গলব্লাডার ইংরেজি শব্দ যার অর্থ পিত্তাশয় বা পিত্তথলী। এটি নাশপাতির আকৃতির ফাঁপা অঙ্গ যা যকৃতের ডান খন্ডের নিম্নাংশে অবস্থান করে। এটি দৈর্ঘ্য প্রায় ৭-১০ সে.মি. এবং প্রস্থ ৩ সে.মি.। খাদ্য পরিপাকে ব্যবহারের জন্য একবারে প্রায় ৩০-৫০ মিলিমিটার পিত্তরস ধারন করে রাখে,পিওথলীতে পাথর জমা হওয়াকে পিও পাথরী বলে।এতে নাভি প্রদেশে দারুন শূল বেদনা হয়।আর এটি অতি কষ্টদায়ক ব্যাধি এবংসোরাদোষ হইতে উৎপন্ন।সোরা দোষ হইতে আমাদের পিওকোষ বালুকোণা হইতে আরম্ভ করিয়া বড় প্রস্তরখণ্ড পর্য্যন্ত সঞ্চয় হয় ও সেই সময় মধ্যে মধ্যে,পেটে নাভিমণ্ডলের উপরে,দক্ষিণদিকে অল্পাধিক বেদনা উপস্থিত হয়।কিন্তু যে সময় ঐ সঞ্চিত প্রন্তরখণ্ড পিওবহা নালী পথে বহির্গমনের জন্য আসিতে থাকে,তখন অতি ভয়ানক বেদনা অনুভূত হয় এবংরোগী যন্তণায় অধীর হইয়া উঠে।বর্তমান যুগে পিও পাথরীর প্রকোপ প্রচণ্ড রূপে দেখা দিয়েছে।অস্ত্রোপচারের পর কিছু কিছু রোগী আরোগ্য লাভ করলেও এদের মধ্যে অনেক রোগী পরবর্তীতে ক্যান্সার,জন্ডিস,বি- ভাইরাস ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।পিত্তের কারণে এটির রং গাঢ় সবুজ দেখায়। পিত্তাশয়কে গঠনগতভাবে ফান্ডাস, দেহ ও গ্রীবা এই তিন অংশে বিভক্ত করা হয়।
এটি পিত্তনালীর মাধ্যমে লিভার ও ডিওডেনামের সাথে যুক্ত পিত্তপাথুরী বা পিত্তাশয়ে পাথর হল পিত্তাশয়ের বা পিত্তথলীর একটি রোগ। গল্ডষ্টোন ইংরেজি শব্দ যার অর্থ পিত্তপাথরী বা পিত্তাশয় পাথর। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটি কোলিলিথিয়াসিস নামে পরিচিত। পিত্তথলীর মধ্যে থাকে পিত্তরস বা বাইল এই বাইলকে তৈরী করে লিভার। পিত্তথলী বাইল সল্ট, ইলেক্ট্রলাইট বিলিরুবিন, কোলেষ্টেরল এবং অন্যান্য চর্বি সঞ্চয় করে রাখে। পিত্তরস বিশেষত বিলিরুবিনের মাধ্যমে ক্ষুদ্রান্ত্রে চর্বি হজম এবং বর্জ্য পদার্থ সরিয়ে দিতে সাহায্য করে। আমাদের খাবার খাওয়ার পূর্বে পিত্তথলী বাইল বা পিত্তরসে পূর্ন থাকে। খাবার খাওয়া শেষ হলে গলব্লাডার বা পিত্তথলিটি চুপসে যায় অর্থাৎ পিত্তরস খাবারের সাথে মিশে খাবার হজমে সাহায্য করে। এই পিত্তরস সঠিকভাবে কাজ করতে না পারলে খাবার হজমে সমস্যা হয়। আর পিত্তশয়ে কোলষ্টেরল, বাইল সল্ট ও বিলিরুবিনের পরিমান বেড়ে গেলে তৈরি হয় পিত্তথলীতে পাথর। অর্থাৎ পিত্তথলীতে পাথর হলে-পিত্তাশয়ে কোলেষ্টেরল, বাইল সল্ট ও বিলিরুবিনের সংমিশ্রনে গঠিত শক্ত সঞ্চিত পদার্থ। উন্নত দেশে প্রায় ১০-২০% প্রাপ্ত বয়স্ক লোক এই রোগে আক্রান্ত। উন্নত বিশ্বে ৯০% পাথরই কোলেষ্টেরল দিয়ে তৈরি বাদ বাকি পিগমেন্ট পাথর। তবে অনেক সময় মিক্স পাথরও পাওয়া যায়। পিগমেন্ট পাথর এশিয়াতে বেশি পাওয়া যায়।
