রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫১ অপরাহ্ন

ই-পেপার

ইসলামি শরীয়াতে ওজনে কম বেশী করার ভয়াবহ পরিনাম-মাওলানা: শামীম আহমেদ

চলনবিলের আলো ডেস্ক:
আপডেট সময়: মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ১০:৩০ পূর্বাহ্ণ

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তিনি আকাশকে করেছেন সমুন্নত এবং স্থাপন করেছেন দাঁড়িপাল্লা, যাতে তোমরা সীমা লঙ্ঘন না কর দাঁড়িপাল্লায়। তোমরা সঠিক ওজন কায়েম কর এবং ওজনে কম দিও না।’ (সুরা আর-রহমান, আয়াত : ৭-৯) অন্যত্র তিনি বলেন, ‘তোমরা মাপ ও ওজন পূর্ণ করে দাও ন্যায়নিষ্ঠার সঙ্গে। আমরা কাউকে তার সাধ্যের অতিরিক্ত কষ্ট দিই না।’ (সুরা আনআম, আয়াত : ১৫২)

ব্যবসা-বাণিজ্য ও লেনদেনের ক্ষেত্রে পরিমাণ এবং ওজনে কমবেশি করা বা ঠকানোর মাধ্যমে জীবিকা উপার্জন একটি জঘন্য অপরাধ। মানুষ মাত্রাতিরিক্ত লোভ ও অল্পে তুষ্ট না হওয়ার কারণেই অবৈধ পন্থায় উপার্জনের পেছনে ছুটে থাকে। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে এ ধরনের কাজকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, নিন্দনীয় ও পরকালীন দুর্ভোগের কারণ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘যারা মাপে কম দেয়, তাদের জন্য দুর্ভোগ। এরা লোকের কাছ থেকে যখন মেপে নেয়, তখন পূর্ণমাত্রায় নেয় এবং যখন মানুষকে মেপে দেয় তখন কম করে দেয়। তারা কি চিন্তা করে না যে, তারা পুনরুত্থিত হবে- সেই মহা দিবসে যেদিন মানুষ দাঁড়াবে বিশ্ব প্রতিপালকের সামনে?’ (সুরা মুতাফফিফিন, আয়াত : ১-৬)

ব্যবসা একটি পবিত্র পেশা। পবিত্রতা ও সততার মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালিত হলে সেখানে অন্যায়-অনিয়ম ঠাঁই পেতে পারে না। ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই ঠকবে না সৎভাবে ব্যবসা করলে। কিন্তু ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সেই সততা ও পবিত্রতার ঘাটতি বর্তমানে ব্যাপকহারে পরিলক্ষিত হচ্ছে। ঠকবাজি ও জুয়াচুরির মাধ্যমে ওজনে কম দেওয়া বা বেশি নেওয়া মাত্রাতিরিক্ত হারে বেড়ে চলেছে। ওজনে বা মাপে কম দেওয়ার ব্যাপারে রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখনই কোনো জনগোষ্ঠী মাপ ও ওজনে কম দেয়, তখনই তাদের দুর্ভিক্ষ, খাদ্যদ্রব্যের ঘাটতি ও অত্যাচারী শাসকের মাধ্যমে শাস্তি দেওয়া হয়।’ (বুখারি)

রসুলুল্লাহ (সা.) আরো বলেন, ‘পাঁচটি বস্তু পাঁচটি বস্তুর কারণে হয়ে থাকে- ১. কোনো জাতি চুক্তিভঙ্গ করলে আল্লাহ তাদের ওপর তাদের শত্রুকে বিজয়ী করে দেন। ২. কেউ আল্লাহর নাজিল করা বিধানের বাইরে বিধান দিলে তাদের মধ্যে দারিদ্র্য ছড়িয়ে পড়ে। ৩. কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়লে তাদের মধ্যে মহামারী ছড়িয়ে পড়ে। ৪. কেউ মাপে বা ওজনে কম দিলে তাদের জন্য খাদ্যশস্যের উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং দুর্ভিক্ষ তাদের গ্রাস করে। ৫. কেউ জাকাত দেওয়া বন্ধ করলে তাদের থেকে বৃষ্টি বন্ধ করে দেওয়া হয়।’ (সুনানে দায়লামি ও তাফসিরে কুরতুবি) অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যে জাতির মধ্যে খেয়ানত অর্থাৎ আত্মসাতের ব্যাধি আধিক্য লাভ করে, সে জাতির অন্তরে আল্লাহ শত্রুর ভয় সৃষ্টি করে দেন। যে জাতির মধ্যে জেনা-ব্যভিচার বিস্তার লাভ করে, সে জাতির মধ্যে মৃত্যুহার বেড়ে যায়। যে জাতি মাপে ও ওজনে কম দেয়, তাদের রিজিক উঠিয়ে নেওয়া হয়। যে জাতি অন্যায় বিচার করে, তাদের মধ্যে খুন-খারাবি ব্যাপক হয়। যে জাতি অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, তাদের ওপর শত্রুকে চাপিয়ে দেওয়া হয়।’ (মুওয়াত্তা মালেক ও মিশকাত)

মাপে কম দেওয়াসহ নানান অপরাধের সঙ্গে ব্যবসায়ীরা জড়িত থাকে। তবে যারা আল্লাহকে ভয় করে চলেন, তাদের কথা ভিন্ন। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা কিয়ামতের দিন উপস্থিত হবে পাপাচারী হিসেবে। কেবল সেসব ব্যবসায়ী ছাড়া, যারা আল্লাহভীরু, সৎকর্মশীল ও সত্যবাদী।’ (তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ) হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) যখন বাজারে যেতেন, তখন বিক্রেতাদের উদ্দেশে রসুল (সা.)-এর হাদিস শুনিয়ে বলতেন, ‘আল্লাহকে ভয় করো।

কেননা মাপে কম দানকারীরা কিয়ামতের দিন দাঁড়িয়ে থাকবে এমন অবস্থায় যে, ঘামে তাদের কানের অর্ধেক পর্যন্ত ডুবে যাবে।’ (বুখারি ও মুসলিম) মাপে কম দেওয়ার কারণে অতীতে অনেক জনগোষ্ঠীকে আল্লাহতায়ালা ধ্বংস করে দিয়েছেন। হজরত শোয়াইব (আ.)-এর জাতির কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তারা অন্যান্য পাপের সঙ্গে ওজনে কম দেওয়ার পাপে সীমা ছাড়িয়ে গেলে আল্লাহ তাদের সমূলে ধ্বংস করে দেন। সুরা আ’রাফে এ ঘটনা বিস্তারিতভাবে এসেছে। সুতরাং লোভের বশবর্তী হয়ে ওজনে কম দেওয়ার মতো কবিরা গুনাহর সঙ্গে জড়িয়ে পড়া থেকে আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন। আমিন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর