নগরীজুড়ে গত কয়েকদিন থেকে নিজের শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিক্রি করে পরিবারের সদস্যদের দায়ভার নেওয়ার পোস্টার লাগাচ্ছেন সাইফুল ইসলাম (২৩) নামের এক যুবক।
গত পাঁচদিন ধরে নগরীর ব্যস্ততম আমতলার মোড়, শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজের মধ্যে, বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কে লাগানো এমন পোস্টার নিয়ে সুশীল সমাজের মধ্যে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে।
দেয়ালে দেয়ালে সাইফুলের লাগানো পোস্টারে লেখা রয়েছে, ‘বেকারত্বের কারণে শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিক্রি করে পরিবারের সদস্যদের দায়ভার কিছুটা মেটাতে চাই। যেকোনো একটা চাকরি পেলে এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিতাম না’। সাইফুল ইসলামের বাড়ি বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার বিবিচিনি ইউনিয়নের দেশান্তরকাঠি গ্রামে। তার পিতার নাম মোজাহার খান।
তবে সাইফুলের এ পোস্টার নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক নগরবাসী বলেন, সত্যি: নাকি ভাইরাল হয়ে জনসাধারণের মনে দয়ার সৃষ্টি করে সুবিধা আদায় করতে এ বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে তা খতিয়ে দেখা উচিত।
সাইফুল ইসলাম বলেন, ২০১৩ সালে বেতাগী থেকে দাখিল, ২০১৫ সালে চরমোনাই মাদরাসা থেকে আলিম এবং একই মাদরাসা থেকে ২০১৯ সালে ফাজিল পাস করেছি। এরপর অনেক খোঁজাখুঁজি করেও কোনো চাকরি পাইনি। শেষে বরিশালে সাতদিন দিনমজুরের কাজ করেছি।
সাইফুল বলেন, আমাদের পরিবারে আমার বাবা, মা, তিন ভাই, বোন ও আমার স্ত্রী রয়েছে। বোনকে বিয়ে দেয়া হয়েছে, তিন ভাই তাদের সংসার নিয়েই থাকে। বাবা ঢাকায় গার্মেন্টেসে চাকরি করতো, পরে বেতাগীতে কৃষি কাজ করতো। এরমধ্যে বাবা প্রায় আট লাখ টাকার দেনায় পরে যান। এখন বাবার চিকিৎসার টাকাও জোগাড় করতে পারছি না। একবার আমি আত্মহত্যার চেষ্টাও করেছিলাম।
সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, বর্তমানে আমি আমতলার মোড়ের এক বন্ধুর বাসায় থাকছি। চাকরির জন্য অনেক জায়গায় গিয়েছি কিন্তু চাকরি পাচ্ছিনা। আর এসব আমি ভাইরাল হওয়ার জন্য করছি না। আমার একটা চাকরি হলে শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিক্রির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতাম না।
সচেতন নাগরিক কমিটির জেলা সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা বলেন, বেকারত্বের হার দিন দিন বাড়ছে। যে ছেলেটি শরীরের অঙ্গ বিক্রির পোস্টার লাগাচ্ছে, সেটার যদি খোঁজ নিয়ে সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে বরিশালের শিল্পপতিদের কাছে সাইফুলের জন্য একটি চাকরির ব্যবস্থা করার জন্য জোর দাবি করছি।