বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৭:৫১ অপরাহ্ন

ই-পেপার

পদ্মা সেতু : ফুরাল অপেক্ষা, উদ্বোধন উৎসব শনিবার

চলনবিলের আলো ডেস্ক:
আপডেট সময়: শুক্রবার, ২৪ জুন, ২০২২, ১০:২৮ পূর্বাহ্ণ

অপেক্ষা ফুরাল। রাত পোহালেই খুলবে দখিনের স্বপ্ন দুয়ার খ্যাত পদ্মা সেতুর দুয়ার। এখন পদ্মার দুপাড় থেকে শুরু করে সারা দেশে সেতুকে ঘিরে উচ্ছ্বাস। এরই মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করে সেতুটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড (এমবিইসি)।

এদিকে, স্বপ্নের সেতুর উদ্বোধন উৎসবের অধীর অপেক্ষায় রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলবাসী। শিবচরের বাংলাবাজার ফেরিঘাট এলাকায় প্রায় ১০ লক্ষাধিক মানুষের জন্য ১৫ একর জায়গাজুড়ে চলছে জনসভার প্রস্তুতি। নারীদের জন্য থাকছে আলাদা বসার ব্যবস্থা। ভিআইপি অতিথি, বিদেশি অতিথি এবং কূটনীতিকদের জন্য তৈরি হচ্ছে আলাদা জোন। স্মরণকালের সেরা জনসভার জন্য অপেক্ষা করছে দেশবাসী।

পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মো. আবদুল কাদের বলেছেন, ঠিকাদার তার কাজ শেষ করে সেতু বুঝিয়ে দিয়েছে। তবে যে কোনো অবকাঠামোর ক্ষেত্রে ছোটোখাটো কাজ থাকবে। আগামী এক বছর ধরে তারা সে কাজ ‘ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড’ করবে।

এদিকে সেতুর উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে উৎসবের আমেজ মুন্সীগঞ্জের পদ্মাপাড়ে। উদ্বোধন ও সমাবেশ হবে মাওয়ায়। তাই প্রস্তুতি এখন শেষ পর্যায়ে। পদ্মা সেতু উত্তর থানাসংলগ্ন অনুষ্ঠান স্থল ও ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতেও চলছে সাজসজ্জা। জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতার প্রতীক পদ্মা সেতু ২৫ জুন সকালে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিন ২৬ জুন ভোরে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে বহুল প্রত্যাশিত এই মেগাস্ট্রাকচার।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সেতুতে ১৩ ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারবে। তবে নসিমন, করিমন, ভটভটি ও সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করতে পারবে না। এমনকি হেঁটেও মানুষ যাতায়াত করতে পারবে না।

এরই মধ্যে পদ্মা সেতুতে গাড়ি পারাপারে টোল নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে কোন ধরনের যানবাহন চলাচল করতে পারবে তাও নির্দিষ্ট করে দিয়েছে।

জনসভার স্থান ঘুরে জানা গেছে, জনসভাকে ঘিরে চলছে ব্যাপক আয়োজন। মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়েছে ঠিক পদ্মা সেতুর মতো। মঞ্চের সামনে পানিতে ভাসমান অবস্থায় থাকছে বিশাল এক নৌকা। দূর থেকে দেখলে মনে হবে পদ্মা সেতুর পাশ দিয়ে চলছে বড় এক নৌকা। জনসভায় আসা মানুষের কাছে দূর থেকে জীবন্ত মনে হবে দৃশ্যটি। ১১টি পিলারের ওপর ১০টি স্প্যান বসিয়ে তৈরি করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ব্যতিক্রমী এই মঞ্চ।

জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১০ লক্ষাধিক মানুষের অংশগ্রহণের জন্য প্রায় ১৫ একর জায়গাজুড়ে চলছে প্রস্তুতি। প্রস্তুতির ৯০ শতাংশ কাজ এরই মধ্যেই শেষ হয়েছে। আজ পর্যন্ত পুরো কাজও শেষ হবে। জনসভার জন্য তৈরি করা হয়েছে ১৫০ ফিট দৈর্ঘ্য একটি বিশাল মঞ্চ। দশ লক্ষাধিক মানুষের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে অস্থায়ী ৫০০ টয়লেট, ভিআইপিদের জন্য থাকছে ২২টি আলাদা টয়লেট। রয়েছে পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা। সুপেয় পানির জন্য থাকছে অসংখ্য পানির ট্যাপ। নারীদের জন্য আলাদা বসার জায়গা, তিনটি ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল, সভাস্থল থেকে দুই কিলোমিটার দূরবর্তী স্থানের দর্শকদের জন্য থাকছে ২৬টি এলইডি মনিটর, ৫০০ মাইকসহ অত্যাধুনিক সাউন্ডসিস্টেম।

জনসভার মঞ্চ তৈরির দায়িত্বে থাকা ক্যানভাস বাংলাদেশ ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের উন্নয়নকর্মী কবির হোসেন জানান, দৃষ্টিনন্দন এবং ইউনিক এই মঞ্চ তৈরির কাজ শেষের পথে। আমাদের কর্মীরা দিনরাত পরিশ্রম করে মঞ্চটি তৈরির কাজ করছে। মঞ্চের সামনে পানি থাকবে। পানির ওপর ছোট-বড় বেশ কয়েকটি নৌকা ভাসতে থাকবে। আসলে পুরো মঞ্চটি পদ্মাসেতুর আদলে করা হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জনসভাস্থলের তিন বর্গকিলোমিটার জায়গাজুড়ে আলোকসজ্জার কাজ চলমান রয়েছে। বেশির ভাগ কাজ শেষ হয়েছে এরই মধ্যে। পুরো এলাকার নিরাপত্তার জন্য রয়েছে সেনাবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জনসভাস্থলে আসা জনসাধারণের জন্য ২০ শয্যার একটি এবং ১০ শয্যার দুটি ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসাকেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে।

আজকের মধ্যে জনসভাস্থলের পুরো কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন জনসভাস্থল নির্মাণ কাজের দায়িত্বে থাকা পিয়ারু সরদার অ্যান্ড সন্সের ব্যবস্থাপক মো. মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, আমাদের আর ১০ শতাংশ কাজ বাকি। খুব দ্রুতই কাজ শেষ করা হবে। স্মরণকালের সেরা একটি জনসভা হবে এটি। সেভাবেই সব প্রস্তুত করা হচ্ছে।

ফায়ার সার্ভিস ফরিদপুর অঞ্চলের সহকারী পরিচালক নজরুল ইসলাম জানান, জনসভাস্থল এবং নৌপথে আমাদের শতাধিক ফায়ারম্যান নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করবে। এছাড়া নির্দেশনা অনুযায়ী যেকোনো কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছে আমাদের ফায়ারম্যান।

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, মানুষের স্বপ্নের এই পদ্মা সেতুকে ঘিরে অপেক্ষার শেষ নেই। আগামীকাল শনিবার সেতু উদ্বোধনকে ঘিরে পদ্মাপাড়ে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। আর মানুষের মনে বইছে উৎসবের আমেজ।

মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী এই জনসভায় কমপক্ষে ১০ লাখ লোকের সমাগম হবে। অনুষ্ঠানে আসা এই বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্য আমরা সব ধরনের সুবিধা দিতে প্রস্তুত রয়েছি। পানি থেকে শুরু করে চিকিৎসাসহ সব ব্যবস্থা থাকছে। জনসভাস্থলে ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসাকেন্দ্রে সব ধরনের ব্যবস্থা থাকবে। আর সর্বোচ্চ নিরাপত্তা তো থাকছেই।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com