যশোরের অভয়নগর পৌর কৃষক দলের সভাপতি তরিকুল ইসলাম (৫০) হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের চার দিন পর সোমবার রাতে নিহতের বড় ভাই রফিকুল ইসলাম টুলু বাদী হয়ে দুই যুবদল নেতাসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলাটি করেন। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা ২০ থেকে ২৫ জনকে মামলার আসামি করা হয়। মামলায় রাজনৈতিক ও মাছের ঘেরের ইজারা নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে তরিকুল ইসলামকে হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এই ঘটনায় গ্রেপ্তার দুই আসামি হলেন অভয়নগর উপজেলার ডহর মশিয়াহাটী গ্রামের সুজিত বিশ্বাসের ছেলে সাগর বিশ্বাস (২৭) এবং যশোর সদর উপজেলার রামনগর উপজেলার সিদ্দিক খানের ছেলে ফিরোজ খান (৩৫)। পুলিশ জানিয়েছে, রাজনীতিক পূর্ববিরোধ ও মাছের ঘেরের ইজারা নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে তরিকুল ইসলামকে হত্যা করা হয়েছে বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন বাদী। মামলার অপর ৯ আসামি হলেন হত্যাকাণ্ডের সংঘটিত হওয়া বাড়িটির মালিক ও মামলার প্রধান আসামি বিরেশ্বর বিশ্বাসের ছেলে পিন্টু বিশ্বাস (৪৫)। এ ছাড়া মশিয়াহাটী গ্রামের দিলীশ্বর বিশ্বাসের ছেলে দিনেশ (৩৫), কার্তিক বিশ্বাসের ছেলে দুর্জয় (২৫), নিরঞ্জন বিশ্বাসের ছেলে অজিত (২৭), বিকাশ বিশ্বাসের ছেলে পল্লব (৩৫), বিনয়ের ছেলে গজো ওরফে পবন বিশ্বাস (২৮), নিরাপদ মণ্ডলের ছেলে অতীত মণ্ডল (৪০), অভয়নগরের জাকির কোরাইশীর ছেলে আকরাম আক্তার কোরাইশি পাপ্পু (৩৫), বেনজীর হোসেনের ছেলে মাসুদ পারভেজ সাথী (৪০)। হত্যাকাণ্ডের পর উপজেলার ডহর মশিয়াহাটী গ্রামের বাড়েদা পাড়ায় বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় থানায় আরও একটি মামলা হয়েছে। ডহর মশিয়াহাটী গ্রামের সুশান্ত বিশ্বাসের স্ত্রী কল্পনা বিশ্বাস বাদী হয়ে একই দিন মামলাটি করেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। মামলায় অজ্ঞাত ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এদিকে তরিকুল ইসলামের হত্যা মামলায় দুই যুবদল নেতার নাম থাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও থানার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের এক অংশের নেতা-কর্মীরা। সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে নওয়াপাড়া বাজার থেকে পৌর বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান জনির নেতৃত্বে এই বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। পরে তাঁরা থানার সামনে অবস্থান নিয়ে প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ করেন। মামলার এজাহারে থাকা দুই আসামি যুবদল নেতা আকরাম আক্তার কোরাইশ পাপ্পু ও মাসুদ পারভেজ সাথীর নাম প্রত্যাহার করার দাবি জানান মঙ্গলবারের মধ্যে দুই নেতার নাম মামলা থেকে প্রত্যাহার না হলে আগামীকাল বুধবার থেকে অভয়নগরে অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণাও দেন বিক্ষোভকারীরা। কর্মসূচি নেতৃত্ব দেওয়া সম্প্রতি পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান জনি বলেন, ‘কৃষক দল নেতা তরিকুল ইসলাম ত্যাগী নেতা। তাঁকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় আমরা ব্যথিত। হত্যার প্রতিবাদে ঘটনার দিন বিক্ষোভ মিছিল বের করি। সেই মিছিলে ছিলেন যুবদল নেতা আকরাম আক্তার কোরাইশ পাপ্পু ও মাসুদ পারভেজ সাথী। অথচ রাজনীতিক উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই দুই নেতার নাম এজাহারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডে কারা জড়িত, তা পরিষ্কার।’ আসাদুজ্জামান জনি আরও বলেন, ‘যেহেতু পাপ্পু ও সাথী আসন্ন উপজেলা ও পৌর যুবদলের সম্মেলনে সভাপতি সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন। তাই বিএনপির একটি পক্ষ তরিকুলের ভাইদের প্রভাবিত করে এজাহারে নাম দিয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেলের মধ্যে এই দুই নেতার নাম প্রত্যাহার না হলে বন্দর নগরী নওয়াপাড়া, অভয়নগর উপজেলা অচল করে দেওয়া হবে।’ গত বৃহস্পতিবার ২২মে সন্ধ্যায় ডহর মশিয়াহাটী গ্রামের একটি বাড়িতে কৃষক দল নেতা তরিকুল ইসলামকে কুপিয়ে এবং গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটে। হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে একদল লোক ডহর মশিয়াহাটী গ্রামের অন্তত হিন্দু বাড়িতে লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ ছাড়া উপজেলার সুন্দলী বাজারে দুটি দোকানে অগ্নিসংযোগ এবং চারটি দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে। এ সময় আহত হন অন্তত ১০ জন। অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আলিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, তরিকুল ইসলাম হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। এরই মধ্যে দুজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ডহর মশিয়াহাটীর গ্রামের বাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। তবে এ মামলায় এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।