রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৭ অপরাহ্ন

ই-পেপার

পুষ্টি গুণে ভরা গাছ আলু এখন বিলুপ্তীর পথে

সাইদুজ্জামান সাগর, নওগাঁ প্রতিনিধি:
আপডেট সময়: রবিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ২:৩১ অপরাহ্ণ

সব্জির জগতে আমরা অনেক রকম অপ্রচলিত সব্জির নাম শুনে থাকি। গাছ আলু তেমনি একটি সব্জি। নওগাঁর রাণীনগরে এটি গোজাআলু ও গজআলু নামে পরিচিত। বাণিজ্যিকভাবে এর চাষবাস তেমন হয় না, তবে গ্রাম অঞ্চলের প্রায় প্রতিটি বাড়ির চারপাশে, গাছের নিচে, আঙিনায়, বেড়ার ধারে প্রাকৃতিক ভাবেই জন্মে ও বেড়ে উঠে। আধুনিকতার ছোঁয়ায় পাল্লা দিয়ে মানুষ নানাবিদ প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে ভুমির ব্যবহার বাড়িয়ে দেওয়ার ফলে গ্রাম অঞ্চলে বাড়ির সামনে আঙিনা এবং ঘরের পাশে ঝোপ-ঝাড়ও হারিয়ে যাচ্ছে। মানুষের ভ‚মি চাহিদা বাড়ার প্রভাবে পুষ্টি গুণে ভরা লতানো এই গাছ আলু গাছ এখন বিলুপ্তির পথে।

নওগাঁর রাণীনগর কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গাছ আলু গরম আবহাওয়ায় ভালো জন্মে। শীতে গাছ শুকিয়ে মারা যায়। আংশিক ছায়াতে এ গাছ ভালো হয়। এই আলু দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন নামে পরিচিত। দেশে ৪-৫টির মতো এ আলুর জাত আছে। জাতভেদে মাটিরনিচে প্রতিটি আলু ২ কেজি থেকে ৩০-৪০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এসব আলু ডিম্বাকৃতি, লম্বাটে আকারে হয়ে থাকে। মাটির নিচের আলু ছাড়াও লতানো গাছে ১০০-১৫০ গ্রাম ওজনের অনেক আলু ঝুলন্ত অবস্থায় ধরে থাকে।

কার্তিক-অগ্রহায়ণে ঠান্ডা পড়তে শুরু করলে পাতা হলদে হয়ে পুরো গাছ শুকিয়ে যায়। পুরোপুরি শুকিয়ে গেলে আলু তোলা উচিত। এতে আলু পরিপক্বতার কারণে বীজের মান উন্নত এবং স্বাদ বৃদ্ধি পায়। ভাদ্র-আশ্বিন মাসে গাছ আলু গাছের গোড়ার মাটি সরিয়ে মুখের অংশ ঠিক রেখে নিচের দিক থেকে খাওয়ার জন্য আলু কেটে নিতে হয়। এতে গাছ মরে যায় না বরং ওই কাটা অংশে আলু আগের অবস্থায় স্বাভাবিক নিয়মে বড় হতে থাকে। জমিতে মাচা তৈরি করে গাছ আলু চাষ করলে প্রতিবিঘায় এ আলুর গড় ফলন ৩ থেকে ৪ টন পর্যন্ত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

উপজেলার খাসগড় গ্রামের ইসহাক সাকাফি আকাশ জানান, এটি ওল, গোল আলু এসব সবজির মতোই ভর্তা, মাছ ও মাংসের সাথে রান্না করে খাওয়া যায়। তবে আমরা সিদ্ধ করে ভর্তা ও পুড়িয়ে বেশি খেয়ে থাকি, পুড়িয়ে খেতে আলুটি খুব সুস্বাদু ও মুখরোচক। সামান্য আঠালো এবং অল্পতেই সিদ্ধ হয়।

সিম্বা গ্রামের ইমদাদুল ফকির বলেন, গ্রামে আগে পুকুর পুসকুনির পাড়ে এবং বাড়ির পাশে পরিত্যাক্ত জায়গায় এমনিতে এই আলুর গাছ হতো। মানুষ এখন ঝোপঝাড় পছন্দ করে না, তাই ওসব জায়গার জগল কেটে ফাঁকা করে সব সময় জায়গুলো পরিস্কার রাখে।

রাণীনগর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো: শহিদুল ইসলাম বলেন, অন্য সবজির তুলনায় এই সবজি উৎপাদনে ঝুঁকি, রোগবালাই অত্যন্ত কম। আমাদের দেশে মানুষের শারীরিক পুষ্টিহীনতা দূর করতে ও সবজির ঘাটতি মেটাতে এ আলু বিশেষ অবদান রাখতে পারে। রাণীনগর উপজেলায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গাছ আলু চাষাবাদে প্রচার-প্রসার হয়নি বিধায় এর চাষের উন্নয়নও ঘটেনি। গাছ আলু চাষে মাঠ পর্যায়ের কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে আমরা কাজ করছি। কৃষকরা একটু সচেতন হলে অতি সহজে কম খরচে সহজলভ্য সবজি গাছ আলু বা মেটে আলু চাষ করে লাভবান হওয়া সম্ভব।

 

 

#চলনবিলের আলো / আপন


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর