প্রদীপ কর্মকার:
বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বিল চলনবিল। এই বিলের পানিতে এক সময় চাষবাসও যত্ন ছাড়াই এক ধরনের উদ্ভিদের জন্ম হত।পানির উপর ভাসমান অবস্থায় থাকে ,ওজন একে বারে হালকা নাম তার “ভাত শোলা”। ওই শোলা এখন বিলুপ্তির পথে। এই শোলা দিয়ে এক ধরনের ফুল ,মালা, সাজ সজ্জা,খেলনা পুতুল, পশুপাখি ,নৌকা ইত্যাদি তৈরী করা হত। এ সব তৈরীতে এক ধরনের পেশাজীবী মানুষ যুগযুগ ধরে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে যারা ,তারাই “মালাকার” সম্প্রদায় নামে পরিচিত।
চলনবিলাঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামে মালাকার সম্প্রদায়ের লোকজন বাস করে। নারী পুরুষ সকলে মিলে শোলার কাজ করেন। তারা নিজেরা জানেন না কত কাল ধরে তাদের পুর্ব পুরুষেরা এই পেশায় নিয়োজিত। শোলা বিভিন্ন ধরনের হয়। তবে সব শোলায় ফুল তোলা যায় না। কাজ করার জন্য সব চেয়ে উপযোগী “ভাত শোলা”। ভাত শোলার অন্য নাম ফুল শোলা বা পাতি শোলা। ভাত শোলা দিয়েই মুলত মালাকাররা তাদের ফুল ,মালা,সাজসজ্জা খেলনা,পশুপাখি তৈরী করেন । এটা নরম বেশী সাদা তাই যেমন কাজ করার উপযোগী, তেমনী দেখতে সুন্দর। ধান ক্ষেতে সাধারনত ভাত শোলা জন্মায়।প্রাকৃতিক ভাবে এমনিতেই হয়। বৈশাখের প্রথমে গাছ জন্মে । যত পানি বাড়ে, তত গাছ বাড়ে। মালাকার সম্প্রদায় নিজেরাই বিল থেকে ভাত শোলা সংগ্রহ করেন। শোলা সংগ্রহের পর রোদে শুকিয়ে আটিবেধে ঘরে তুলে রাখতে হয়। ওই শোলা দিয়ে সারা বছর কাজ করতে হয়। শুধু এ কাজ করে সংসার চালানো কষ্ঠ সাধ্য হয়ে পড়ার কারনে মেয়েরা সংসারের সব কাজের পাশা পাশি শোলার কাজ করে থাকেন। শোলার জিনিষ তৈরীতে সাধারনত সুতা, বিভিন্ন রং, বাশ প্রভৃতি উপকরনের দরকার হয়।
তাড়াশ সদরের জগদীস মালাকার বলেন, বিভিন্ন ধরনের ফুল ,বিয়ের মুকুট, খেলনা পাখা, মুখোশ, পুতুল, ঘোড়া, হিন্দুদের বিয়ের টোপর,ঘটের ফুল,ফুলের ঝাড়,গলার মালা, সহ বিভিন্ন আবরন তৈরী হয় ভাত শোলা দিয়ে। মুলত বিভিন্ন পুজা ও মেলাতে ওই পণ্যগুলো বিক্রি হয়ে থাকে। এখন চলনবিলে আর আগের মত ভাতশোলা পাওয়া যায় না।
বর্ষার সময় মাইলের পর মাইল পারি দিয়ে সামান্য কিছু ভাত শোলা সংগ্রহ করে রাখা হয়। ওই দিয়ে সারা বছর শুধু পুজা পার্বনের উপকরন গুলো তৈরী করে বিক্রি করা হয়। যা শুধু আমার মা ও পরিবারের মহিলারা টিকিয়ে রেখেছে। ওই আয় দিয়ে সংসার চালানো সম্ভব নয় বলে আমরা অন্য পেশার সাথে সম্পৃক্ত হয়েছি। তিনি আর ও বলেন, সরকারী ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এই পেশা ধরে রাখা সম্ভব না।
তাড়াশ অর্নাস কলেজের উদ্ভিদ বিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান চন্দ্র নারায়ন ভৌমিক বলেন, শোলা/ ভাত শোলা/ ফুল শোলার বৈঞ্জানিক নাম aeschynomene aspera এটি একটি জলজ উদ্ভিদ । বিলের বদ্ধ পানিতে এদের জন্মাতে দেখা যায়। চলনবিল এলাকায় এক সময় প্রচুর শোলা জন্মাত। কিন্তু প্রাকৃতিক ও মানব সৃষ্ঠ নানা কারনে এই উদ্ভিদটি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
CBALO/আপন ইসলাম