শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:৩৭ অপরাহ্ন

ই-পেপার

ইউপিডিএফ এর দেয়া ৮৭টি দাবিতে ‘শান্তি চুক্তি’র প্রস্তাবে কি আছে ?

নির্মল বড়ুয়া মিলন, রাঙামাটি প্রতিনিধিঃ
আপডেট সময়: রবিবার, ৩ জুলাই, ২০২২, ৩:২৮ অপরাহ্ণ

চলমান সংলাপ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইউপিডিএফ মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে সরকারের নিকট দলের দাবিনামা পেশ করেছে।
গত ৯ জুন ২০২২, বৃহস্পতিবার, খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলাধীন ২ নং চেঙ্গী ইউনিয়নের বড়কলক এলাকায় এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পানছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান শান্তি জীবন চাকমাসহ স্থানীয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিগণের উপস্থিতিতে এ দাবি হস্তান্তর করা হয়।
ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-মূল) এর পক্ষে দলের কেন্দ্রীয় সদস্য উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা মেজর (অবঃ) এমদাদুল ইসলামের কাছে এ দাবিনামা হস্তান্তর করেন।
উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা বলেন, গত শতকের ‘৭০, ৮০ দশকের পার্বত্য চট্টগ্রামের সাথে আজকের পার্বত্য চট্টগ্রামের বিস্তর ফারাক। কিন্তু তারপরও যেন কোন কোন মহলের দৃষ্টিভঙ্গি সেই আগের মতোই রয়ে গেছে। তারা ৭০, ৮০ দশকের চোখ দিয়ে বর্তমান পার্বত্য চট্টগ্রামকে দেখতে চাইছেন এবং সেইভাবে মূল্যায়ন করছেন। কিন্তু এটা স্পষ্টতই ভুল। আমাদেরকে অবশ্যই এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। কারণ শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এটা বলা যায় প্রথম ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শর্ত।’
মধ্যস্থতাকারীদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর এমদাদুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন। তিনি ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নিকট চুক্তি আকারে পেশকৃত ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-মূল) এর দাবিনামা এবং তার যৌক্তিকতা’ সরকারের কাছে পৌঁছে দেবেন বলে জানান।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘আপনি যেমন শুনেছেন, আমিও শুনতে পাচ্ছি ৷ অগ্রগতি তখনই বলি, যখন একটা কিছু হয় ৷ এটা এখনো লিকুইড স্টেজে৷ একটা কিছু ফর্ম করুক, তারপর বলব৷ যা করারৃ পাহাড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যই চেষ্টা করছি৷ পাহাড়ে রক্তপাত বন্ধ করার জন্য চেষ্টা করছি৷ ”
পাহাড়ে বিদ্রোহ আর রক্ত¶য় অবসানে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) এর সঙ্গে শান্তি চুক্তি করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার৷
তখন জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) নেতৃত্বাধীন পিসিজেএসএসের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ ছিল পাহাড়িরা৷ কিন্তু চুক্তির বিরোধিতা করে পার্বত্য চট্টগ্রামের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে ১৯৯৮ সালে প্রসিত বিকাশ খিসার নেতৃত্বে গড়ে ওঠে ইউপিডিএফ৷
এছাড়া পিসিজেএসএস-আওয়ামী লীগ সরকারের চুক্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সকল নাগরিকের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক অধিকার সমূন্নত এবং আর্থ সামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া তরাšি^ত করা এবং বাংলাদেশের সকল নাগরিকের স্বস্ব অধিকার সংরক্ষন এবং উন্নয়নের কথা থাকলেও কিন্তু কৌশলগত ভাবে পার্বত্য অঞ্চলে কয়েকশত বছর ধরে বসবাসকারী বড়ুয়া জনগোষ্ঠীকে পার্বত্য চুক্তিতে নাম অন্তর্ভুক্ত না করে বৃহত্তর ১টি পার্বত্য অঞ্চলে তাদের বসবাস বা অবস্থাকে অস্বীকার করা হয়েছে এটা পরিস্কার। এছাড়া সাঁওতাল, অহমিয়া ও গুর্খা জনগোষ্ঠীর কথাও চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। পার্বত্য চুক্তির পর থেকে প্রতিটি স্থরে এবং রাজনৈতিক ভাবে পার্বত্য অঞ্চল বসবাসরত বড়ুয়া জনগোষ্ঠী বৈষম্যের শিকার এবং বড়ুয়া জনগোষ্ঠীকে পার্বত্য অঞ্চল থেকে উৎখাত করার সুদুর প্রসারী ষড়যন্ত্রের গন্ধ রয়েছে।
