পাবনার ভাঙ্গুড়ায় আরাজি পার-ভাঙ্গুড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষককে শোকজ নোটিশ ঘিরে এলাকায় ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। শোকজ নোটিশ বিলম্বে পৌঁছানোয় প্রধান শিক্ষকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইফফাত মোকারমার সন্তান সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হলে তিনি ঢাকার টোমা হাসপাতালে ভর্তি করান। চিকিৎসকের পরামর্শে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার জন্য তিনি বিনা বেতনে অর্জিত মেডিকেলের ছয় মাসের ছুটি নেন। পরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আলেয়া ফেরদৌস শিখার স্বাক্ষরে গত ৩০ জুলাই পর্যন্ত আরো দুই মাসের ছুটি অনুমোদন করা হয়।
কিন্তু ছুটি শেষে ৩১ জুলাই বিদ্যালয়ে যোগদান না করায় প্রধান শিক্ষক মোছা. নিশাত রেহানা একই দিনে তাকে শোকজ নোটিশ দেন এবং তিন কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেন। তবে অভিযোগ উঠেছে, ৩১ জুলাইয়ের শোকজ নোটিশ সহকারী শিক্ষিকার ভাড়া বাসায় পৌঁছায় ৫ আগস্ট। এতে স্থানীয়রা প্রধান শিক্ষকের সততা ও ন্যায়পরায়ণতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
এ বিষয়ে সহকারী শিক্ষক ইফফাত মোকারমা বলেন, “আমার ছেলের চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের পরামর্শে ঢাকায় অবস্থান করছি। শোকজের তারিখ ৩১ জুলাই হলেও আমাকে চিঠি দেওয়া হয় ৭ আগস্ট। তাই আমি এর জবাব দিইনি। তাছাড়া আমার এক বান্ধবী রাজনৈতিক প্রভাবে ভাঙ্গুড়া থানায় আমার বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা করেছে। থানার ওসি তদন্ত ছাড়াই মামলা রুজু করেছেন। এ কারণে আমি যোগদান করতে পারছি না।”
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক নিশাত রেহানা বলেন, “আমি নিয়মকানুন ভালোভাবে জানি না। ছুটি শেষে ৩১ জুলাই তিনি বিদ্যালয়ে আসেননি, তাই শোকজ করি। পরে ৫ আগস্ট আমি নিজেই তার বাসায় গিয়ে চিঠি দিয়ে আসি এবং একটি কপি সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার আজিম হোসেনকেও দিয়েছি।”
উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার (এটিও) মো: আজিম হোসেন বলেন, “শোকজের চিঠি আমি পাইনি। তবে নিয়ম অনুযায়ী কোনো শিক্ষক টানা তিন দিন বিদ্যালয়ে উপস্থিত না হলে তাকে শোকজ করা যায়। ইফফাত মোকারমার ছেলের দুর্ঘটনার কারণে ঢাকায় চিকিৎসাধীন থাকার কথাও আমি শুনেছি।”
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (টিও) সেকেন্দার আলী জানান, “শোকজ চিঠি আমি পাইনি। তবে ৭ আগস্ট প্রধান শিক্ষক ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন, যা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ওই সহকারী শিক্ষকের বেতনও স্থগিত রাখা হয়েছে।”
এদিকে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা চলছে। কেউ এটিকে নিয়ম না জানার কারণে সৃষ্ট জটিলতা বলছেন, আবার কেউ মনে করছেন সহকারী শিক্ষিকাকে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে হয়রানি করা হয়েছে। ফলে বিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজেও বিভ্রান্তি ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।