বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৫ অপরাহ্ন

ই-পেপার

চীন থেকে জিটুজি ভিত্তিতে সার আমদানির নামে প্রায় ২৪ কোটি টাকা লুটপাট

মোঃ কামাল হোসেন, অভয়নগর(যশোর):
আপডেট সময়: বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৫, ১১:৪৪ অপরাহ্ণ

চীনের সাথে ২০২৪ সালে বিএডিসি’র স্বাক্ষরিত চুক্তিতে ২টি উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ থাকলেও, ২০২৫ সালে কৃষি উপদেষ্টার স্বাক্ষরে এই চুক্তি হয়েছে। স্বাক্ষরিত চুক্তিতে চীনের সমস্ত উৎপাদনকারি প্রতিষ্টানের নাম উল্লেখ রয়েছে। এতে করে নিম্ন মান সম্পন্ন ডিএপি সার আমদানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং গ্রহণ না করে কৃষি মন্ত্রণালয় এবং বিএডিসি কর্তৃক চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। চীনের সাথে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে মোট ৭টি লটে এপ্রিল ২৫ থেকে অক্টোবর ২৫ পর্যন্ত শিপমেন্ট সিডিউল নির্ধারিত ছিল। আন্তর্জাতিক বাজারে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত ডিএপি সারের দাম কম থাকলেও উল্লেখিত সময়ে কোন শিপমেন্ট হয়নি। পরবর্তীতে জুলাই ২৫ মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে ডিএপি সারের দাম যখন সর্বোচ্ছ তখন থেকে শিপমেন্ট শুরু হয়। এছাড়া অক্টোবর মাসে যখন আন্তর্জাতিক বাজারে ডিএপি সারের দাম কমের দিকে তখন একসাথে ৪টি লটের ডিএপি সারের দাম নির্ধারণ করা হয় এবং নির্ধারিত লে-ক্যানের বাইরে ইচ্ছামত জাহাজ লোড পোর্টে পাঠানো হয়। ৩য় লট: চীনের ৩য় লটের নির্ধারিত লে-ক্যান ০৯-১৫ অক্টোবর। বিএডিসি’র সাথে চীনের স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী লে-ক্যানের ২১ দিন আগে অর্থ্যাৎ ১৮ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত আর্গুস ও ফার্টিকনের ভিত্তিতে দাম নির্ধারিত হওয়ার কথা থাকলেও বিএডিসি ১১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত আর্গুস ও ফার্টিকনের ভিত্তিতে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। বিএডিসি ও চীনের মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী ১৮ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত আর্গুস ও ফার্টিকনের ভিত্তিতে প্রতি মে. টন ডিএপি সারের দাম আসে ৭৬৮.৭৫ মার্কিন ডলার। বিএডিসি চুক্তিতে নির্ধারিত ফর্মুলা অনুযায়ী ডিএপি সারের দাম নির্ধারণ না করে ১১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত আর্গুস ও ফার্টিকনের ভিত্তিতে ৭৭২.৫০ মার্কিন ডলার দাম নির্ধারণ করেছে। অর্থ্যাৎ ৪৪,০০০ মে. টন ডিএপি সার আমদানির জন্য প্রতি মে. টন ৩.৭৫ মার্কিন ডলার করে সরকারের প্রায় ২.০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হবে। চুক্তিতে উল্লেখিত নির্ধারিত ফর্মুলার ছাড়া সারের দাম নির্ধারণের সুযোগ না থাকলেও এক্ষেত্রে বিএডিসি ও কৃষি মন্ত্রণালয় দুর্নীতি ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন গ্রহণ করে সরকারি অর্থ মানি লন্ডারিং করেছে। উক্ত লটের জাহাজ এখন পর্যন্ত লোড পোর্টে পৌছায়নি। অর্থ্যাৎ জাহাজ লোড পোর্টে পৌছানোর ২১ দিন আগের ০২ অক্টোবর তারিখে প্রকাশিত আর্গুস ও ফার্টিকনের ভিত্তিতে ৩য় লটের দর হওয়ার কথা ৭৫৬.