শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:১৫ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

চলনবিলে মাছ শিকারের চাঁই বিক্রির ধুম

চলনবিলের আলো ডেস্কঃ
আপডেট সময়: রবিবার, ১২ জুন, ২০২২, ১:০০ অপরাহ্ণ

ঋতুচক্রে বর্ষাকাল শুরু হয়েছে। নদ নদীতে নতুন পানি এসে গেছে। দেশীয় মাছের জন্য বিখ্যাত চলনবিল। ঐ পানি চলনবিল অঞ্চল চাটমোহরেও ঢুকতে শুরু করেছে। বর্ষার শুরু থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে ও উজান থেকে ঢলের পানি এসেছে। ফলে এবার একটু আগেই খালবিল, ডোবা-জলাশয়-পুকুরে পানি জমতে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে বিশাল জলরাশিতে প্রায় ৩-৪ মাস পেশাদার ও সৌখিন মৎস্য শিকারীদের মাছ শিকারে জমে উঠবে চলনবিলের প্রত্যন্ত এলাকায়। তাই চাটমোহরসহ চলনবিল অঞ্চলের বিভিন্ন হাটে ছোট মাছ ধরার সরঞ্জাম চাঁই বেচাকেনারও আগাম ধুম পড়েছে।
এরইমধ্যেই শিকারের নানা উপকরণ, অনুসঙ্গ যেমন চাঁই তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বিলপাড়ের মৌসুমি কারিগররা। মূলত, বিলাঞ্চলে ব্যাপক চাহিদার প্রেক্ষিতে চাঁই তৈরির সঙ্গে জড়িত কারিগররা ঘরে বসেই মাছ শিকারের যাবতীয় দেশীয় উপকরন তৈরি করে থাকেন। বিশেষ করে চলনবিল অধ্যুষিত নাটোর জেলার গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম ও সিংড়া, পাবনা জেলার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর, সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ ও উল্লাপাড়া সহ চলনবিলের বিভিন্ন উপজেলার অনেক গ্রামের চাঁই তৈরির কারিগররা ভালো দাম পাওয়ায় বহু বছর ধরে মৌসুমি এ পেশায় চাঁই তৈরি মাধ্যেমে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।
বড়াইগ্রাম উপজেলার জুনাইল এলাকা থেকে রবিবার (১২ জুন) চাটমোহর রেলবাজার হাটে চাঁই বিক্রি করতে আসা করম আলী জানান, মাছ ধরার সামগ্রী চাঁই তৈরিতে তোলা বাঁশ, তালের ডাকুর, দা, কাস্তি, আঁশ ছড়ানোর জন্যে বাঁশের চুঙ্গির দরকার হয়। প্রথমত, তালের ডাকুর ৭ থেকে ১০ দিন পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। পরে ওই ডাকুর গুলো থিতিয়ে আঁশ ছড়ানো হয়। আঁশ ও বাঁশের খিল চাঁই বাঁধার কাজে ব্যবহৃত হয়। মুলতঃ তোলা বাঁশে কাজ করে বেশি সুবিধা। তাই তোলা বাঁশও পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। ওই ভেজা বাঁশ রোদে শুকিয়ে দা দিয়ে চিরে ভাগ ভাগ করে সুবিধামতো চাঁইয়ের দুই পাশ শক্ত করে আটকানো হয়।
আর বর্তমান বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই চলনবিলের চাঁই বিক্রির জন্য প্রসিদ্ধ চাঁচকৈড়, কাছিকাটা, চাটমোহর রেল বাজার, ছাইকোলা, নওগাঁ, মির্জাপুর, সলঙ্গাসহ ১৫ থেকে ২০ টি হাটে সদ্য তৈরি নতুন চাঁই-এ ভরে উঠেছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাঁশের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারে চাঁইয়ের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে।
এদিকে চলতি বছর বর্তমান বাজারে প্রতিটি স্বাভাবিক মাপের চাঁই ৩০০ থেকে ৫০০ এবং বড় চাঁই প্রকার ভেদে ৭০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান চাটমোহর রেলবাজার হাটে আসা পার্শ্বডাঙ্গা গ্রামের কৃষক শাহজাহান আলী (৫৫)। তিনি আরো জানান, গত ৭-৮ বছরে চাঁইয়ের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। তবে বর্তমানে নিষিদ্ধ চায়না জাল বাজারে আসায় আগের চেয়ে চাঁই বিক্রি অনেকটাই কম। তারপরও চলনবিলের সৌখিন ও মৎস্য শিকারিরা চাঁই কিনে বাড়ি ফিরছেন।
শুধু তাই নয় চলনবিল এলাকায় তৈরি চাঁইয়ের চাহিদা থাকায় বর্ষা মৌসুমে চলনবিল এলাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে যেমন নোয়াখালি, ময়মনসিংহ. গাইবান্দাসহ স্থানের পাইকাররা কিনে ট্রাক ভর্তি করে নিয়ে যাচ্ছেন।
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থেকে আসা চাঁই কেনার বেপারি আব্দুস সালাম জানালেন, আমি চলনবিল অঞ্চলে তৈরি চাঁই, খোলসুন, ধুন্দি, ভাইর, বিত্তিসহ নানা রকমের মাছ শিকারের উপকরন, তাড়াশের নওগাঁ, চাটমোহর রেল বাজার ও ছাইকোলা, গুরুদাসপুরের চাঁচকৈড়, নয়াবাজার হাট থেকে কিনে পাইকারি বিক্রি করে থাকি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com
Raytahost Facebook Sharing Powered By : Raytahost.com