পার্বত্য অঞ্চলে মাত্র কয়েক’শ জনের বসবাস পাংখোয়া, লুসাই (মিজু), চাক, খুমি, খিয়াং ও ম্রো জনগোষ্ঠীর জন্য যদি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালেয়ে, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদে, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডে এবং রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দারবান পার্বত্য জেলা পরিষদে কোটা সংর¶ণ করা যায়, তাহলে ১টি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বড়ুয়া, সাঁওতাল, অহমিয়া ও গুর্খা জনগোষ্ঠীর কোটা সংরক্ষণ করা যাবে না কেন ? নতুন পার্বত্য চুক্তিতে ইউপিডিএফ এবং আওয়ামী লীগ সরকার নিশ্চয় বিষয়টি আমলে নিবেন।
পার্বত্য চুক্তির পূর্বে পার্বত্য অঞ্চলের বসবাসরত অধিবাসীদের যে রাজনৈতিক অধিকার ছিল চুক্তির পর ২৫ বছরেও আদৌ তার অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌছতে পারেনি। রাষ্ট্র পরিচালনাকারীরা বা রাষ্ট্র যন্ত্র ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তারিখে স্বাক্ষরিত শান্তি চুক্তির মুল স্প্রিট থেকে ২০০৭ সালে সরে গেছে এবিষয়টি সকলকে বুঝতে হবে। এর পিছনে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকার, পিসিজেএসএস, ইউপিডিএফ, সকল জাতীয় ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং পাহাড়ের সাধারন জনগণের আরো আন্তরিক হওয়া অত্যান্ত প্রয়োজন।
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস) যেই ভুল করেছেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-মূল) নিশ্চিয় সেই ভুলটি করবেন না। আশা করা যায় ইউপিডিএফ ২৫ বছরে ১৯৯৭ সালের শান্তি চুক্তির শুভংকরের ফাঁকি আমলে নিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হবেন।
প্রস্তাবে যা আছে :
চুক্তির আকারে পেশ করা ইউপিডিএফের দাবিনামায় আটটি ভাগ আছে৷ ৬৬ পৃষ্ঠার ওই প্রস্তাবে মোট ৮৭টি দাবি এবং প্রত্যেক দাবির যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করা হয়েছে৷
দাবিনামার ভাগগুলো হলো- সাংবিধানিক অবস্থা, সাংবিধানিক আইন ব্যতিত অন্যান্য কতিপয় আইনের রহিতকরণ ও সংশোধন, সংরক্ষিত এলাকা ঘোষণা, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন ১৯৮৮ এর সংস্কার, পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন সমূহের সংস্কার, পুলিশ বাহিনী ও প্রশাসন, পুনর্বাসন মামলা প্রত্যাহারসহ অন্যান্য বিষয় এবং চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটি ও চুক্তি বলবৎকরণ৷
ইউপিডিএফ সংগঠক অংগ্য মারমা বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে গত কয়েক বছর ধরে চলমান সংঘাতে তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্থ৷
তিনি বলেন ‘‘তারপরও আমরা সহনশীল৷ কীভাবে সংঘাত বন্ধ করে পার্বত্য জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা যায় সে চেষ্টায় আছি৷ সরকারও আন্তরিকতা দেখাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে৷ কথা বলার অবস্থা তৈরি হচ্ছে৷ তাই সরকারের সাথে ডায়লগে যাওয়ার আগে এই প্রস্তাব৷ ’’
বর্তমান পরিস্থিতিতে এ ধরনের কোনো সংলাপ হলে সব পক্ষের উপস্থিতি প্রয়োজন উল্লেখ করে অংগ্য বলেছেন, ‘‘পার্বত্য চট্টগ্রামের বর্তমান পরিস্থিতির সঠিক সমাধান চাইলে সবাইকে নিয়ে সংলাপের কোনো বিকল্প নেই৷

 

 

#CBALO / আপন ইসলাম


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com