২৫ মার্কিন ডলার। ৩য় লটে প্রতি মে. টন (৭৭২.৫০-৭৫৬.২৫) ১৬.২৫ মার্কিন ডলার করে ৪৪,০০০ মে. টনে প্রায় ৯.০০ কোটি টাকা বিএডিসি ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা লুটপাট করেছে।৪র্থ লট: চীনের ৪র্থ লটের নির্ধারিত লে-ক্যান ১৫-২১ অক্টোবর। বিএডিসি’র সাথে চীনের স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী লে-ক্যানের ২১ দিন আগে অর্থ্যাৎ ১৮ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত আর্গুস ও ফার্টিকনের ভিত্তিতে প্রতি মে. টন ডিএপি সারের দাম আসে ৭৬৮.৭৫ মার্কিন ডলার। পরবর্তীতে উক্ত লটৈর জাহাজ ২৯ অক্টোবর তারিখে লোড পোর্টে পৌছায়। অর্থ্যাৎ জাহাজ লোড পোর্টে পৌছানোর ২১ দিন আগের ০২ অক্টোবর তারিখে প্রকাশিত আর্গুস ও ফার্টিকনের ভিত্তিতে ৪র্থ লটের দর হওয়ার কথা ৭৫৬.২৫ মার্কিন ডলার। ৪র্থ লটে প্রতি মে. টন (৭৬৮.৭৫-৭৫৬.২৫) ১২.৫০ মার্কিন ডলার করে ৪৪,০০০ মে. টনে প্রায় ৭.০০ কোটি টাকা বিএডিসির কর্মকর্তারা লুটপাট করেছে।৬ষ্ঠ লট: চীনের ৬ষ্ঠ লটের নির্ধারিত লে-ক্যান ২২-২৮ অক্টোবর। বিএডিসি’র সাথে চীনের স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী লে-ক্যানের ২১ দিন আগে অর্থ্যাৎ ২৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত আর্গুস ও ফার্টিকনের ভিত্তিতে প্রতি মে. টন ডিএপি সারের দাম ৭৬৮.৭৫ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হয় এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদন গ্রহণ করা হয়। সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনের পর বিএডিসি কর্তৃক উক্ত লটের লে-ক্যান ২৫-৩০ অক্টোবর পুন:নির্ধারণ করা হয়। তবে পুন:নির্ধারিত লে-ক্যান ২৫-৩০ অক্টোবর অনুযায়ী সারের দাম প্রতি মে. টন ৭৫৬.২৫ মার্কিন ডলার হলেও বিএডিসি কর্তৃক উক্ত দরের পরিবর্তে সারের দাম ৭৬৮.৭৫ মার্কিন ডলার বহাল রাখা হয়। পরবর্তীতে উক্ত লটের জাহাজ ২৯ অক্টোবর তারিখে লোড পোর্টে পৌছায়। ৬ষ্ঠ লটে প্রতি মে. টন (৭৬৮.৭৫-৭৫৬.২৫) ১২.৫০ মার্কিন ডলার করে ৪৪,০০০ মে. টনে প্রায় ৭.০০ কোটি টাকা বিএডিসির কর্মকর্তারা লুটপাট করেছে।রাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতায় চীন থেকে উল্লেখিত ৩টি লটের ডিএপি সার আমদানির ক্ষেত্রে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির অনুমোদিত/নির্ধারিত লে-ক্যানের বাইরে পরবর্তীতে ভিন্ন লে-ক্যান নির্ধারণ করা হলেও এক্ষেত্রে বিএডিসি কর্তৃক কৃষি মন্ত্রণালয় বা সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সংশোধিত অনুমোদন গ্রহণ করা হয়নি বা সারের দাম পুন:নির্ধারণ করা হয়নি। পুন:নিধারিত লে-ক্যান অনুযায়ী সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির অনুমোদন গ্রহণ না করে বিএডিসি ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মিলে প্রায় ২৭ কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর