সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ১২:২৮ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

সিংড়ায় নদী খাল শুকিয়ে মাছ শিকারের মহা উৎসব বিলুপ্তির পথে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণি

মোঃ এনামুল হক বাদশা, সিংড়া(নাটোর)প্রতিনিধি:
আপডেট সময়: বৃহস্পতিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২৪, ১১:৩১ পূর্বাহ্ণ

মৎস ভান্ডার নামে খ্যাত দেশের সর্ব বৃহৎ বিল চলনবিল। চলনবিলের বিল কেন্দ্রিক উপজেলা গুলোর মধ্যে একটি নাটোর জেলার সিংড়া উপজেলা। বর্ষাকালে এই উপজেলার বেশিরভাগ জায়গায় পানি থাকে। তাই এই উপজেলার বর্ষাকালে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ দেখা য়ায়। মা ও পোনা মাছসহ সকল প্রজাতির মাছ রক্ষায় প্রশাসনের ব্যপক নজরদারি লক্ষ করা যায়। গত অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু করে নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহের মধ্যে উপজেলার সকল জায়গার পানি শুকিয়ে যায়। শুধু বিলের ছোট বড় নদী খালগুলোতে পানি দেখা যায়। ভরা বর্ষায় মৎস শিকারিদের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া মাছ ও বিভিন্ন জলজ প্রাণির শেষ আশ্রয়স্থল হয়ে দাড়ায় উপজেলার সকল নদী ও খাল। কিন্তু ঐ সব নদী খাল অসাধু মৎস শিকারিরা অনেক টাকা দিয়ে ইজারা নেয় বা নিজের সম্পদ মনে করে। নদী খাল বাঁশ বিভিন্ন গাছের ডাল ও কচুড়ি পানা দিয়ে ভরে রেখেছে মাছ ও বিভিন্ন জলজ প্রাণির শেষ আশ্রয়স্থল যেন মরণ ফাঁদ হয়ে উঠেছে। নদী ও খাল অক্টবর মাসের শেষ থেকে দখল হওয়ার কারনে নদী খাল ব্যবহার করতে পারছেনা অনেকে। উপজেলার তাজপুর, ডাহিয়া, চৌগ্রাম ও কলম ইউনিয়ান সহ বিভিন্ন নদী খাল এবং পৌর এলাকার ৩নং ওয়ার্ডের সুইজগেইট থেকে শুরু করে দক্ষিণ দমদমা দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী, জোলারবাতা থেকে বড়িয়া হয়ে বয়ে যাওয়া খাল এবং দক্ষিণ দমদমা জামে মসজিদের কাছে দিয়ে উত্তর দমদমার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খাল এবং বড় চওড় ও ছোট চওড় কথিত বিশাল খাস যায়গায় জলাশয় রয়েছে যার একটি শুকয়ে মাছ শিকার করছে চৌগ্রামের একটি মৎস জিবী সমিতি আর অপরটি উত্তর দমদমার দুটি মসজিদ প্রতি বছর ইজারা দেয় ৬-৭ (ছয়-সাত) লক্ষ টাকায়। চৌগ্রাম ইউনিয়নের পমবড়িয়া গ্রামের রইচ উদ্দিন টুটুল বলেন জলারবাতা থেকে বয়ে যাওয়া খালটি দিয়ে আমাদের বর্ষাকালের যাতায়াত। কিন্তু খাল দখল হওয়ায় নৌকা চলাচল করতে পারেনা। এতে চলাচলে ব্যঘাত গটে ও বিভিন্ন ধরনের মালামাল, কৃষিপন্য ও অসুস্থ্য রুগী উপজেলা হাসপাতালে নিতে অনেক দূর্ভোগ পোহাতে হয়। নাম না প্রকাশের শর্তে বড়িয়া গ্রামের একজন নৌকার মাঝি বলেন, “ এমনভাবে খাল দখল থাকে যে নৌকা চালানো যায় না। কষ্ট করে নৌকা চালাতে গেলে অনেক হুমকী ও মারধোর করে দখলদাররা।” শুধু বড়িয়া নয় এমন চিত্র সকল নদী ও খালের। বর্তমানে শুরু হয়েছে নদী খাল শুকানোর হিরিখ ।কেউবা নদী খাল শুকিয়ে মাছ শিকার করছে কোউবা শুকানোর জন্য বেড়া দিচ্ছে। স্বরজমিনে ঘুরে দেখা যায় দক্ষিণ দমদমায় নদীতে বেড়া দিয়েছে ও বিভিন্ন জায়গায় শুকানো হচ্ছে। শুকিয়ে মাছ শিকার কতটা অমানবিক তা না দেখলে বোঝার উপায় নেই। শুকিয়ে মাছ শিকার করতে গিয়ে মারা যাচ্ছে কাকড়া, শামুক, ঝিনুক, সাপ, কচ্ছপসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণি। দেশি প্রজাতির অনেক মাছ সারা বছরই ডিম দেয়। এসব মা মাছ ধরা পড়ছে। কাদামাটির নিচে লুকিয়ে থাকা মাছ ধরার জন্য কাদাতে লবন ও বিভিন্ন কিটনাশক ব্যবহার করছে। এতে কাদা পানিতে লুকিয়ে থাকা ছোট মাছ, মাছের ডিম ও জলজ প্রাণির বাঁচার কোন সুযোগ থাকেনা। একদিকে দেশি প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণি বিলুপ্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে কিটনাশক দেওয়া মাছ কিনে প্রতারণার শিকার হচ্ছে ক্রেতারা।

পরিবেশ ও প্রকৃতি আন্দোলনের সভাপতি এমরান আলী রানা বলেন, “সিংড়ায় যেভাবে শুকিয়ে মাছ শিকার ও জলজ প্রাণি নিধন করা হচ্ছে । অদূর ভবিষ্যতে মাছ ও জলজ প্রাণি বিভিন্ন প্রজাতি খুজে পাওয়া খবই কষ্টসাধ্য হবে। তিনি আরও বলেন নদী খালে আশ্রয় নেওয়া মাছ ও জলজ প্রাণি জগৎ এর উত্তরসরী তাদেরর রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।

নদী খাল শুকিয়ে মাছ শিকার ও জলজ প্রাণি নিধনের ব্যপরে জানতে চাইলে সিংড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহাদত হোসেন বলেন, দেশি প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণি রক্ষায় আমাদের মোবাইল কোট অব্যহত রয়েছে। যারা নদী ও খাল বিল শুকিয়ে মাছ স্বীকার করার চেষ্ঠা করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সিংড়ার সকল নদী খাল দখল মুক্ত করে মাছ ও জলজ প্রাণি শুকনো মৌসুমে অভায় আশ্রম তৈরির মাধ্যমে প্রজনন বৃদ্ধি ও বিলুপ্তির হাত থেকে বাচাতে প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থ্যা নেবে এমনটি প্রত্যাশা সচেতন নাগরিক সমাজের।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর