কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরির অবৈধ চুল্লির ভয়াবহ দৌরাত্ম্যে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে যশোরের অভয়নগর উপজেলা। দিনের পর দিন বিষাক্ত ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে বাতাস, উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল, আর শ্বাসকষ্টসহ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এলাকার মানুষ। অথচ সব জেনেও নীরব ভূমিকা নিয়ে প্রশাসনের দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সচেতন মহল। সরেজমিনে জানা গেছে, অভয়নগর উপজেলার সিদ্দিপাশা ইউনিয়নের আমতলা ও সোনাতলা গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরির দুই-শতাধিক অবৈধ চুল্লি সক্রিয় রয়েছে। এসব চুল্লিতে প্রতিদিন হাজার হাজার মণ কয়লা উৎপাদন করা হচ্ছে, যার মূল কাঁচামাল হিসেবে নির্বিচারে কাটা হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। চুল্লি থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ায় আশপাশের এলাকা সবসময় ধোঁয়ার চাদরে ঢাকা থাকে। এতে করে শিশু, বৃদ্ধ ও নারীদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, চোখের জ্বালা, ত্বকের রোগসহ বিভিন্ন জটিলতা বেড়ে চলেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, দিনে দিনে এই এলাকায় বসবাস করা দায় হয়ে পড়ছে। উল্লেখযোগ্য যে, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ সালে উপজেলা প্রশাসন ও যশোর পরিবেশ অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ১৪–১৬ জনের একটি সংঘবদ্ধ চক্রের গড়ে তোলা ১১৩টি অবৈধ চুল্লি ধ্বংস করা হয়েছিল। কিন্তু মাত্র এক মাসের মধ্যেই অজ্ঞাত ক্ষমতাবলে পুনরায় চুল্লি স্থাপন করে আগের মতোই অবৈধ কার্যক্রম চালু করা হয়। দীর্ঘ দুই বছর পার হলেও ওই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে আর কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এদের ক্ষমতার উৎস কোথায়? কারা তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে? তথ্য অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, রাজনৈতিক ছত্রছায়া, কিছু অসাধু সাংবাদিক এবং প্রশাসনের একটি অসাধু অংশের মদদেই এই অবৈধ সিন্ডিকেট টিকে আছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চুল্লি মালিক স্বীকার করেছেন,ঘাটে ঘাটে টাকা দিয়েই ব্যবসা চালাতে হয়। এমনকি একজন জানান, একজন সিনিয়র সাংবাদিককে মাসে ৪০ হাজার টাকা নিয়মিত দেওয়া হয় যাতে কোনো ঝামেলা না হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোনাতলা গ্রামের জিয়া মোল্যা, ছোট্ট মোল্যা, শহিদ মোল্যা, হারুন মোল্যা, রফিক মোল্যা, তৌকির মোল্যা, কবীর শেখ, হাবিব হাওলাদার, তসলিম মিয়া, মনির শেখ, কামরুল ফারাজী এবং ধূলগ্রামের হরমুজ সর্দার, রকশেদ সর্দার, ফারুক হাওলাদারসহ আরও অনেকে দুই-শতাধিক চুল্লি পরিচালনা করছেন। ভয়ে স্থানীয়রা তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতেও সাহস পান না। অবৈধ চুল্লি বন্ধের দাবিতে এলাকাবাসী একাধিকবার মানববন্ধন ও বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করলেও কোনো কার্যকর ফল মেলেনি। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আইনের প্রতি আস্থা ভেঙে পড়েছে। এ বিষয়ে যশোর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আতাউর রহমান বলেন, চুল্লিগুলোর বিষয়ে আমরা অবগত। দ্রুত সময়ের মধ্যে অবৈধ চুল্লি ধ্বংসে অভিযান চালানো হবে। অন্যদিকে অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালাউদ্দিন দিপু জানান, খুলনা পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। খুব শিগগিরই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিবেশবাদী ও স্থানীয় সচেতন মহল মনে করছেন,অবিলম্বে সব অবৈধ চুল্লি স্থায়ীভাবে ধ্বংস সিন্ডিকেট ও ইন্ধনদাতাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ নিয়মিত নজরদারি ও শাস্তির দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা করা তা না হলে এই অঞ্চলের পরিবেশ ও মানুষের জীবন রক্ষা করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।