শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৫০ অপরাহ্ন

ই-পেপার

ঝুঁকিতে খাদ্য অধিদপ্তরের ৫ হাজার কর্মকর্তা কর্মচারী সহ ডিলার ও পরিবহন ঠিকাদাররা

প্রতিনিধির নাম:
আপডেট সময়: শুক্রবার, ১৯ জুন, ২০২০, ৯:২৯ পূর্বাহ্ণ

অমিত হাসান ঢাকা জেলা প্রতিনিধি:

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি নিয়েই মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন খাদ্য অধিদপ্তরের ৫ হাজারেরও বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী। তারা প্রতিদিন বিভিন্ন খাদ্যগুদাম থেকে ওএমএসের চাল, জিআর, ভিজিএফ, ও ডেসপাস, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিসহ অন্যান্য ত্রাণের চাল বিতরণ করছেন। এ ছাড়া কৃষকের কাছ থেকে ধান, চাল ও গম সংগ্রহের কাজটিও তাদের করতে হচ্ছে। কাজের ধরন অনুযায়ী তাদের শারীরিক দূরত্বও বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন এসব খাদ্যকর্মী। অথচ তাদের জন্য ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রীরও (পিপিই) ব্যবস্থা করা হয়নি। ইতোমধ্যে খাদ্য ভবনে একজন দারোয়ান ও তেজগাঁওয়ের একজন চালের ডিলার করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। ফলে অন্যদের মধ্যে করোনা আতঙ্ক আরও বেড়েছে। এমন অবস্থায় তারা প্রয়োজনীয় পিপিই চেয়েছেন খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে।

 

কর্মকর্তারা জানান, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলে মাঠপর্যায়ে কর্মরত প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পাশাপাশি ডিলার ও পরিবহন ঠিকাদাররা কর্মস্থলেই রয়েছেন এবং কাজ করছেন। ছুটি ঘোষণার পর সরকার সারাদেশে দরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ শুরু করে। এতে গুরুত্ত্বপূর্ণ ভভূূমিকা পালন করছেন মাঠপর্যায়ের খাদ্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, ডিলার ও পরিবহন ঠিকাদাররা সারাদেশের জেলা, উপজেলায় ৬২১টি এলএসডি, ১৩টি টিসিডি, দুটি বন্দর, একটি সিসিডিআরে কাজ করছেন প্রায় ৩ হাজারের বেশি খাদ্য পরিদর্শক (ওসি, এলএসডি), উপখাদ্য পরিদর্শক ও সহকারী উপখাদ্য পরিদর্শক।

 

প্রত্যেক জেলা ও উপজেলায় অবস্থিত খাদ্যগুদাম থেকে প্রতিদিন ত্রাণের চাল সরবরাহ করা হচ্ছে। ডিলাররা প্রত্যেক গুদাম থেকে ট্রাকে ট্রাকে চাল নিয়ে যাচ্ছেন। সেই চাল হস্তান্তর করছেন গুদামে কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। অথচ অন্যান্য সার্ভিসের ত্যাগ ও কাজের কথা প্রায়ই বলা হলেও খাদ্য কমকর্মতা-কর্মচারীদের কথা কেউ বলেন না। এতে কর্মীরা কাজের উৎসাহ পান না। মাঠপর্যায়ে কর্মরত বেশ কয়েক জন খাদ্য পরিদর্শক, সহকারী উপখাদ্য পরিদর্শকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা সার্বক্ষণিক আতঙ্কের মধ্যে কাজ করছেন। কখন করোনা আক্রান্ত হন সেই ভয় তাদের তাড়া করছে। শরীয়তপুরের একজন খাদ্য পরিদর্শক বলেন, আমাদের প্রতিদিন ১৫০-২০০ ট্রাক চালক ও তাদের সহযোগী এবং ডিলারের লোকজনের সঙ্গে কাজ করতে হয় খুব কাছে থেকে। তাদের চাল বুঝিয়ে দিতে হচ্ছে। যারা চাল নিতে আসেন তারা কেউই স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করেন না। ফলে ঝুঁকি নিয়েই তাদের সঙ্গে কাজ করতে হচ্ছে। এ ছাড়া কৃষকের কাছ থেকে ধান চাল সংগ্রহের সময়ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হয় না।

 

ঢাকা জেলার একজন সহকারী উপখাদ্য পরিদর্শক বলেন, করোনা পরিস্থিতি থেকে সহসা বের হয়ে আসার সম্ভাবনা নেই। এ অবস্থায় আমরা সার্বক্ষণিক কাজ করছি চাল বিতরণে। ইতোমধ্যে গম সংগ্রহের অভিযান শুরু হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই শুরু হবে ধান-চাল ক্রয় কার্যক্রম। ওই সময় কৃষকদের সঙ্গে কাছ থেকে কাজ করতে হবে। তখন আরও বেশি ভয় থাকবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের কোনো সুরক্ষা সামগ্রী নেই। অথচ আমরাও মাঠে থেকে কাজ করছি। বাংলাদেশ খাদ্য পরিদর্শক সমিতির মহাসচিব উত্তম কুমার দাস বলেন, আমরা মাঠের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমস্যার কথা তুলে ধরে ৫ মার্চ খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর সুরক্ষা সামগ্রী চেয়ে আবেদন করেছি। ইতোমধ্যে করোনায় আক্রান্ত খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মচারী সুরুজ মিয়া এবং তেজগাঁও খাদ্যগুদামে নিয়মিত যাতায়াতকারী ওএমএস ডিলার খোরশেদ মারা গেছেন। এর পর থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক ঢুকেছে। এটি কাটিয়ে না উঠতে পারলে সামনের দিনগুলোতে আরও কঠিন অবস্থার মুখোমুখি হতে হবে আমাদের।

 

এ বিষয়ে খাদ্য সচিব নাজমানারা খানুম বলেন, আমরা ইতোমধ্যে মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা দিয়েছি স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবাই যেন কাজ করেন। গ্লাভস ও মাস্ক ব্যবহারের কথাও বলে দিয়েছি। এই মুহূর্তে চাইলেও আমরা এগুলো ঢাকা থেকে সারাদেশে পৌঁছাতে পারব না। তা ছাড়া এগুলো কিনে দেওয়ার মতো অর্থও সরকার আমাদের বরাদ্দ দেয়নি। তাই মাঠপর্যায়ে যেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সেটি কিনে নেন, তা বলে দিয়েছি। এদিকে ডিলার সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অমিত হাসান জানিয়েছেন দেশের এই ক্লান্তি লগ্নে আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সারাদেশে যে ভাবে সকল কার্যকর্ম চালিয়ে যাচ্ছি তার জন্য সরকার আমাদের নিয়ে কোনো চিন্তা করে নাই। আমাদের ও তো পরিবার আছে আমরা মারা গেলে তাদের দায়িত্ব কে নিবে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়ে খাদ্য সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী তো বলেই দিয়েছেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা কাজ করতে গিয়ে আক্রান্ত হবেন তাদের প্রণোদনা দেওয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর