দেশে সামাজিক মাধ্যম এবং অনলাইনে বিনোদনমূলক প্লাটফর্মগুলোকে নিয়ন্ত্রণের জন্য নতুন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি এ ব্যাপারে একটি নীতিমালার খসড়া তৈরি করেছে।
বিটিআরসি’র কর্মকর্তারা বলেছেন, ফেসবুক ও ইউটিউবসহ সামাজিক মাধ্যম এবং নেটফ্লিক্সের মত ওটিটি প্লাটফর্মের কর্মকাণ্ডে শৃঙ্খলা আনার লক্ষ্যে তারা নীতিমালা প্রণয়নের এই উদ্যোগ নিয়েছেন।
তারা উল্লেখ করেছেন, তাদের এই নীতিমালা তৈরির জন্য হাইকোর্টেরও নির্দেশ রয়েছে।
সামাজিক মাধ্যমসহ অনলাইন প্লাটফর্ম নিয়ে কাজ করেন, এমন একজন আইনজীবী বলেছেন, মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতা আরও খর্ব করার জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন থাকার পরও আলাদা নীতিমালা করা হচ্ছে।
নীতিমালার খসড়ায় যা আছে
সামাজিক মাধ্যমসহ অনলাইন প্লাটফর্মগুলোর জন্য যেমন অনেক নিয়মের কথা প্রস্তাব করা হয়েছে, একইসাথে এসব প্লাটফর্ম ব্যবহারকারীদের জন্যও রাখা হয়েছে অনেক নিয়ম। যেমন:
সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী কেউ এসব পোস্ট বা প্রচার করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
একইসাথে এই বিষয়গুলোতে ফেসবুক এবং ইউটিউব কর্তৃপক্ষসহ সব সামাজিক মাধ্যম এবং অনলাইনে বিনোদনের প্লাটফর্মগুলোকেও সজাগ থাকতে হবে।
বিনোদনের ওটিটি প্লাটফর্মগুলোতে অশ্লীল এবং অনৈতিক কোন কন্টেন্ট প্রচার করা যাবে না, বলা হচ্ছে নতুন নীতিমালার খসড়ায়।
অন্য দেশের সাথে সম্পর্কের বিষয়
বাংলাদেশের সাথে বন্ধু দেশগুলোর সম্পর্কের ক্ষতি করতে পারে-এ ধরনের মন্তব্য, খবর বা কন্টেন্ট সামাজিক মাধ্যমে বা বিনোদন প্লাটফর্মে প্রচার করা যাবে না।
সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী কেউ এটি না মানলে তা অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে।
ভুয়া অ্যাকাউন্ট
নীতিমালার খসড়ায় অন্যের পরিচয়ে সামাজিক মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট বা ভুয়া অ্যাকাউন্ট বিষয়কেও অপরাধ হিসাবে প্রস্তাব করা হয়েছে। কেউ অন্য একজনের নাম বা পরিচয় ব্যবহার করে ফেসবুক বা সামাজিক মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খুলে তৎপরতা চালালে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে।
অন্যের নামে পোস্ট দিয়ে কেউ কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি করলে আসল ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তাব এসেছে বলে বিটিআরসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। কোন ব্যক্তিকে সমাজে হেয় করবে-এমন কোন পোস্ট বা মন্তব্যও করা যাবে না। পোস্ট, কন্টেট বা মন্তব্য ব্লক করার প্রস্তাবও রয়েছে। যে বিষয়গুলো নিয়ে কোন পোস্ট দেয়া যাবে না বা কন্টেন্ট প্রচার করা যাবে না-তারপরও অনলাইনে কোন মাধ্যমে এসব প্রচার করা হলে বিটিআরসি তা ব্লক করে দিতে পারবে।
ফেসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক মাধ্যম এবং অ্যামাজন প্রাইম এবং নেটফ্লিক্স সহ ওটিটি প্লাটফর্মের যারা বাংলাদেশে কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, তাদের প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন করতে হবে।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর শিকদার জানিয়েছেন, ফেসবুক এবং ইউটিউবসহ কিছু প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে সম্প্রতি নিবন্ধন করে কর দিচ্ছে। এই নিবন্ধন করা হয়েছে ট্যাক্সের জন্য। এর বাইরে কর্মকাণ্ড চালানো এবং কন্টেন্টের বিষয়ে বিটিআরসির কাছে নিবন্ধনের প্রস্তাব এসেছে খসড়া নীতিমালায়। তিনি আরও বলেছেন, গুগল, ফেসবুক এবং ইউটিউব কর্তৃপক্ষের সাথে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও বিটিআরসি তিন মাস পর পর নিয়মিত বৈঠক করছে। এসব বৈঠকে বাংলাদেশে তাদের কর্মকাণ্ড এবং সামাজিক মাধ্যমে শৃঙ্খলার বিষয়ে আলোচনা হয়।
কিন্তু ফেসবুক, ইউটিউবসহ অনলাইন প্লাটফর্মে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান যারা অন্য দেশ থেকে কর্মকাণ্ড চালায়, তাদের কীভাবে বাংলাদেশে নিবন্ধনের আওতায় আনা সম্ভব হবে-এমন প্রশ্ন রয়েছে অনেকের।
তবে বিটিআরসির চেয়ারম্যানের বক্তব্য অনুযায়ী, ফেসবুকসহ এসব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে যাতে তাদের অফিস চালু করে- এনিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে বাংলাদেশ সরকার আলোচনা চালাচ্ছে।
এখানে প্রতিষ্ঠানগুলো অফিস খুললে তাদের নিবন্ধনের আওতায় নেয়া সহজ হবে।
#চলনবিলের আলো / আপন