রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:২৮ অপরাহ্ন

ই-পেপার

সব বাধা অতিক্রম করে দেশ এগিয়ে যাবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রতিনিধির নাম:
আপডেট সময়: বুধবার, ৩ জুন, ২০২০, ৬:১৮ অপরাহ্ণ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার :
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনৈতিক অগ্রগতি স্লথ হলেও সব বাধা অতিক্রম করে দেশ এগিয়ে যাবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যেভাবে অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি করছিল, আমাদের প্রত্যাশা ছিল ২০২০ সালে মুজিব বর্ষ এবং ২০২১ সালে দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের সময় আমরা দারিদ্র্যের মাত্রা হ্রাস করে দেশকে একটি উচ্চ মর্যাদাপূর্ণ স্তরে নিতে সক্ষম হব। কিন্তু করোনার কারণে অগ্রগতির গতি কিছুটা ধীর হয়ে গেছে।
গতকাল মঙ্গলবার গণভবন থেকে দেশে প্রথমবারের মতো ভার্চুয়াল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। করোনা স্থায়ী হবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সকল বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে সক্ষম হব। দেশের মানুষ যাতে কষ্ট না পান সে জন্য সকলকে উপযুক্ত স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখার জন্য নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সব সময় তাদের জন্য চিন্তা করি। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ এর কারণে কেবল বাংলাদেশই নয় গোটা বিশ্বই স্থবির হয়ে গেছে এবং প্রতিটি দেশই এই মারাত্মক ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড খুব সুপরিকল্পিতভাবে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করছিলাম, নিয়মিত বৈঠকের মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রকল্পগুলো অনুমোদন করছিলাম এবং সেগুলো বাস্তবায়ন করছিলাম, ফলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে উন্নতি লাভ করছিল। তবে, কোভিড-১৯ এর কারণে বিশ্বজুড়ে সব কিছু স্থবির হয়ে পড়েছে এবং সর্বত্র একই জিনিস ঘটছে। এসময় নিজেদের এবং নিকটতম প্রিয়জনদের পাশাপাশি প্রতিবেশীদের সুরক্ষার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে স্বাস্থ্য নির্দেশিকা অনুসরণ করার জন্য আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আমরা অন্যকে (কোভিড-১৯) রোগ থেকে বাঁচাতে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করব। দেশে ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক ও অন্যান্য কার্যক্রম খোলার বিষয়ে বলেন সরকার প্রধান বলেন, দেশের সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে সরকার এ পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যাতে সাধারণ মানুষ চলতে পারে এবং তাদের জীবিকা নির্বাহ করতে পারে।
অনুষ্ঠানে দেশের প্রতিটি জেলা শহরে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে জেলা শহরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন রাখার নির্দেশও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সভায় প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে মানুষ মাছের ঘের করার জন্য বাঁধ কেটে লোনা পানি ঢুকায়। যার ফলে বাঁধ টেকসই হয় না। ভেঙে যায়। আলাদা আলাদা বাঁধ না কেটে সবাই মিলে নির্দিষ্ট একটি জায়গায় বাঁধ কাটার কথাও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। মাছের ঘের করতে বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন জায়গায় যাতে স্থানীয়রা বাঁধ কাটতে না পারে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ভার্চুয়াল একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান গণভবন থেকে অংশ নেন। আর অন্য মন্ত্রীরা অংশ নেন রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেল কক্ষ থেকে। করোনাভাইরাস বিস্তার ঠেকাতে আড়াই মাস আগে সবশেষ একনেক বৈঠক হয়েছিল। আড়াই মাস পর গতকাল প্রথম একনেক সভা অনুষ্ঠিত হয় ভার্চুয়াল।
গণভবনে একনেক বৈঠকে অংশ শেষে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এসে সংবাদ সম্মেলন করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এ সময় তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের অন্যতম একটি অগ্রাধিকার ও পছন্দের প্রকল্প হলো প্রাথমিক শিক্ষায় উপবৃত্তি প্রকল্প। প্রকল্পটিতে এতদিন উন্নয়ন বাজেট থেকে টাকা বরাদ্দ দিয়ে আসছে সরকার। নতুন সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে এই প্রকল্পটি উন্নয়ন বাজেট থেকে নয়; রাজস্ব বাজেট থেকে অর্থায়ন করা হবে।
