চাটমোহরে আলোচিত হানি ট্র্যাপ’র মূল হোতা সাগর হোসেন (৩২) কে মঙ্গলবার (২ সেপ্টম্বর) ভোর সাড়ে তিনটার দিকে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার কাছিকাটা এলাকা থেকে চাটমোহর থানা পুলিশ আটক করেছে। পরে দুপুরে গুনাইগাছায় একটি বিস্ফোরণের ঘটনায় আটক দেখিয়ে তাকে পাবনা জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
সাগর চাটমোহর পৌর সদরের বালুচর মহল্লার ইট-বালি সরবরাহকারী তাইজুল ইসলাম এর ছেলে ও চাটমোহর সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সদস্য।
এর আগে এই চক্রের সদস্য রায়না (১৫) নামে এক মেয়েকে পাবনা সদর উপজেলার হেমায়েতপুর থেকে আটক করে পুলিশ। পরে পাবনা শিশু আদালতে হাজির করলে শিশু আদালত পিতার জিম্মায় রায়না কে ছেড়ে দেয় বলে জানায় একটি বিশ্বস্ত সূত্র।
চাটমোহর থানা অফিসার ইনচার্জ জানান, সাগরের বিরুদ্ধে পূর্বের কোন মামলা না থাকায় ও ভাইরাল হওয়ার ঘটনায় কোন ব্যক্তি বাদী না হওয়ায় সাগরকে চাটমোহর থানার একটি বিস্ফোরক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পাবনা জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য,পাবনার চাটমোহরে এক ভয়ংকর সামাজিক ব্যধির নাম ‘হানি ট্র্যাপ’। যা ছড়িয়ে পড়ছে উপজেলা ছাড়িয়ে জেলার অন্যান্য এলাকাতেও। মাদক, প্রতারণা (ব্ল্যাকমেইল) আর শিশু-কিশোরীদের ব্যবহার করে প্রেমের অভিনয়ের মাধ্যমে একটি সংঘবদ্ধ চক্র নিঃস্ব করে দিচ্ছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের।
দীর্ঘদিন ধরে সাগর চাটমোহর পৌর এলাকা ও আশপাশে গড়ে তোলে এক ভয়ংকর অপরাধ সাম্রাজ্য, গৃহবধূ থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে হাতিয়ে নিতো মোটা অংকের টাকা। লোক লজ্জার ভয়ে অনেকেই ‘হানি ট্র্যাপে পড়ে’ সর্বস্বান্ত হলেও মুখ খুলতো না।
এই চক্র মূলত উঠতি বয়সি নারী শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে অথবা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মেয়েদের কন্ঠ নকল করে গড়ে তোলে প্রেমের সম্পর্ক। সোশ্যাল মিডিয়ার ফাঁদে ফেলে প্রেমিককে ডেকে নেওয়া হয় নির্জন কোনো স্থানে বা রেস্টুরেন্টের বিশেষ রুমে । সেখানে চক্রের অন্য সদস্যরা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী উপস্থিত হয়ে শুরু করে ভয় দেখানো, মারধর, অর্থ ও মোবাইল হাতিয়ে নেওয়ার মতো অপরাধ।
এই চক্রে যুক্ত হয়েছে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে শুরু করে দশম শ্রেণি, এমনকি কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীরাও। যাদের বয়স ১২ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। তারা কেবল প্রেমের অভিনয়েই সীমাবদ্ধ নয়, বরং অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে গোপনে ভিডিও ধারণ করছে। পরে এসব ভিডিও ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেইল করে আদায় করা হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। কেউ টাকা দিতে ব্যর্থ হলে তাকে মারধর করা হতো। দেয়া হতো প্রাণনাশের হুমকি।
ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রামসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে প্রথমে বন্ধুত্ব গড়ে তোলা হচ্ছে। এরপর ধাপে ধাপে চাপে ফেলে সংগ্রহ করা হচ্ছে নগ্ন ছবি ও ভিডিও। সেগুলো সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেবার ভয় দেখিয়ে করা হচ্ছিল ব্ল্যাকমেইল।
চাটমোহরে উপজেলা সদরের বিভিন্ন পয়েন্ট ছাড়াও আশপাশের উপজেলা গুলোতে সকল অপকর্মের আস্তানা রয়েছে হানি ট্র্যাপের।
এলাকাবাসী সাগরের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়ে ইতোপুর্বে চাটমোহরে একাধিক মানববন্ধন করেছে। কিন্তু এই চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে কোন ব্যক্তি মামলার বাদী না হওয়ায় পড়াশোনার পক্ষ থেকে তেমন কোন শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়নি বলে প্রশাসনের প্রতিনিধিরা জানালেও চাটমোহরের সাধারণ মানুষ বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক ক্ষুব্ধ।