সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর ও আশপাশের সীমান্ত এলাকায় ভয়াবহ রূপ নিয়েছে মাদক ব্যবসা। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর শুরু হয় কোটি টাকার মাদকের অবাধ বেচাকেনা ও চোরাচালান। সীমান্তরক্ষী বাহিনী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার নজরদারির মধ্যেও থেমে নেই মাদক সিন্ডিকেট। সবচেয়ে সক্রিয় অবস্থানে রয়েছেন ভোমরার শ্রীরামপুর এলাকার পুরনো মাদক কারবারি আরশাদ আলী ওরফে ভোদুর ছেলে আলোচিত মাদক সম্রাট শামীম হোসেন ।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর সীমান্তে জারি করা হয় অঘোষিত রেড এলার্ট। তবুও বন্ধ হয়নি মাদকের ঢল। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সদর উপজেলার ভোমরা, হাড়দ্দহা, লক্ষ্মীদাড়ি, ঘোষপাড়া, ঘোনা-গাজীপুরসহ কয়েকটি সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন দেশে ঢুকছে ফেনসিডিল, ইয়াবা, গাঁজা, এলএসডি ও বিদেশি মদসহ নানান ধরনের মাদক। বিনিময়ে ভারতে পাচার হচ্ছে স্বর্ণ।
ভোমরা সীমান্তের শ্রীরামপুর এলাকার পুরনো মাদক কারবারি আরশাদ আলী ওরফে ভোদু দীর্ঘ দুই যুগ ধরে পরিবারসহ জড়িত এই ব্যবসায়। তার ছেলে শামীম বিজিবির হাতে মাদকসহ আটক হয় বর্তমানে জেল থেকে বেরিয়ে আবারও গড়ে তুলেছেন তার মাদক বিক্রি কিনির সেন্টিকেট। জামাই হালিম মাস্টার এলাকায় বসেই গড়ে তুলেছেন শক্তিশালী মাদক নেটওয়ার্ক। ভোমরা টাওয়ার মোড়ে তার বাসা থেকেই চালান হয় খুচরা ও পাইকারি মাদক। সহকারী দু’জনের মাধ্যমে প্রতিদিন চলে মাদক বেচাকেনা।
ভারত থেকে আসছে শত শত কোটি টাকার মাদক। বেশি মাদকের চোরাকারবার চলছে সাতক্ষীরার ভোমরা সীমান্তে সেখানে গভীর রাত পর্যন্ত প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি ও সেবন করতে দেখা যায় শ্রীরামপুর গ্রামের আরশাদ আলী ওরফে ভদু। ভদু’র ছেলে শামীম, দুই মেয়ে ও জামাই এরা সবাই পেশাদার মাদক চোরাকারবারি। ভদু ও তার ছেলে শামিম, মেয়ে লিপি খাতুন, পাপিয়া খাতুন, জামাই হালিম মাস্টার এরা সবারই পৃথক মাদকের ব্যবসার সাথে জড়িত।
এদিকে গত ৮ জুন সাতক্ষীরার ভোমরা সীমান্তের মাদক সম্রাট মাস্টার হালিমের প্রধান সহযোগী শামীম হোসেন (৩৩) কে মাদক সহ আটক করে বিজিবি। এসময় বিজিবি সদস্য ইমরান হোসেনসহ বিজিবির একটি দল এই আলোচিত মাদক সম্রাট শামিমকে মাদকের চালানসহ হাতে নাতে গ্রেফতার করে। বর্তমানে এই শামিম জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে বিভিন্ন ভুয়া ফেসবুক আইডি থেকে এই চৌকস বিজিবি সদস্য ইমরান হোসেনকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। তার উদ্দেশ্য এটাই বিজিবির এই ধরনের চৌকস সদস্যদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে তাদেরকে নিষ্ক্রিয় করতে পারলেই সে মাদকের ব্যবসা নির্দ্বিধায় করতে পারবে। অপরদিকে
