উন্নয়ন: বঙ্গবন্ধু থেকে শেখ হাসিনা’তে। দূরদর্শী নেতা বঙ্গবন্ধু সুন্দরবনের ভবিষ্যত নিয়ে উদগ্রীব ছিলেন। যেহেতু আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দর মংলার সঙ্গে শিল্প ও বন্দরনগরী খুলনাসহ দেশের অন্যান্য স্থানের নৌ যোগাযোগ অপরিহার্য ছিল।
বঙ্গবন্ধু তার উপলব্ধি থেকে মংলা বন্দর ও খুলনার মধ্যে বিকল্প নৌপথ সৃষ্টির উপায় খুঁজতে থাকেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সেখানকার পরিস্থিতি সরজমিন পরিদর্শনে ছুটে যান তৎকালীন নৌ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী জেনারেল আতাউল গণি (এম এ জি) ওসমানী, যিনি ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি। ঢাকায় রাষ্ট্রীয় দপ্তরে বসে ওসমানীকে পাঠিয়েই দায়িত্ব শেষ করেননি বঙ্গবন্ধু। বিকল্প নৌপথ খুঁজতে পরবর্তী সময়ে নিজেও ছুটে গিয়েছিলেন মংলায়।
রাষ্ট্রনায়ক ও সেনানায়কের পরিদর্শন শেষে লুপ কার্টিং ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জ উপজেলার ঘষিয়াখালী থেকে রামপাল উপজেলার বেতিবুনিয়া পর্যন্ত ৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার সংযোগ খাল খনন করা হয়। এর পর ১৯৭৪ সালে ৩১ কিমি দীর্ঘ মংলা-ঘষিয়াখালী চ্যানেল বা নৌ-পথ। যার মূল লক্ষ্য ছিল- সুন্দরবনকে অক্ষত রেখে মংলা সমুদ্রবন্দরের পণ্য আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে স্বল্পদূরত্বের বিকল্প পথ আবিষ্কার করা। চালুর অল্পদিনের মধ্যেই নতুন নৌপথটি সার্বিক বিবেচনায় হয়ে ওঠে জনপ্রিয়।
বাংলাদেশ-ভারত নৌ-বাণিজ্য প্রটোকল রুটের অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় চ্যানেলটি আন্তর্জাতিক নৌপথের স্বীকৃতি পেয়েছে। শেলা নদীর ওপর দিয়ে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল বন্ধ হওয়ায় পরিত্যক্ত বিষাক্ত জ্বালানি তেল ও ভয়াবহ শব্দদূষণ থেকে সুন্দরবন রক্ষা পেয়েছে।
মংলা-ঘষিয়াখালী বিকল্প চ্যানেল সৃষ্টির বঙ্গবন্ধুর ওই পদক্ষেপ ছিল যুগান্তকারী, যা ইতিহাসের মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত। বাংলাদেশে নৌপথের দৈর্ঘ্য ২৫,১৪০ (পঁচিশ হাজার একশ’ চল্লিশ) কিলোমিটার, যা বঙ্গবন্ধু হত্যা-পরবর্তী ৩০ বছরে মাত্র ৫,৯৬৮ (পাঁচ হাজার নয়শ’ আটষট্টি) কিলোমিটারে নেমে এসেছিল।
বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি) প্রতিষ্ঠা করেন। এটি রাষ্ট্রায়াত্ত একটি বাণিজ্যিক সংস্থা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর