শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ১২:০৩ অপরাহ্ন

ই-পেপার

মহান ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদান

নিজস্ব প্রতিনিধি:
আপডেট সময়: রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১০:৩৭ পূর্বাহ্ণ

১৯৫২ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে জীবন দিয়েছিলেন সালাম, রফিক, জব্বার ও বরকতসহ আরো অনেক ভাষা সংগ্রামী। পরবর্তীকালে একুশে ফেব্রুয়ারি দিনটিও পেয়েছে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের’ অনন্য মর্যাদা। জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত অনুসারে ২০০০ সাল থেকে দিনটিকে বিশ্বের সব দেশেই ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। বাংলাদেশের ভাষা শহীদদের সংগ্রাম ও অবদানের কথা স্মরণ করে বিশ্ববাসী। এর কারণ, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলে প্রায় ছয় হাজার ভাষা থাকলেও মাতৃভাষার স্বীকৃতি আদায় ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা যতটা সংগ্রাম করেছে ততটা সংগ্রাম আর দেখা যায় না। সে কারণে একুশের চেতনায় এবং এর অন্তর্গত তাৎপর্যে বিশ্বের সব দেশের মানুষই এখন আন্দোলিত হয়, উজ্জীবিত হয়।

 

তারাও নিজেদের মাতৃভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ও রক্ষার তাগিদ ও দায়িত্ব বোধ করে। এখানেই ১৯৫২-র ভাষা আন্দোলন এবং একুশে ফেব্রুয়ারির বিশেষ তাৎপর্য ও অতুলনীয় সফলতা। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র সৃষ্টির পর পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী সচেতনভাবে বাঙালির কাছ থেকে ভাষার অধিকার হরণ করতে চেয়েছিল। তারা চেয়েছিল সংখ্যালঘু জনগণের ভাষা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দিতে। কিন্তু তাদের সেই অপতৎপরতার বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিলেন বাঙালির ত্রাণকর্তা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আজীবন মাতৃভাষাপ্রেমী এই মহান নেতা ১৯৪৭ সালে ভাষা আন্দোলনের সূচনা পর্বে, ১৯৪৮ সালে রাজপথে আন্দোলন ও কারাবরণ, পরে আইনসভার সদস্য হিসেবে রাষ্ট্রভাষার সংগ্রাম ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় অতুলনীয় ভূমিকা রাখেন। এক কথায় রাষ্ট্রভাষা বাংলার আন্দোলন ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর সক্রিয় অংশগ্রহণ ইতিহাসের অনন্য দৃষ্টান্ত।

 

১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল হন। এ সময় নবগঠিত দুটি প্রদেশের মধ্যে পূর্ববাংলার প্রতি তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী ভাষাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক আচরণ শুরু করে। ফলে শুরু হয় রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জন্মের পরপর কলকাতার সিরাজউদ্দৌলাহ হোটেলে পূর্ব পাকিস্তানের পরবর্তী কর্তব্য নির্ধারণে সমবেত হয়েছিলেন কিছুসংখ্যক রাজনৈতিক কর্মী। সেখানে পাকিস্তানে একটি অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক আন্দোলন ও সংগঠন করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সে প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৪৭ সালের ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তানের কর্মী সম্মেলনে গণতান্ত্রিক যুবলীগ গঠিত হয়। ওই সম্মেলনে ভাষাবিষয়ক কিছু প্রস্তাব গৃহীত হয়। এ প্রসঙ্গে গাজীউল হক ‘ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, ‘সম্মেলনের কমিটিতে গৃহীত প্রস্তাবগুলো পাঠ করেছিলেন সেদিনের ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান।’ প্রস্তাবগুলো ছিল, ‘বাংলা ভাষাকে পূর্ব পাকিস্তানের লিখার বাহন ও আইন আদালতের ভাষা করা হউক। সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কী হইবে তৎসম্পর্কে আলাপ-আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার জনসাধারণের উপর ছাড়িয়া দেওয়া হউক এবং জনগণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলিয়া গৃহীত হউক।’ ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে সমকালীন রাজনীতিবিদসহ ১৪ জন ভাষা বীর সর্বপ্রথম ভাষা আন্দোলনসহ অন্যান্য দাবিসংবলিত ২১ দফা দাবি নিয়ে একটি ইশতেহার প্রণয়ন করেছিলেন। ওই ইশতেহারে ২১ দফা দাবির মধ্যে দ্বিতীয় দাবিটি ছিল রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই। ঐতিহাসিক এই ইশতেহারটি একটি ছোট পুস্তিকা আকারে প্রকাশিত হয়েছিল যার নাম ‘রাষ্ট্রভাষা-২১ দফা ইশতেহার-ঐতিহাসিক দলিল।’ ওই পুস্তিকাটি ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক প্রামাণ্য দলিল হিসেবে স্বীকৃত। এই ইশতেহার প্রণয়নে শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান ছিল অনস্বীকার্য এবং তিনি ছিলেন অন্যতম স্বাক্ষরদাতা।

