বাংলা গদ্যের রূপকার, সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরীর পৈতৃক ভিটা আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। পাবনার চাটমোহরের হরিপুর গ্রামে অবস্থিত কবির জন্মভিটাটি অবহেলা ও অযত্নে পড়ে থেকে ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ইতিহাসের একটি মূল্যবান অংশ নিঃশব্দে ধসে পড়ছে।
জানা গেছে, ১৮৬৮ সালের ৭ আগস্ট পাবনার চাটমোহরের হরিপুর গ্রামেই জন্ম নিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যে চলিত গদ্যের প্রবর্তক প্রমথ চৌধুরী। তিনি ছিলেন সাহিত্যিক, সম্পাদক, ব্যারিস্টার এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মীয়। তাঁর সাহিত্যকর্ম যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি তাঁর জন্মভূমিও জাতীয় ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু সেই ইতিহাস আজ অরক্ষিত। প্রমথ চৌধুরীর স্মৃতি ধরে রাখতে স্থানীয়ভাবে গঠন করা হয়েছে ‘প্রমথ চৌধুরী স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ’। তবে সংগঠনটি বর্তমানে অর্থ সংকটে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় বৃদ্ধ আনসার আলী বলেন, এমন একজন মানুষের বাড়ি যদি এইভাবে নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কিছুই জানতে পারবে না।
চাটমোহর সরকারি ডিগ্রী কলেজের শিক্ষার্থী কাওসার আলী বলেন, আমরা চাই সরকার এই জায়গাটিকে সংরক্ষণ করুক যেন সবাই জানতে পারে উনার অবদান।
প্রমথ চৌধুরী স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি প্রভাষক ইকবাল কবির রঞ্জু বলেন, হরিপুরের চৌধুরীপাড়া প্রমথ চৌধুরীর পৈতৃক ভিটেয় ৩ একর জমির উপর এলাকার ১৮টি পরিবার দখল করে ঘর-বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছিলেন। প্রমথ চৌধুরী স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের আন্দোলন ও দাবির মুখে প্রশাসন অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ প্রক্রিয়া শুরু করেন। উপজেলা প্রশাসনের সাথে প্রমথ চৌধুরী স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের কমিটির নেতৃবৃন্দ ও এলাকাবাসী উপস্থিতে উচ্ছেদ অভিযান সফল হয়। দখলদারদের হাত থেকে বিখ্যাত এই সাহিত্যিকের জায়গা উদ্ধার করে পাঠাগার নির্মাণ করা হয়। সরকার চাইলে এখানে একটি সাহিত্য বিশ্ববিদ্যালয়ও গড়ে তুলতে পারে।
সচেতন মহলের দাবি, বাংলা সাহিত্যে প্রমথ চৌধুরীর অবদান অনস্বীকার্য। তাঁর স্মৃতি ও উত্তরাধিকারকে ধরে রাখা শুধু একটি এলাকার দায়িত্ব নয় এটা জাতীয় দায়িত্ব। অবহেলায় স্মৃতিচিহ্ন হারিয়ে যাওয়ার আগেই প্রয়োজন তা রক্ষার জন্য সুপরিকল্পিত ও কার্যকর পদক্ষেপ।
এ বিষয়ে চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুসা নাসের চৌধুরী বলেন, প্রমথ চৌধুরীর পৈতৃক ভিটা চাটমোহরের ইতিহাস ঐতিহ্যের এক অনন্য নিদর্শন। এই নিদর্শনকে রক্ষা করার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে সেখানকার অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। এছাড়াও সেখানে একটি পাঠাগার নির্মাণ করা হয়েছে। স্থানটিকে আরো দৃষ্টিনন্দন করার জন্য উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে।