যশোরের অভয়নগরে এক প্রকার অদৃশ্য জুয়া চলছে মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে। পৌর এলাকায় প্রায় ২৫ বছর ধরে নেই কোনো কসাইখানা বা আধুনিক স্লটার হাউজ। তবুও পৌরসভা প্রতিদিন মাংস বিক্রেতাদের কাছ থেকে নিয়মিত কর আদায় করে। বিনিময়ে বিক্রেতারা পাচ্ছেন এক ধরনের ‘অদৃশ্য ছাড়পত্র’, যা ব্যবহার করে তারা জবাইয়ের নিয়মকানুন উপেক্ষা করতে পারছেন নির্দ্বিধায়। ফলে প্রশ্ন উঠছে মাংসের নামে অভয়নগরের মানুষ আসলে কী খাচ্ছেন?
অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার অধিকাংশ মাংস ব্যবসায়ী পশু জবাইয়ের ন্যূনতম নিয়মও মানেন না। কোনো তদারকি নেই, স্বাস্থ্য পরীক্ষা নেই, মান যাচাই নেই। অসাধু বিক্রেতারা অবাধে গর্ভবতী গরু, অসুস্থ গরু এমনকি কখনো মরা গরুর মাংস পর্যন্ত বাজারে তুলছেন। সবচেয়ে বেশি অনিয়ম হয় ভাঙ্গাগেট বাজার ও নওয়াপাড়া বড় বাজার এলাকায়। এক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাংস বিক্রেতা হতাশার সুরে বলেন, আগে নদীর ধারে মরা গরু পড়লে শকুন খেত। এখন আর দেখি না। মনে হয় গরু আর মরে না… আর যদি মরে, তাহলে যায় কোথায়?
পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, নওয়াপাড়ার ৯টি ওয়ার্ডে অন্তত ৩০-৩৫টি মাংসের দোকান রয়েছে। গরুর মাংস বিক্রেতাদের প্রতিদিন ৫০ টাকা, ছাগলের জন্য ৩০ টাকা করে কর দিতে হয়। রসিদ দেয় পৌরসভার ‘কসাইখানা পরিদর্শক’ যার অস্তিত্ব কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ। টাকা দিতে হয় নিয়মিত, কিন্তু কসাইখানার কোনো সুবিধা নেই। এই সুযোগে অসুস্থ গরুর মাংস দেদারসে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতা জসিম হোসেন বলেন, নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় যার যার মতো পশু জবাই করছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয় না। ক্রেতারা কী কিনছে, কেউ বলতে পারে না। পৌর প্রশাসনের সদিচ্ছা আর কিছু অসাধু বিক্রেতার কারণে আজও কসাইখানা হয়নি। নওয়াপাড়ার শামিম নামের এক ক্রেতা বললেন, বিশ্বাসের ওপর ভর করেই কিনি। অন্ধের মতো মাংস খাচ্ছি। আসলে কী খাচ্ছি জানি না।
আরেক ক্রেতা সালাউদ্দিন বলেন, এঁড়ে গরুর নামে প্রায়ই বকনার মাংস দেয়। বুঝার উপায় নেই।
অভয়নগর উপজেলা পশু কর্মকর্তা আবুজার রহমান বলেন, আমরা নিয়মিত মনিটরিং করি। পশু জবাইয়ের আগে পরীক্ষা করা হয়।
তবে বাজারের বাস্তব চিত্র তার দাবি সমর্থন করে না। তিনি আরও জানান, অনিয়ম প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সচেতন নাগরিকরা বলছেন
একদিকে পৌরসভা কর নিচ্ছে, অন্যদিকে নেই স্লটার হাউজ, নেই তদারকি। ফলে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকিতে।
অবিলম্বে আধুনিক কসাইখানা স্থাপন, নিয়মিত মনিটরিং এবং অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।