★ কারণঃ শারীররিক বিধিশুদ্ধ নিয়মানুসারে পিওকোষ হতে সঞ্চিত পিওরস পিওনালী দিয়ে ক্রমে ক্রমে ক্ষুদ্রান্তের প্রথমাংশ বা ডিউডেনামের মধ্যে প্রবাহিত হয়।আহারাদির দোষে অথবা পিওকোষের বা পিওনালীর প্রদাহজনিত কারণে এই পিওপ্রবাহ বিঘ্নিত হতে পারে,ইহার ফলে পিওরস জমাট বেঁধে যায় এবং ধীরে ধীরে পিওপাথরী দেখা দেয়।যদি পিওপাথরী খুব ছোট হয় বা বালু কণার মত থাকে তা অনেক সময় আপনা থেকেই বেরিয়ে যায় এবং কখন বেরিয়ে যায় তা ঠিক বুঝা যায় না।তবে পিওপাথরী আকারে বড় হলে বেরিয়ে যেতে পারে না তখন বেদনার সৃষ্টি হয় এবংরোগী কষ্ট পায়।পিওকোষ অঞ্চলে মাঝে মাঝে ব্যথা এই লক্ষণটি দেখে অনেক সময় রোগটি ধরা যায়।
★ লক্ষণঃ ১) প্রচণ্ড বেদনা ডান কুক্ষিদেশে হতে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে বিশেষ করে ডান ঙ্কন্ধ ও পিঠে ছড়িয়ে পড়ে।প্রচণ্ড বেদনায় রোগী ছটফট করে এবং অস্থির হয়ে পড়ে। ২)অনেক সময় বেদনার সঙ্গে বমি,পিও বমি হয়ে থাকে। ৩) বেদনার সংগে ঠাণ্ডা ঘাম দেখা দেয়,নাড়ী দুর্বল হয়,ছটফট ভাব এবংহিমাঙ্গের ভাব দেখা দেয়,শ্বাস প্রশ্বাসে কষ্ট হয়। ৪) অনেক ক্ষেএে রোগীর জণ্ডিস রোগ এবং দেহ হলুদ বর্ণ হয়ে যায় ৫) পিওকোষ হতে যদি পাথর না বের হয়ে যায় তবে শেষ পর্যন্ত হোমিওচিকিৎসা না নিয়ে অপারেশন করে বের করার ব্যবস্থ্য করতে হয় নতুবা রোগী ক্রমাগত কষ্ট ভোগ করতে থাকে।
★ হোমিওপ্রতিবিধান,রোগ নয় রোগীকে চিকিৎসা করা হয়,এইজন্য একজন অভিজ্ঞ হোমিওচিকিৎসকে রোগীর ধাতুগত লক্ষণ মিলিয়ে চিকিৎসা দিতে পারলে তাহলে পিও- পাথরী ছোট হক আর বড় তাহলে আল্লাহর রহমতে হোমিওতে সম্ভব।
★ হোমিওচিকিৎসা,প্রাথমিক ভাবে যেই সব ঔষধ লক্ষণের উপর আসতে পারে, কোলেষ্টেরিনাম,কার্ডুয়াস মেরিয়েনাস,ক্যালকেরিয়া কার্ব,আর্ণিকা,চেলিডোনিয়ান,সিওন্থাস, চায়না,ডিজিটেলিস,হাইড্রাসটিস,ডায়োঙ্কোরিয়া সহ আরো অনেক মেডিসিন লক্ষণের উপর আসতে পারে,তাই ঔষধ চিকিৎস ছাড়া নিজে নিজে ব্যবহার করলে রোগ আরো জটিল আকারে পৌঁছতে পারে।
লেখক,
ডাঃমুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
সম্পাদক. দৈনিক স্বাস্থ্য তথ্য
স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা, হিউম্যান রাইটস রিভিউ সোসাইটি
কো-চেয়ারম্যান, হোমিওবিজ্ঞান গবেষণা ওপ্রশিক্ষণ কেন্দ্র
মোবাইল নং01822869389