শিশু শিক্ষার্থীদের পরিক্ষা কক্ষে যেতে না দেয়ায় শিক্ষকের মাথা ফাটালেন যুবদল নেতা ও তার সাথে থাকা নেতাকর্মীরা। ঘটনাটি ঘটেছে পাবনা ফরিদপুর উপজেলার বনওয়ারীনগর মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। আহত ঐ শিক্ষকের নাম রাজীব বিশ্বাস। তার মাথায় ছয়টি সেলাই দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে স্কুলের সামনেই এই ঘটনা ঘটে। রাজীব ঐ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত।
খোজ নিয়ে জানা যায় শিক্ষদের প্রতি নির্দেশনা থাকার পরেও পরিক্ষা দিতে আসা শিশু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের রীতিমতো অপমান করে তাড়িয়ে দিচ্ছিলেন সহকারী শিক্ষকেরা। এর আগে পরিক্ষা পরিস্থিতি দেখে শিশু শিক্ষার্থীরা দিশেহারা হয়ে পড়ে। বিদ্যালয়ের গেটেই শিক্ষকরা জানিয়ে দেন আজ ক্লাস বা পরীক্ষা কিছুই হবে না, ফিরে যান বাড়ি। বিভ্রান্ত ও ভীত শিক্ষার্থীদের কাঁদো কাঁদো অবস্থায় শেষে বাধ্য হয়ে অভিভাবকদের নিয়ে ঘরে ফিরতে হয়।
এরপর স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়। প্রধান শিক্ষক আব্দুর রবের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দ্রুত হস্তক্ষেপে শিক্ষার্থীদের আবার স্কুলে ডেকে এনে দায়সারা পরিক্ষা নেয়া হয়।
এরপরে বিষয়টি জানতে পেরে উপজেলার কয়েকশত শিক্ষক সেখানে উপস্থিত হয়। তাদের থামাতে সংশ্লিষ্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষক স্থানীয় বিএনপি নেতাদের ফোন করে জানান। পরে উপজেলা যুবদলের সাধারন সম্পাদক নয়ন, জবা ও বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী সেখানে শিক্ষকদের উপর চড়াও হন। এসময় তারা সহকারী শিক্ষক রাজীব বিশ্বাসের মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করে মারাত্মক জখম করে।
আহত শিক্ষক রাজীব জানান, চলমান শাটডাউনের সকল পরিক্ষা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত ছিলো। সেই সিদ্ধান্ত না মেনে প্রধান শিক্ষক পরিক্ষা নিচ্ছিলো আমরা সেখানে উপস্থিত হলে তিনি সন্ত্রাসী ডেকে এনে আমাদের মারোধোর করেন। আমার মাথায় ছয়টি সেলাই দেয়া হয়েছে। অন্য শিক্ষরা না থাকলে আমাকে মেরে ফেলতো। সন্ত্রাসীদের চেনেন কি না এমন প্রশ্নে তিনি যুবদল নেতা নয়ন ও জবাকে চিনেছেন বলে জানান।
ফরিদপুর উপজেলা যুবদলের সাধারন সম্পাদক নয়ন বলেন, আমার জানতে পারি সহকারী শিক্ষকেরা শিশু শিক্ষার্থীদের রুমে আটকে রেখেছে। বিষয়টি দেখতে গেলে সহকারী শিক্ষকেরা আমাদের উপর চড়াও হন এতে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থতির সৃষ্টি হয়।
ফরিদপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম, বলেন চলমান পরিস্থতি নিয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে সহকারী শিক্ষকদের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে পারবেন না বলে জানান।
ঘটনায় ফরিদপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাকিউল আযম বলেন, ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে যাওয়া হয়েছিলো। ঘটনায় এখনও কোন অভিযোগ পাই নাই।
উলেখ্যে চার দফা দাবিতে সারাদেশের সরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করায় সোমবার বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। কিন্তু এই কর্মসূচির করনে শিশুশিক্ষার্থীদের সঙ্গে এমন অমানবিক আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয় বলে ক্ষোভ জানিয়েছেন অভিভাবকরা।