বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:০৩ অপরাহ্ন

ই-পেপার

সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস সহকারী অবৈধ আয়ে বিপুল সম্পদের মালিক

নিজস্ব প্রতিনিধি:
আপডেট সময়: সোমবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ৪:৩৩ অপরাহ্ণ

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের কেরানী মহির উদ্দিন অবৈধভাবে অর্জিত টাকায় বিপুর সম্পদের মালিক বনে গেছে।
সাব-রেজিষ্টি অফিসের কেরানী মহির উদ্দিন একই জেলার সলঙ্গা থানার বড়গোজা গ্রামের এক গরীব কৃষক ওসমান খন্দকারের ছেলে। তার বিপুল অর্থ ও সম্পদের পাহাড় দেখে এলাকার সচেতন মহলে মাঝে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। এবিষয়ে স্থানীয়রা দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সরকারী বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

অভিযোগ সুত্রে ও অনুসন্ধানে জানা যায়, সলঙ্গা থানার বড়গোঁজা গ্রামের ওসমান খোন্দকারের ছেলে ও শাহজাদপুর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের প্রধান অফিস সহকারী (কেরানী) মহির উদ্দিন এক সময়ে নকল নবিশ পদে অস্থায়ী ভিত্তিতে চাকুরী জীবন শুরু করেন। এরপর প্রধান অফিস সহকারী হিসেবে পদোন্নতি লাভ করে বিভিন্ন সাব-রেজিস্ট্রী অফিসে দায়িত্ব পালন করেন। কিন্ত শাহজাদপুর উপজেলায় সাব-রেজিষ্টি অফিসে যোগদানের পর থেকেই অঢেল সম্পদের মালিক বনে যান তিনি।

স্থানীয়রা জানান, মহির উদ্দিনের বাবা ওসমান খোন্দকারের বসতবাড়ীসহ মোট জায়গার পরিমান ছিল দেড় বিঘা। কিন্তু সেই দেড় বিঘা জায়গা মহির উদ্দিনের ৫ভাইয়ের মধ্যে বন্টন হলে মহির উদ্দিন তার অংশে পান ১০শতক জায়গা। এদিকে মহির উদ্দিন ব্যতিত তার অন্য চারভাইয়ের মধ্য দর্জি জহির উদ্দিন, মজনু, মস্তোফা এলাকায় কৃষি কাজ করে ও ইউসুফ আলী সলঙ্গা সাব-রেজিষ্টি অফিসে পিয়ন পদে অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ কোন মতে সংসার চালাচ্ছেন।

সরজমিনে দেখা যায়, সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের কেরানী মহির উদ্দিন তিনতলা বাসা-বাড়ী এবং মার্কেটসহ নামে-বেনামে জায়গা-জমি সলঙ্গা সাব-রেজিস্ট্রী অফিসের মাধ্যমে নিজ নামসহ মা মইফুল খাতুন ও স্ত্রী রাজিয়া খাতুনের নামে রেজিষ্ট্রি করেছেন। এছাড়াও তার গোঁজাপালপাড়া গ্রামে তিনতলা বাসা ও তার সামনে নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত বাসা ও মার্কেট করেছেন। এছাড়াও কয়েক কোটি টাকার জায়গা-জমি ও পুকুর কিনে মাতা মইফুল খাতুন ও স্ত্রী রাজিয়া খাতুনের নামে বায়না করেছেন।

