চিনি, পেঁয়াজ, ফুল, ফল, গাড়িসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় ও বিলাসী ১৩৫টি পণ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করেছে বাংলাদেশ। সোমবার (২৩ মে) থেকে নতুন এই শুল্ক কার্যকর হয়েছে। মঙ্গলবার (২৪ মে) জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) প্রজ্ঞাপন জারি এ তথ্য জানায়।
জানা গেছে, বর্তমানে ডলারের ঊর্ধ্বগতি ও আন্তর্জাতিক বাজারে জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে আমদানি নিরুৎসাহিত করতে বেশ কিছু পণ্যে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। এ জন্য ২০২১ সালের একটি প্রজ্ঞাপন সংশোধন করে মঙ্গলবার সকালে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করে এনবিআর। এদিন দুপুরে ওই প্রজ্ঞাপনের ব্যাখ্যা দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।
নতুন করে শুল্ক বৃদ্ধিতে বিদেশি ফুল, বিদেশি ফল, আমদানি করা চিনি, অপরিশোধিত সরিষা তেল বা পেঁয়াজের ওপর বাড়তি ৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক দিতে হবে। চিনির ওপর শুল্ক বসবে ৩০ শতাংশ। বিদেশি সুগন্ধি, প্রসাধনী বা রূপসজ্জা পণ্য, গাড়ি, গাড়ির টায়ার এবং বিদেশি আসবাবপত্রের ওপর সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ শুল্ক বসবে।
বর্তমানে বিদেশি ফলের ওপর ৫৮ থেকে ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্ক দিতে হয়। সেখান নিয়ন্ত্রণ শুল্ক দিতে হয় তিন শতাংশ পর্যন্ত। নতুন নিয়মে এই শুল্ক তিন শতাংশের পরিবর্তে ২০ শতাংশ দিতে হবে। প্রসাধনী, গাড়ির সরঞ্জাম, সুগন্ধির ওপর এখনো ১০৪ থেকে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক দিতে হয়। নিয়ন্ত্রণ শুল্কে এসব পণ্যের দাম আরও বাড়বে।
কেন আমদানি শুল্ক বসালো?
এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে দেশে যে অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে এবং বৈদেশিক মুদ্রার সংকট সামলাতে তারা এই নিয়ন্ত্রণ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। মূল্য বৃদ্ধির ফলে ক্রেতারা এসব পণ্য ব্যবহারে বা আমদানিতে নিরুৎসাহিত হবেন বলে কর্মকর্তাদের ধারণা। একই সঙ্গে এনবিআর বলছে, দেশেই ফুল, ফল উৎপাদন ও আসবাবপত্র তৈরি হওয়া। ফলে নিয়ন্ত্রণ শুল্ক বাড়ানোয় দেশের বাজারে
এর প্রভাব ফেলবে না।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মুখপাত্র সৈয়দ এ মোমেন বলছেন, অর্থনৈতিক পুনর্গঠন, বিলাসবহুল পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা ও আমদানি হ্রাস করার উদ্দেশ্যে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোসহ পৃথিবীর সব দেশই বিলাসবহুল পণ্যের আমদানি কমাচ্ছে। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের জন্য সুরক্ষার ব্যবস্থা নিচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় এনবিআরের বড় একটি লক্ষ্য বলে তিনি জানান।
যেসব পণ্যের আমদানির ওপর নিয়ন্ত্রণ শুল্ক বসানো হয়েছে
আপেল, আঙ্গুর, কলা, আম, কমলাসহ বিদেশি ফল- ২০%, ফুল- ২০%, অপরিশোধিত সরিষা তেল- ১০%, চিনি- ৩০%, পেঁয়াজ- ৫%, সুগন্ধি- ২০%, দাঁত সুরক্ষার সরঞ্জাম- ২০%, প্রসাধনী- ২০%, আঠা-১৫%, গাড়ি-৩০%, আসবাবপত্র- ২০%, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, ফার্স্ট এইড বক্স- ১০ ভাগ।
বাংলাদেশের শুল্ক আইন ১৯৬৯ অনুযায়ী, সংসদের অনুমোদন ছাড়াই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রণ শুল্ক আরোপ করতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশে ৩ হাজার ৪০৮টি পণ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ শুল্ক রয়েছে।
শ্রীলঙ্কায় বৈদেশিক মুদ্রার ব্যাপক সংকট এবং ঋণ খেলাপি হওয়ার পর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণের ব্যাপারে সতর্ক হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি বেশ কিছু বিলাসী দ্রব্য আমদানিতে পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পাকিস্তান। করোনাভাইরাসের ধকল কাটিয়ে ওঠার পর বাংলাদেশে গত কয়েকমাসে আমদানি অনেক বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্য-পণ্য, জ্বালানি তেল, গ্যাস, কাঁচামালের দাম বেড়েছে। ফলে এসব পণ্য আমদানি করতে গিয়ে ডলারের ব্যাপক চাহিদার কারণে এটির বিনিময় মূল্যও রেকর্ড ছুঁয়েছে।
আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। ডলারের বিপরীতে টাকার মান কয়েক দফায় কমিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৯ মে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নির্দেশ দেন, যাতে তারা ডলারের বাজার এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে পরিকল্পনা গ্রহণ করে।
#CBALO/আপন ইসলাম