 

বায়ান্নর ভাষা-আন্দোলনের সময় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কারাগারে বন্দি ছিলেন। ‘বঙ্গবন্ধু ১৯৫০ সালে গ্রেফতার হন। বন্দি থাকা অবস্থায়ও ছাত্রদের সাথে সবসময় তাঁর যোগাযোগ ছিল। জেলে থেকেই তিনি তাঁর অনুসারী ছাত্র নেতাদের গোপনে দিক-নির্দেশনা দিতেন। তিনি ‘জেল থেকেই রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির সাথে যোগাযোগ রাখতেন এবং তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে নির্দেশনা দিতেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় আমি পুরান ঢাকার কে এল জুবলি স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। তখন আমাদের ক্লাশ শিক্ষক ছিলেন কামরুজ্জামান স্যার। তিনি পরবর্তীতে যুক্তফ্রন্ট থেকে মনোনয়ন নিয়ে এমপি হয়েছিলেন। হয়েছিলেন কে এল জুবলি স্কুলের প্রিন্সিপাল। পরবর্তীতে কে এল জুবলি স্কুল কলেজে রূপান্তরিত হলে তিনি কলেজেরও প্রিন্সিপাল হন। তিনি সারাদেশের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ছিলেন। কামরুজ্জামান স্যার ভাষা আন্দোলনের ব্যাপারে আমাদের উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। আমি ক্লাশ ক্যাপ্টেন হওয়ায় স্যারের সঙ্গে আমার সখ্য ছিলো। স্যারের নেতৃত্বে আমরা একাধিকবার মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলাম। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতেও আমরা মিছিল সহকারের ভাষা আন্দোলনের জনসভায় যোগ দিয়েছিলাম। লেখক: আর কে চৌধুরী মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাবিদ ও ভাষা সংগ্রামী, সাবেক চেয়ারম্যান রাজউক, প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আর কে চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, সদস্য এফবিসিসিআই এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে ২ ও ৩ নং সেক্টরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা।

 

CBALO/আপন ইসলাম


আপনার মতামত লিখুন :

৩ responses to “মহান ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদান”

  1. erotik says:

    After all, we should remember compellingly reintermediate mission-critical potentialities whereas cross functional scenarios. Phosfluorescently re-engineer distributed processes without standardized supply chains. Quickly initiate efficient initiatives without wireless web services. Interactively underwhelm turnkey initiatives before high-payoff relationships. Holisticly restore superior interfaces before flexible technology. Olva Aldridge Isabeau

  2. escort bayan says:

    You have brought up a very wonderful points , appreciate it for the post. Quintana Jaime Nanci

  3. SEO pada dasarnya hampir gak ada yang berubah mas, dari dulu sampai sekarang SEO ya begitu-begitu aja. Carmon Bailie Zaria

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর