যশোর-খুলনা মহাসড়কের অভয়নগর উপজেলা অংশ এখন এক বিভীষিকাময় রূপ ধারণ করেছে। বছরের পর বছর ধরে চলা অবহেলা এবং অবৈধ মাটি-বালি পরিবহনের কারণে এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি পরিণত হয়েছে এক মৃত্যুফাঁদে। বৃষ্টিতে কাদা আর রোদে ধুলার রাজত্বে পথচারী ও চালকদের জীবন এখন দুর্বিষহ।
সড়কটি কাগজে-কলমে পাকা হলেও বাস্তবে এর কোনো চিহ্ন নেই। গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে অভয়নগরের প্রেমবাগ থেকে চেঙ্গুটিয়া পর্যন্ত প্রায় পুরোটাই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ট্রাক চালকদের মতে, প্রতিনিয়ত ২/৩টি গাড়ি আটকে থাকছে ও প্রতিদিন দু’একটি ট্রাক উল্টে খাদে পড়ে যাচ্ছে। গতকাল রাত ৩টা থেকে আটকে থাকা জাহিদুল ইসলাম নামের এক চালক ক্ষোভের সঙ্গে জানান, ১৩ ঘণ্টা অপেক্ষা করেও এক কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারেননি তিনি। দ্রুত সমাধান না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। বর্ষায় কাদা, গ্রীষ্মে ধুলা: এক চরম বিড়ম্বনা এলাকাবাসীর অভিযোগ, বৃষ্টির পর সড়কের গর্তে পানি জমে কর্দমাক্ত হয়ে যায়, আর বৃষ্টি না থাকলে যানবাহনের চাকার সঙ্গে উড়ে ধুলার ঝড়। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন মোটরসাইকেল ও ছোট গাড়ির চালকরা। পাকা সড়কের উপর ভেজা কাদা মাটি যেন এক মরণফাঁদ তৈরি করেছে। পথচারীদের হেঁটে চলাও কষ্টকর হয়ে পড়েছে। মেহেদি নামের এক মোটরসাইকেল চালক জানান, “বৃষ্টি হলে কাদা, রোদ উঠলে ধুলা। ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলাচল করতে হয়। ধুলায় কিছু দেখা যায় না, আর এখন কাদায় রাস্তা পার হওয়াও দায়।”
পরিবহন চালক রমজান আলী জানান, “বছরজুড়েই এই রাস্তায় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বর্ষায় দুর্ভোগ বাড়ে, আর বর্ষা গেলে ধুলোয় টিকে থাকা দায়। বর্তমানে তো একেবারেই চলাচলের অনুপযোগী। প্রতিনিয়ত ছোটবড় দুর্ঘটনা ঘটছে।” নেপথ্যে অবৈধ ব্যবসা ও প্রশাসনের নীরবতা? স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে ইটভাটার মালিক ও মাটি-বালি ব্যবসায়ীরা লাইসেন্সবিহীন ট্রাক্টর, ডাম্পার ও ট্রলিতে করে মাটি-বালি পরিবহন করে আসছেন। এই মাটি-বালি সড়কজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে রোদে ধুলা এবং বৃষ্টিতে পিচ্ছিল কাদায় পরিণত হয়। এই অবৈধ পরিবহনের কারণেই সড়কের এমন বেহাল দশা বলে মনে করেন তারা। কর্তৃপক্ষের আশ্বাস: আলোর দেখা মিলবে কি?
যশোরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী শাহজাদা ফিরোজ আশার বাণী শুনিয়েছেন। তিনি বলেন, “গতকাল রাস্তার ঠিকাদারকে ডাকা হয়েছিল এবং তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান করা হবে। ভারী বর্ষণের কারণে কাজে বিলম্ব হলেও আজ দুপুরের পর থেকেই কাজ শুরু হবে এবং আশা করছি দ্রুতই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।”
নওয়াপাড়া হাইওয়ে থানার ওসি মাহবুবুর রহমান জানান, হাইওয়ে পুলিশের টিম ২৪ ঘণ্টা মহাসড়কে কাজ করছে। অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে এবং দুর্ঘটনা কমানোর ক্ষেত্রে হাইওয়ে পুলিশ কাজ করছে। এছাড়া মহাসড়ক নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত মামলা করা হচ্ছে। তবে প্রশ্ন হলো, এই আশ্বাস কি দুর্ভোগের অবসান ঘটাতে পারবে, নাকি যশোর-খুলনা মহাসড়ক আবারও তার পুরোনো বেহাল দশায় ফিরে যাবে? এই ভোগান্তির শেষ কোথায় ও কি ভাবে হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।