স্টাফ রিপোর্টার:
বারবার চেষ্টা সত্ত্বেও দুই শিশুকে বাবার বাড়িতে ঢুকতে না দেওয়ার বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন আমলে নিয়ে শনিবার (৩ অক্টোবর) দিবাগত রাতে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ বসেছে। সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল কেএস নবীর দুই নাতিকে বাড়িতে ফিরিয়ে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ধানমন্ডি থানার ওসিকে এই নির্দেশ বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বিচারপতি আবু তাহের মোহাম্মদ সাইফুর রহমানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন। পরে আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। শনিবার রাত ১২টায় বেসরকারি টেলিভিশন একাত্তর টিভির ‘একাত্তর জার্নাল’ এ ঘটনাটি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রচারিত হয়। প্রতিবেদনে শিশু দু’টির সঙ্গে তাদের ফুফু, সাংবাদিক রেজওয়ানুল হক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ভার্চুয়ালি আলোচনায় যুক্ত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি চলাকালীন বিষয়টি নজরে আসে বিচারপতি আবু তাহের মোহাম্মদ সাইফুর রহমানের। প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে মাঝরাতে হাইকোর্টের বেঞ্চ বসিয়ে এ আদেশ দেন বিচারপতি আবু তাহের মোহাম্মদ সাইফুর রহমানের আদালত।
আদেশের বিষয়ে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘আমি বাচ্চা দু’টির অধিকার সম্পর্কে কথা বলতে একাত্তর জার্নালের লাইভে যুক্ত ছিলাম। ওই লাইভ অনুষ্ঠান চলাকালে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত (সুয়োমটো) হয়ে আদেশ দেন। পরে আদেশের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে বিস্তারিত জানতে পারি। আদালত তার আদেশে বলেছেন, ধানমন্ডি থানার ওসিকে ওই দুই শিশুকে তাদের বাসায় (দাদা বাড়ি) রাখতে, শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং আদেশ বাস্তবায়ন করে সকালে প্রতিবেদন দাখিল করতে।’ জানা গেছে, রাজধানীর ধানমন্ডির একটি চারতলা বাড়ির মালিক সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল কেএস নবী। উত্তরাধিকার সূত্রে ওই বাড়িতে গত কয়েকদিন ধরে ঢুকতে পারছে না কেএস নবীর ছোট ছেলে সিরাতুন নবীর দুই ছেলে কাজী আদিয়ান নবী ও কাজী নাহিয়ান নবী। এর আগে গত ১০ আগস্ট সিরাতুন নবীর মৃত্যুর পর তার দুই ছেলেকে গত কয়েকদিন আগে বাসা থেকে বের করে দেন ওই শিশুদের চাচা কাজী রেহান নবী। আগেই শিশু দু’টির বাবা-মায়ের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর বাবার মৃত্যুর পর শিশু দুটি কিছুদিনের জন্য তার মায়ের আশ্রয়ে থাকে। এরপর মায়ের কাছ থেকে নিজ বাবার বাড়িতে ফেরার চেষ্টা করে ওই দুই শিশু। কিন্তু তাদের বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হয় না। কয়েকবার চেষ্টা করেও শিশু দুটি ওই বাসায় ঢুকতে পারেনি। বিষয়টি ধানমন্ডি থানাকে জানানো হলেও পুলিশের কথা আমলে নেননি শিশুদের চাচা ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কাজী রেহান নবী।
শিশু দুটির ফুফু (কেএস নবীর বোনের মেয়ে) মেহরীন আহমেদ বলেন, ‘বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য ওদের বাবা-মা আলাদা থাকতেন। ওরা ওদের বাবার সঙ্গেই দাদার বাড়িতে থাকতো। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর শিশু দুটি খুব বেশি বিষন্ন হয়ে পড়ে এবং ওদের মায়ের কাছে কিছুদিন থেকে আবার গতকাল বাড়িতে ফেরে। কিন্তু তারা বাসার গেট খোলেনি। আমরা পরিবার থেকে যোগাযোগ করি। শিশুদের বড় চাচা কাজী রেহান নবীকে ফোন করি। কিন্তু তিনি অসুস্থতার অজুহাতে শিশুদের পরে বাড়িতে আসতে বলেন। এরপর আমরা ধানমন্ডি থানায় বিষয়টি জানাই। এরপর পুলিশ গিয়ে তাকে ফোন করে অনুরোধ করে। ধানমন্ডি থানার ওসি ইকরাম হোসেন মিয়া আমাদের পরেরদিন যেতে বলেন। কিন্তু পরের দিন বাসায় গিয়ে শিশুরা দেখলো আগের দিন তারা বাড়ির কম্পাউন্ডে ঢুকতে পারলেও পরের দিন বাইরের দরজাটি বন্ধ ভেতরে কুকুর ছেড়ে দেওয়া থাকে। এরপর আমরা আবার পুলিশকে জানাই।
কিন্তু পুলিশ বললো- আমরা কিছু করতে পারবো না আপনারা কোর্টের আশ্রয় নেন।’ তিনি আরও জানান, বাড়িটি এখনো কেএস নবীর নামে। সেদিক থেকে দেখলে এই শিশু দুটিও ওই বাড়ির উত্তরাধিকার। আর শিশুদের বাবার মৃত্যুর পর তার ব্যাংক-ব্যালেন্স দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারই বড় ভাই রেহান নবী।