ভোমরা এলাকার নবাতকাটির মাদক ব্যবসাহী কবির এর স্বামী পরিত্যক্ত পালিত মেয়ের সাথে বিজিবি-র চৌকস সদস্যকে নিয়ে অবৈধ সম্পর্কের কথা বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। অথচ মাদক ব্যবসাহী কবির এর মেয়ের সাথে কথা বলে জানা যায়, কোন বিজিবি সদস্যের সাথে তার কোন অবৈধ সম্পর্ক নেই। শামীম ও তার পরিবার আমার পিতার সাথে ব্যবসাহীক ঝামেলার কারনে আমাকে নিয়ে নানা অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে, অথচ ইমরান নামে কোন বিজিবি সদস্য কে আমি চিনিনা। অন্যদিকে শামিম সকলের সাথে সুসম্পর্ক রেখে সাতক্ষীরা জেলাসহ ঢাকা, খুলনা, যশোর, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাদক চোরাচালান করে।
এত দিন শামিম মামলা হামলা এড়াতে আওয়ামী সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে মাদক ব্যবসা চালিয়েছে। তবে এখনও থেমে নেই তার সেই ব্যবসা। রেজাউলের ছত্রছায়ায় চলছে তার এই মাদক ব্যবসা।
সদর উপজেলার গাজীপুর সীমান্ত, ভোমরা, হাড়হদ্দা ও ঘোনা সীমান্তের বিভিন্ন চোরাইপথ দিয়ে হাজার হাজার বোতল ফেনসিডিল, ভয়ংকর এলএসডি, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ, ইয়াবা, গাঁজাসহ সব ধরনের মাদক আমদানি করে আসছে বহুদিন ধরে এসব চোরাকারবারী চক্র রাতের অন্ধকারে।
জানা গেছে, পুলিশের ক্রসফায়ারের ভয়ে ভোদু এক সময় ভারতে পালিয়ে গেলেও তিন বছর আগে ফিরে এসে আবারও সক্রিয় হয়ে ওঠে। তার পরিবারের সদস্যরা এখন কোটিপতি। গড়েছেন দালান-কোঠা, কিনেছেন বিঘার পর বিঘা জমি।
এলাকাবাসীর প্রশ্ন, একাধিক মাদকের মামলার পরও কীভাবে প্রশাসনের নাকের ডগায় বসেই এত খোলামেলা ভাবে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে এই শামিম ও হালিম মাস্টার?
এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ভোমরা বন্দরের একাধিক সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী জানান, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতায় দিনদিন সীমান্তে মাদক আগ্রাসন ও কারবারিদের দাপট বাড়ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা ব্যাটালিয়ন (৩৩ বিজিবি)র অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশরাফুল হক জানান, “বিজিবি প্রতিদিন মাদকবিরোধী বিশেষ টহল পরিচালনা করে বিপুল পরিমাণ মাদক জব্দ করছে। সীমান্তে অপরাধরোধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”
সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, “ভোমরা সীমান্তের ৮ কিলোমিটার এলাকা সম্পূর্ণ বিজিবির নিয়ন্ত্রণে। পুলিশ চাইলেও সেখানে স্বাধীনভাবে অভিযান চালাতে পারে না। তবুও আমরা মাদক দমনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে জনসাধারণের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া এটি সম্ভব নয়।”
সীমান্তের মানুষ এখন প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে—এত মামলা, এত অভিযোগ, তারপরও কীভাবে বহাল তবিয়তে চলছে শামিম ও হালিম মাস্টার এবং তার সিন্ডিকেটের মাদক সাম্রাজ্য? প্রশাসনের জবাব চায় এলাকাবাসী।
এর শেষ না হলে যুব সমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে । দেশ পড়বে কঠিন সংকটে । তাই সকল মুখোশধারী শয়তানদের শাস্তি দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।