আব্দুল্লাহ ফছিয়ার নড়াইল থেকে:
বিশ্বস্ত দুই সহযোগীকে হারিয়ে শোকে বিহ্বল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা “সংসদে অঝোরে কাঁদলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা নিজেও কাঁদলেন অঝোর ধারায়। সবমিলিয়ে রোববারের সংসদ অধিবেশন ছিলো বিষাদময়। একইদিনে দুইজন সিনিয়র সহকর্মী সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ও ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ মোঃ আব্দুল্লাহকে হারিয়ে স্তম্ভিত হয়ে পড়ে জাতীয় সংসদের কোলাহলমূখর বাজেট অধিবেশন। আনন্দের বাজেট আলোচনা অপ্রত্যাশিতভাবে স্থগিত হয়ে পড়ে বিষাদ, হতাশা আর স্বজন হারানোর বেদনায়। চলমান অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে আগামীর সম্ভাবনা তৈরীর পরিকল্পনা সাজাতে ব্যস্ত থাকা সংসদ সদস্যরা এখন সহকর্মীদের জানাজা আর দাফন কাজে ব্যস্ত।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা তাদের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুব দুঃখজনক। এরপর কয়েক সেকেন্ড চুপ হয়ে যান, এসময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কাঁদতে থাকেন। এরপর কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আসলে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে বলতে। দু’জনকে হারানো খুবই দুঃখজনক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ মরণশীল। একবার জন্মগ্রহণ করেছি, মৃত্যু অবধারিত, সবার জন্য এটা প্রযোজ্য, এটা হবেই। যখন কাজ করে দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি এবং আমাদের আশা ছিল আমরা মুজিববর্ষ উদযাপন করব, দেশের দারিদ্র্যসীমা আমরা কমিয়ে আনবো ঠিক তখন এমন একটা অদৃশ্য শক্তি করোনা ভাইরাস, যা কেউ চোখেও দেখতে পারে না, বুঝতেও পারে না, সারা বিশ্বটাকে স্থবির করে দিল। সারা বিশ্বে যেন কেমন একটা অস্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি করল। আমাদের আওয়ামী লীগের একজন কর্মীও যেখানে মারা গেলে সবাই ছুটে গেছি, জানাজা পড়া, শ্রদ্ধা জানানো, পরিবারের সাথে দেখা করেছি সেখানে এবার এমন একটা অস্বভাবিক পরিবেশ যে আমরা কিছুই করতে পারলাম না। কাউকে দেখা বা তার পরিবারকে সান্তনা দেওয়া বা তাদের সঙ্গে একটু কথা বলার সুযোগটাও কেন যেন পেলাম না, সেটাই সব থেকে কষ্ট। একটা আতঙ্ক, ভয়, ভীতি, মৃত্যু আতঙ্ক যেন সারা বিশ্বকে পেয়ে বসেছে।
এটাই একটা অদ্ভুত ব্যাপার, আমি জানি না, এ ধরনের পরিবেশ আগে কেউ আর কখনো দেখেছে কিনা। এদিকে দুই দিন বিরতির পর স্পিকার ডঃ শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে রোববার সংসদের মুলতবি অধিবেশন শুরু হওয়ার পরই সম্পুরক কার্যসূচি শোক প্রস্তাব সংসদে উত্থাপন করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিমের জীবন বৃত্তান্ত তুলে ধরেন। এসময় ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ মোঃ আব্দুল্লাহর জীবন বৃত্তান্তসহ শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। এরপর মোহাম্মদ নাসিমের জীবন ও কর্মের ওপর আলোচনা হয়। করোনা পরিস্থিতিতে গভীর শোকার্ত পরিবেশে অনুষ্ঠিত এই আলোচনায় অংশ নেন সংসদ নেতা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের, আওয়ামী লীগের মতিয়া চৌধুরী, ডাঃ হাবিবে মিল্লাতা ও মৃণাল কান্তি দাস, ওয়ার্কার্স পার্টির অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ এবং জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ। আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, সদা হাস্যোজ্জল ও বিনয়ী মোহাম্মদ নাসিম ছিলেন প্রাণচাঞ্চল্যে ভরা।
এমপি-মন্ত্রী ও জাতীয় নেতা ক্যাপ্টেন মুনসুর আলীর সন্তান হয়েও তিনি অত্যন্ত সাদামাঠা জীবন-যাপন করতেন। জনগণের আস্থা অর্জন করেছিলেন। আমরা একই দল না করলেও তাকে দেখলে মনে হতো তাঁকে সব কথাই বলা যায়। শত বিপদ ও ঝুঁকির মুখেও তিনি পিছু হটেননি। সকল বাধা উপেক্ষা করে সাহসের সঙ্গে এগিয়ে গেছেন তিনি। সাবেক মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিক কারণে পিতা-পুত্র একসঙ্গে জেলে থাকার ঘটনা মোহাম্মদ নাসিমের ক্ষেত্রে ঘটেছে। বিএনপি-জামায়াত জোটের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রামে সব সময় সামনে ছিলেন। বারবার পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। রাজনীতিতে তিনি যে দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন তা জনগণ অনন্তকাল মনে রাখবেন। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে মোহাম্মদ নাসিমের সাহসী ভূমিকা তুলে ধরে ওয়ার্কার্স পার্টির অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুলাহ বলেন, ১৪ দলের সমন্বয়ক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন।
আমরা তার সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে কখনো ভাবিনি আমরা অন্য দলের। মনে হয়েছে, একই রাজনৈতিক পরিবারের। সবাইকে সহজেই আপন করে নিতেন। জাপা নেতা কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, শুধু সরকারি দলের নেতাকর্মীদের নয়, বিরোধী দলের খোঁজ-খবরও রাখতেন তিনি। সংসদে আরো বেশি সক্রিয় ভূমিকা রাখার পরামর্শ দিতেন। পিতার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ছাত্রজীবন থেকে লড়াই সংগ্রাম শুরু করেছেন।