একনেক সভায় ১৬ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট দশটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে চারটি প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ ছুটি চলাকালীন সময়ে জরুরিভিত্তিতে অনুমোদন দিয়েছিলেন। গতকাল সেই চারটি প্রকল্পের ভুতাপেক্ষ অনুমোদন দেওয়া হলো। এছাড়া নতুন করে ছয়টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। দশটি প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট খরচ হবে ১৬ হাজার ২৭৬ কোটি টাকা। যার মধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে যোগান দেওয়া হবে ১৪ হাজার ৪০১ কোটি টাকা। বাকি টাকা আসবে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণ হিসেবে।
করোনাভাইরাস মোকাবিলা সংক্রান্ত দুটি প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে অন্যটি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে নেওয়া প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট খরচ হবে এক হাজার ১২৭ কোটি টাকা। যার মধ্যে বিশ্বব্যাংক ঋণ দেবে ৮৫০ কোটি টাকা। বাকি ২৭৭ কোটি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে যোগান দেওয়া হবে। এই টাকা দিয়ে দেশের প্রতিটি জেলা সদর হাসপাতালে ২০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার করা হবে। এছাড়া ৫ শয্যার ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট করা হবে। এর বাইরে করোনা রোগ সনাক্ত করতে তিনটি আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, আটটি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর এবং তিনটি সমুদ্রবন্দরে ১৬টি মেডিক্যাল সেন্টার স্থাপন করা হবে। এছাড়া দেশেল ৪৯২টি উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ৬৪ জেলা হাসপাতাল এবং ১৭টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ওয়াশ কর্নার স্থাপন করা হবে। যেখানে পুরুষ ও নারীদের জন্য আলাদা ওয়াশ কর্নার থাকবে।
অন্যদিকে, এডিবির অর্থায়নে কভিড ১৯ বিস্তার ঠেকাতে নেওয়া প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট খরচ হবে এক হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। যার মধ্যে এডিবি ঋণ দেবে ৮৫০ কোটি টাকা। বাকি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে যোগান দেওয়া হবে। এই প্রকল্পের আওতায় দেশের ১৭টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আইসোলেশন সেন্টার স্থাপন করা হবে। এছাড়া ২৬টি স্থলবন্দরে মেডিক্যাল সেন্টার স্থাপন করা হবে। কভিড ১৯ মোকাবিলায় চিকিৎসক ও নার্সদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
গতকাল একনেক সভায় দাশের কান্দি পয়ঃশোধানগার প্রকল্পটি সংশোধিত আকারে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি ২০১৫ সালে শুরু হলেও নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পটির কাজ শেষ না হওয়ায় প্রকল্পের খরচও বেড়েছে। মেয়াদ বেড়েছে আরো দুই বছর। ২০১৫ সালে প্রকল্পটি যখন অনুমোদন হয়েছিল তখন খরচ ধরা হয়েছিল তিন হাজার ৩১৭ কোটি টাকা। এখন ব্যয় বেড়ে দাড়িয়েছে তিন হাজার ৭১২ কোটি টাকা। চীনা এক্সিম ব্যাংক এই প্রকল্পে ঋণ দিচ্ছে। এই প্রকল্পের আতওায় রাজধানীর খিলগাঁওয়ে একটি পয়ঃশোধানাগার করার কথা। গুলশান, বনানী বারিধারা, তেজগাও, মগবাজার ইস্কাটন নিকেতন ধানমন্ডি, কলাবাগান এলাকার জন্য কোনো পয়ঃশোধানাগার নেই। ঢাকা ওয়াশা এখন প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২২ সাল পর্যন্ত করেছে। সভায় ৪৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সাতক্ষীরা জেলায় ১,২,৩ পোল্ডার এবং ৬,৭,৮ পোল্ডার নিষ্কাশন এবং ১১৩ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী গ্লোবাল ভ্যাকসিন সামিটে যোগ দিচ্ছেন
যুক্তরাজ্য অনুষ্ঠেয় গ্লোবাল ভ্যাকসিন সামিটে যোগ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে দেশের সরকারের উদ্যোগে আয়োজিত আগামীকাল অনলাইনে এই সামিট অনুষ্ঠিত হবে।
গতকাল এক বার্তায় ঢাকার যুক্তরাজ্য হাইকমিশন লিখেছে, গ্লোবাল ভ্যাকসিন সামিটে যোগ দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাচ্ছি। জনস্বাস্থ্যের জন্য ভ্যাকসিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, এমনকি কোভিড-১৯ মোকাবিলার চেয়েও বেশি। অনলাইনে অনুষ্ঠেয় এই সামিটে বিশ্বের শীর্ষ নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। সামিটে করোনা মোকাবিলায় ভ্যাকসিন নিয়েও আলোচনা প্রাধান্য পাবে।
সামিটে যোগ দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এরই মধ্যেই আমন্ত্রণ জানায় যুক্তরাজ্য। দেশটির ফরেন অফিস জানায়, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন (জিএভিআই-গ্যাভি) তহবিল সংগ্রহের অংশ হিসেবে সারা বিশ্ব একযোগে কাজ করার লক্ষ্যে এই সামিটের আয়োজন করা হয়েছে।
২০২৫ সালের মধ্যে আরো ৩০০ মিলিয়ন শিশুর ভ্যাকসিন দান ও আট মিলিয়ন শিশুর জীবন বাঁচাতে একযোগে কাজ করবে গ্যাভি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর