শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৪৩ অপরাহ্ন

ই-পেপার

মানব পাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়ে সর্বশান্ত নড়াইলের জাফর শেখ, আদালতে মামলা

মোঃ কামাল হোসেন, অভয়নগর(যশোর):
আপডেট সময়: মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ৩:২৩ অপরাহ্ণ

সুদে টাকা ও সহায় সম্বল বিক্রি করে ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়ে সুন্দর জীবন যাপনের আশা ছিল পরিবারের। কিন্তু সেই আশা আজ বালির বাঁধের মত ভেঙ্গে একটি পরিবারকে করেছে সর্বশান্ত। ছেলের ও পরিবারের ভবিষ্যৎ নিয়ে দিশেহারা পারভীন বেগম।

বলছিলাম নড়াইল সদর উপজেলার বিছালী গ্রামের জাফর শেখের ছেলে শিমুলের কথা।

২৮ সেপ্টেম্বর (রবিবার) সরেজমিনে গেলে জানা যায়, চলতি বছরের মে মাসের ২৪ তারিখে শিমুলের প্রতিবেশী মোঃ খোরশেদ মোল্লার ছেলে প্রবাস ফেরত মোঃ খাইরুল ইসলাম ও মোঃ শরিফুল ইসলাম এর খপ্পরে পড়ে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন নিয়ে বিদেশে (সৌদিআরব) পাড়ি জমায় শিমুল। এর আগে ঘেরের জমি বন্ধক রেখে নিজের মোটরসাইকেল বিক্রি করে সুদে টাকা নিয়ে ৫ লক্ষ টাকা তুলে দেয় খাইরুল গংদের হাতে। সরকারি ষ্ট্যাম্পে চুক্তি হয় আকামা করে নির্দিষ্ট কোম্পানিতে ১৮০০ সৌদি রিয়ালের বেতনে কাজ ধরিয়ে দেবে। অন্যথায় ক্ষতিপূরণসহ সমস্ত টাকা ফেরত দিবে। কিন্তু কোন আকামা না দেওয়ায় পুলিশের ভয়ে মরুভূমিতে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে শিমুল।

মোবাইলের ভিডিও কলে শিমুলের এমন অবস্থা দেখে তার বাবা জাফর শেখ, মা পারভীন বেগম ও স্ত্রী রানী বেগমে ঘুম হয়েছে হারাম। এ বিষয়ে খাইরুল ও শরিফুলের সাথে বার বার কথা বলেও কোন লাভ হয়নি। অতঃপর গ্রাম্য শালিশও হয়েছে একাধিকবার। চুক্তি ভঙ্গ করে এখন খাইরুল গং আরো টাকা চায়। কিন্তু জাফর শেখের দেওয়ার আর কিছু নেই। দুই মাস তার পরিবার শুধু আলু ভর্তা দিয়ে ভাত খাচ্ছেন বলে অশ্রুসিক্ত নয়নে জানান জাফর শেখ। ছেলের কষ্টের গল্পে তার পরিবারের হাসি মিলিয়ে গেছে বিষাদে।

শিমুল ভিডিও কলে তার মা- বাবা ও স্ত্রীকে জানায়, প্রতিনিয়ত পুলিশের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। খাওয়া ঘুম তার নেই। সে খুব ভয়ে আছে।

কোন উপায়ান্ত না পেয়ে শিমুলের মা পারভীন বেগম বাদী হয়ে প্রতারক খাইরুল ও শরিফুলকে আসামী করে নড়াইল বিজ্ঞ আদালতে মানব পাচার ও প্রতিরোধ ট্রাইবুনালে মামলা দায়ের করেছেন। বিজ্ঞ আদালত আগামী ২২ অক্টোবর পিবিআইকে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন। সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীরা আইনের আওতায় আসুক এটাই ভুক্তভোগী পরিবারের প্রত্যাশা।

শিমুলের চাচা মাসুদ শেখ ও চাচি খাদিজা জানায়, এ ঘটনায় কয়েকবার গ্রাম্য শালিস ও থানায় অভিযোগ দিলেও তারা মানেনি। অতঃপর মামলা করায় প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে তারা।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শরিফুলের সাথে কথা হলে আনিত অভিযোগ সঠিক নয় বলে জানান। চুক্তি অনুযায়ী তাকে কাজ দিয়েছে এবং আকামার ম্যাসেজ ও শিমুলের ফোনে আসছে। কিন্তু ওই কাজে তার কষ্ট হয় তাই ওখান থেকে পালিয়ে গেছে বলে জানান। তবে এ বিষয়ে কোন প্রমান তারা দেখাতে পারেনি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা যশোর পিবিআইয়ের এএসআই মহিদুল ইসলাম বলেন, মামলার তদন্ত চলছে, এখনি কিছু বলা যাচ্ছে না। তদন্ত কার্যক্রম শেষ হলে বিস্তারিত বলা যাবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর