কামরুজ্জামান কানু,জামালপুর:
জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় মাথাপিছু মাত্র ২০০ টাকা দৈনিক মজুরিতে কর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) প্রকল্পের শ্রমিকদের কাজ করানো হচ্ছে। কম মজুরি হওয়ায় নাখোশ শ্রমিকরা। মজুরি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থ বছরে প্রথম পর্যায়ে ৩ হাজার ৮০২ জন সুবিধাভোগী শ্রমিক পাবেন ৩ কোটি ৪ লাখ ১৬ হাজার টাকা। গত ৩১ অক্টোবর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে একযোগে অতিদরিদ্রদের জন্য প্রকল্পের কাজ শুরু করার সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। এ প্রকল্পের কাজ চলবে ৪০ দিন।
অতিদরিদ্রদের অর্থনৈতিক সুরক্ষা ও গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারের গৃহিত ইজিপিপি প্রকল্প যথাযথ বাস্তবায়ন হলে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা ভাঙনকবলীত দারিদ্র সীমার নিচে থাকা এ উপজেলায় মাইলফলক হতে পারে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে ৭০টি প্রকল্প গৃহিত হয়েছে। এসব প্রকল্পের ৩ হাজার ৮০২ জন সুবিধাভোগী অতিদরিদ্র শ্রমিকের বিপরীতে ৩ কোটি ৪ লাখ ১৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে কুলকান্দি ইউনিয়নে ৪টি প্রকল্পে ২৩৯ জন শ্রমিকের বিপরীতে ১৯ লাখ ১২ হাজার টাকা। বেলগাছা ইউনিয়নে ৪টি প্রকল্পে ৩শত ৪২ শ্রমিকের বিপরীতে ২৭ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। চিনাডুলী ইউনিয়নে ৫টি প্রকল্পে ৩শত ২৪ শ্রমিকের বিপরীতে ২৫ লাখ ৯২ হাজার টাকা। সোপধরী ইউনিয়নে ৩টি প্রকল্পে ২শত ৫৭ শ্রমিকের বিপরীতে ২০ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। নোয়ারপাড়া ইউনিয়নে ৮টি প্রকল্পে ৩শত ৭৫ শ্রমিকের বিপরীতে ৩০ লাখ টাকা। ইসলামপুর সদর ইউনিয়নে ৬টি প্রকল্পে ২শত ১৩ শ্রমিকের বিপরীতে ১৭ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। পাথর্শী ইউনিয়নে ৯টি প্রকল্পে ৩শত ৯৮ শ্রমিকের বিপরীতে ৩২ লাখ ২৪ হাজার টাকা। পলবান্ধা ইউনিয়নে ৪টি প্রকল্পে ১শত ৮৩ শ্রমিকের বিপরীতে ১৫ লাখ ১৬ হাজার টাকা। গোয়ালেরচর ইউনিয়নে ৭টি প্রকল্পে ৩শত ৮৭জন শ্রমিকের বিপরীতে ৩১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। গাইবান্ধা ইউনিয়নে ৮টি প্রকল্পে ৪শত ৩৫ শ্রমিকের বিপরীতে ৩৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। চরপুঁটিমারী ইউনিয়নে ৮টি প্রকল্পে ৪শত ১৩জন শ্রমিকের বিপরীতে ৩৩লাখ ৪৪ হাজার টাকা। চরগোয়ালিনী ইউনিয়নে ৪টি প্রকল্পে ২শত ৩৫ শ্রমিকের বিপরীতে ১৮লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শ্রমিক বলেন, কাজের তুলনায় মজুরি অনেক কম। আমরা ৮ ঘন্টা কাজ করে মাত্র ২০০ টাকা পাই। বাইরে এই ৮ ঘন্টা কাজ করলে দ্বিগুণ মজুরি পাওয়া যাবে। আমরা অবিলম্বে মজুরি বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছি।
গাইবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাকছুদুর রহমান আনছারী জানান, বিধি মোতাবেক প্রকল্পের কাজ চলছে। তবে ২০০ টাকায় দৈনিক হাজিরা মজুরিতে কাজের প্রতি শ্রমিকদের অনাগ্রহ দেখা যায়।
চরপুঁটিমারী ইউপি চেয়ারম্যান সামছুজ্জামান সরুজ মাস্টার জানান, মজুরি নিয়ে প্রতিদিনই শ্রমিকরা অভিযোগ করেন।
সোপধরী ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন জানান, মাত্র ২শত টাকায় মজুরিতে শ্রমিকরা কাজ করতে চায় না।
পাথর্শী ইউপি চেয়ারম্যান ইফতেখার আলম বাবুল জানান, অন্য কাজে শ্রমিকদের মজুরি বেশী থাকায় ইজিপিপি প্রকল্পে মাত্র ২শত টাকায় কাজ করানো সমস্যায় পড়তে হয়।
বেলগাছা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক জানান, অন্যান্য কাজে দৈনিক যেখানে ৩শত থেকে ৫শত টাকা মজুরি। সেখানে ইজিপিপি প্রকল্পে মাত্র ২শত টাকায় কাজ করানো কষ্টসাধ্য।
চিনাডুলি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম জানান, কম মজুরি হওয়ায় প্রতিনিয়ত শ্রমিকদের কথা শুনতে হয়।
কুলকান্দি ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ওবায়দুল হক বাবু জানান, শ্রমিকরা প্রতিনিয়ত তাদের মজুরি বৃদ্ধির দাবি করে আসছেন।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান টিটু জানান, প্রকল্পের কাজ চলছে। তবে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের। সে কারণেই আমরা মজুরি বৃদ্ধি করতে পারি না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস. এম. মাজহারুল ইসলাম জানান, বিধি অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ হবে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে একদিকে অতিদরিদ্রদের অর্থনৈতিক সুরক্ষা হবে। অন্যদিকে, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে হবে। তবে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টি আমাদের চিন্তায় আছে।
CBALO/আপন ইসলাম