শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া এবং করোনার সংক্রমণের হার সিঙ্গেল ডিজিটে না নামলে সেপ্টেম্বরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হবে না। অনুকূল পরিস্থিতির অপেক্ষায় রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে নভেম্বরে সীমিত পরিসরে খুলে দেওয়া হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। স্কুল-কলেজ খুলে নভেম্বরের মাঝামাঝিতে এসএসসি ও ডিসেম্বরের শুরুতে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে প্রথমে এসএসসি ও এইচএসসি শিক্ষার্থীদের ক্লাসে নেওয়া হবে। এরপর বাকিদের পর্যায়ক্রমে ক্লাস চালু হবে। সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে শিক্ষক, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় নেওয়া গেলে আবাসিক হল খুলে দেওয়া হবে।
কাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি
গত কয়েক দিন ধরে সংক্রমণ কিছুটা কমতির দিকে। আশা করা হচ্ছে নভেম্বর-ডিসেম্বরে সংক্রমণ আগের বছরের মতো নিচে নেমে আসবে। পাঁচ শতাংশ বা এর কাছাকাছি অঙ্কে নেমে এলেই খুলে দেওয়া হতে পারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থী, শিক্ষকদের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়টিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি। সব পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সার্বিক প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পুরোপুরি নির্ভর করছে করোনার অবস্থার ওপর। গত বছরের অভিজ্ঞতা বলে, নভেম্বর-ডিসেম্বরে সংক্রমণ কম ছিল। যদি এ বছর একই রকম দেখা যায় তবে তখন এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা নিতে পারবো। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও খুলে দেওয়া সম্ভব হবে ইনশাআল্লাহ।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান বলেন, ‘পরিস্থিতি অনুকূলে না এলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললেও দেখা যাবে অনেক অভিভাবক ছেলেমেয়েদের স্কুল-কলেজে পাঠাচ্ছেন না। তবে গত বছরের মতো সংক্রমণ কমলে খুলে দেওয়া যেতে পারে।’
বিশ্ববিদ্যালয় খোলার কতদূর?
বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থী অনেক। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়েই আছে প্রায় ২৮ লাখ শিক্ষার্থী। সব মিলিয়ে ৪০ লাখের কাছাকাছি। এদের প্রত্যেককে টিকা দিতে সময় লাগবে। তাই বলতে পারছি না কবে নাগাদ খুলতে পারবো। তবে টিকা নিতে মানুষের যে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে, তাতে দ্রুত সবাইকে টিকার আওতায় আনা যাবে।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা-ক্লাস
স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাতে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয় সে কারণে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে গ্রুপভিত্তিক নৈর্বাচনিক পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। আবশ্যিক বিষয় বাদ দেওয়ার ফলে একসঙ্গে বেশি পরীক্ষার্থী বসবে না। ফলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাতে শিক্ষার্থীরা পাঠদানে অংশ নিতে পারে সে জন্য প্রথমে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আনা হবে। পরিস্থিতি অনুকূলে এলে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আনা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মো. গোলাম ফারুক বলেন, ‘টিকা কার্যক্রম দ্রুত চললে সংক্রমণ কমবে। পরীক্ষা নেওয়ার জন্য পুরোপুরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ারও প্রয়োজন নেই। যেদিন পরীক্ষা হবে সেদিন খুললেই হবে। তবে পরিস্থিতি অনুকূলে না এলে অ্যাসাইনমেন্টের নম্বর যোগ করে ফলাফল দেওয়া হবে।’
টিকা কার্যক্রম
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সরকারি সব শিক্ষক-কর্মচারীদের টিকা সম্পন্ন হয়েছে। ২০ হাজার ২২৪টি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মোট শিক্ষক ৩ লাখ ৬৩ হাজার ২২২ জন। টিকা নিয়েছেন ২ লাখ ৭৮ হাজার ৪২৬ জন। আগামী সপ্তাহের মধ্যে বাকিদের টিকা দেওয়া সম্পন্ন হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধিত শিক্ষার্থী মোট ১ লাখ ৭৯ হাজার ২৬১ জন। প্রথম ডোজ সম্পন্ন করেছেন ৭৯ হাজার ৯১৪ জন। দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৬ হাজার ৭২ জন। ৩৪ হাজার জনেরও বেশি শিক্ষক নিবন্ধন করেছেন। এরমধ্যে ৩০ হাজার জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) অধীনে আছে প্রায় সাড়ে তিন লাখ শিক্ষার্থী। এদের বেশিরভাগ কর্মজীবী ও প্রায় সবার বয়স ১৮ বছরের বেশি। বেশিরভাগই নিজস্ব উদ্যোগে নিবন্ধন করে টিকা নিয়েছেন।
বাউবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, ‘বাউবির যারা টিকা নিতে পারেননি তাদের মধ্যে ১০ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীর নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে।
সম্প্রতি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের শিক্ষার্থীদের স্থানীয়ভাবে নিবন্ধন করে টিকা নেওয়ার নির্দেশনা জারি করেছে।