তথ্য সুত্রে জানা যায়, মহির উদ্দিনসহ তার মা মইফুল খাতুন ও স্ত্রী রাজিয়া খাতুনের নামে কোটি কোটি টাকার জায়গা ও জমি ক্রয় করেছেন। সেগুলো হলো বড়গোঁজা ব্রীজের উত্তরপার্শ্বে পালপাড়ায় ১৭ শতক জায়গা কিনে সেখানে গড়ে তুলেছেন ৩ তলা বাড়ী। এই জায়গাটি কিনেছেন ৫০ লাখ টাকা দিয়ে আর দলিলে তুলছেন মাত্র ১৫ লাখ। রেজিষ্ট্রি করেছেন নিজের নামে এবং স্ত্রী রাজিয়া খাতুনের নামে। অত্যাধুনিক এই বাড়ী নির্মানে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১কোটি টাকা। পাশেই সাড়ে ১০শতক জায়গা কিনে করেছেন বাড়ি ও মার্কেট। এটাও কবলা করেছেন নিজের নামে ও স্ত্রী রাজিয়া খাতুনের নামে। এই জায়গা ক্রয়সহ বাসা ও মার্কেট নির্মানে ফাউন্ডেশনসহ ব্যয় হয়েছে প্রায় ৫০ লাখ টাকা। বড়গোজা গ্রামের আব্দুর রহমানের কাছে থেকে ৫০ শতক বাড়ী কিনেছেন ৫৫ লাখ টাকা দিয়ে কিন্তু দলিলে তুলছেন ৩৫ লাখ টাকা। এটা রেজিষ্ট্রি করেছেন মাতা মইফুল খাতুনের নামে। রেজিষ্ট্রির তারিখ-১৭/৪/১৮,দলিল নং-১৬৮০/১৮। চরবেড়া গ্রামে আব্দুল আলীম তালুকদারের কাছে থেকে পুরানবেড়া মৌজায় ৩বিঘা জমি কিনেছেন ৩০ লাখ টাকা দিয়ে কিন্তু দলিলে তুলেছেন ২০ লাখ টাকা। এটা রেজিষ্ট্রি করেছেন মাতা মইফুল খাতুনের নামে। রেজিষ্ট্রির তারিখঃ ২/৬/২০২১,দলিল নং-১৪৭৫/২০। বড়গোজার শাহজাহান আলী আকন্দ থেকে সাড়ে ২৪শতক বাড়ী কিনেছেন ৪৯ লাখ টাকা দিয়ে কিন্তু দলিলে তুলেছেন ৩০ লাখ টাকা। এটা রেজিষ্ট্রি করেছেন স্ত্রী রাজিয়া খাতুনের নামে। রেজিষ্ট্রির তারিখঃ ১২/৪/২০২১, দলিল নং-১৭০৯/২১। বড়গোজা গ্রামের শাহজাহান আলী আকন্দ থেকে ৫২ শতক জমি কিনেছেন ২৫ লাখ টাকা দিয়ে অথচ দলিলে তুলেছেন ১২লাখ ২০ হাজার টাকা। এটা রেজিষ্ট্রি করেছেন নিজের নামে। রেজিষ্ট্রির তারিখঃ ৬/৮/২০২০, দলিল নং-২৩৭৫/২০। একই এলাকার আবুল কাশেমের থেকে ৩২শতক জমি কিনেছেন ১৫লাখ টাকা দিয়ে আর দলিলে তুলেছেন ৭লাখ ৫০ হাজার টাকা। এটা রেজিষ্ট্রি করেছেন স্ত্রী রাজিয়া খাতুনের নামে। রেজিষ্ট্রির তারিখঃ ২৩/১২/২০২০, দলিল নং-৫৫১৫/২০। আবুল কাশেম, আবুল কালাম আজাদ, কাওছার আলী ও তানজিল হকের থেকে ২৪শতক জায়গা কিনেছেন ১০লাখ টাকা দিয়ে অথচ দলিলে তুলেছেন ৫লাখ ৬০ হাজার টাকা। রেজিষ্ট্রি করেছেন স্ত্রী রাজিয়া খাতুনের নামে। রেজিষ্ট্রির তারিখঃ১২/১/২০২১, দলিল নং-১৫৬/২১। শাহজাহান আলী আকন্দ ওরফে শাহজাহান কেরানীর থেকে পাচকুড়ায় ৩৬ শতক ও মরাবিলে ২০ শতকসহ ৫৬ শতক জায়গা কিনেছেন ৩০ লাখ টাকা দিয়ে কিন্তু দলিলে তুলেছেন ১৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। রেজিষ্ট্রি করেছে ১৫/১৬/১৭ সালে। একই থানার রামারচর গারাদহ এলাকায় শহিদুল ইসলামের থেকে ৪০শতক জায়গা ৪০ লাখ টাকা মুল্য নির্ধারন করে বায়না করেছেন। বাসুদেবকোল কলেজ পাড়ায় শ্বাশুড়ীর নিকট থেকে সলঙ্গা ডিগ্রী কলেজের পুর্ব-উত্তর পাশে বাসুদেবকোল মৌজায় ১৫শতক জায়গা ৩০লাখ টাকায় কিনে স্ত্রী রাজিয়া খাতুনের নামে বায়না করেছেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ সামান্য টাকা বেতনে চাকুরী করে কিভাবে মহির উদ্দিন নামে-বেনামে এভাবে অঢেল সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।

এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলার সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের প্রধান সহকারী মহির উদ্দিন এর সাথে বার বার ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর