দীর্ঘ এক বছর পেরিয়ে গেলেও মাদ্রাসা থেকে ছুটি না পাওয়াই এক নজর বাবা-মাকে দেখার জন্য মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে চলে এসেছে ১০ বছরের এক শিশু। মাদ্রাসার ছাত্র সিয়াম কান্না কন্ঠে জানান, বাবা মায়ের আদর ও ভালোবাসা পাওয়ার জন্য মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে এসেছি। কিন্তু আমি জানিনা কিভাবে বাড়ি যাবো। স্টেশনে এসে ট্রেন দেখে উঠে পড়েছি। এখন কোথায় আছি তাও জানিনা, আমাকে আমার বাবা-মায়ের কাছে নিয়ে চলেন” ঠিক এভাবেই কান্নাজড়িত কন্ঠে কথাগুলো বলছিলেন দশ বছর বয়সের মাদ্রাসার ছাত্র সিয়াম। মাদ্রাসার ছাত্র সিয়াম জানান, চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবননগর উপজেলার আমিনিয়া দারুল কওমী মাদ্রাসার ছাত্র তিনি। মাদ্রাসার ছাত্র সিয়াম আরও বলেন, বাবা-মায়ের কাছে যাওয়ার উদ্দেশ্য কাউকে কিছু না বলেই মাদ্রাসা থেকে চলে এসেছি। তারপর উপজেলার আনসার বাড়িয়া রেল-স্টেশনে এসে রকেট মেইল ট্রেনে উঠে পড়েন সিয়াম। ট্রেনটি ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে এসে পৌঁছালে ট্রেন থেকে নেমে পড়েন মাদ্রাসার ছাত্র সিয়াম। গন্তব্য ভুলে হারিয়ে যাওয়া শিশুটির কান্না দেখে এরশাদ নামে ট্রেনের এক যাত্রী ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে তাৎক্ষণিক ঈশ্বরদী আমবাগান পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সোহেল রানা মাদ্রাসার ছাত্র সিয়ামকে উদ্ধার করেন। পরে মাদ্রাসার ছাত্র সিয়ামের দেওয়া তথ্যমতে ও চুয়াডাঙ্গার জীবন-নগর থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে সিয়ামের বাবার মুঠোফোন নম্বর বের করে ফোন দিয়ে বিষয়টি জানালে তার বাবা ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে এলে বাবার হাতে তুলে দেন পুলিশ। শিশু সিয়াম চুয়াডাঙ্গা জেলার জীবন-নগর উপজেলার খাসপাড়া এলাকার মোঃ ইউসুফ আলীর ছেলে। তার বাবা ইউসুফ আলী ঢাকা ডিস লাইনের একজন কর্মচারী। শিশু সিযামের ভাষ্য, মাদ্রাসা থেকে কোন ছুটি না বলে সে বাবা-মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য মাদ্রাসা থেকে পালিয়ে এসেছে। কোন গাড়িতে করে নিজের বাড়িতে যেতে হয় সেটা তার জানা ছিল না। শনিবার বিকালে মাদ্রাসা থেকে বের হয়ে চুয়াডাঙ্গা আনসার বাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে রকেট মেইল ট্রেনে উঠে সে। ট্রেনটি পাবনার ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনে পৌঁছালে হঠাৎ দাঁড়িয়ে যায় সে। সেখানে ট্রেন থেকে নেমে যায় সিয়াম। এরপর ট্রেনের এক যাত্রী তাকে দেখতে পেয়ে ৯৯৯ নম্বরে যোগাযোগ করলে তাৎক্ষণিক ভাবে পুলিশ এলে তাকে তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরশাদ নামে ট্রেনের ওই যাত্রী বলেন, ট্রেনের মধ্যেই দেখেছিলাম পাঞ্জাবি পরে ছেলেটি একা একা ঘুরে বেড়াচ্ছে। অনেকবার জিজ্ঞেস করেও কিছু বলেনি শিশুটি। পরে স্টেশনে নেমে আমি ৯৯৯ নম্বরে কল করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করি। ঈশ্বরদী আমবাগান পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই (উপ-পরিদর্শক) সোহেল রানা বলেন, ৯৯৯ নম্বরে কল পেয়ে আমি সাথে সাথে স্টেশনে গিয়ে শিশুটিকে নিয়ে আসি এবং তার শরীরে শীতের গরম কাপড় না থাকায় শীতের পোষাক কিনে দিয়ে তার থেকে ঠিকানা জানার চেষ্টা করি। এক পর্যায়ে সে তার বাবার মোবাইল নম্বর বললে তার বাবাকে মুঠোফোনে বিষয়টি জানালে তার বাবা এসে ছেলেকে শনাক্ত করে। এরপর আইনি প্রক্রিয়া শেষে বাবার কাছে শিশুটিকে হস্তান্তর করা হয়। ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, ৯৯৯ নম্বরে একজন লোক খবর দিলে সাথে সাথে পুলিশ শিশুটিকে উদ্ধার করে। পরে ঠিকানা বের করে তার পরিবারে খবর দিলে তার বাবা ঈশ্বরদী স্টেশনে আসলে সেখানেই মাদ্রাসার ছাত্র সিয়ামকে তার বাবার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।