দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় কৃষি খাতের উন্নয়নে পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) কৃষি খাতে ২০৫টি নতুন প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পুরো কৃষি খাত মিলে (কৃষি, খাদ্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ) প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট প্রাক্কলিত ব্যয় হতে পারে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, কৃষি খাতের বরাদ্দহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্পগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের প্রকল্প রয়েছে দুটি। এ ছাড়া বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের তিনটি, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ১৭টি, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের একটি, পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের চারটি, ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউটের দুটি, বরেন্দ্র বহুমুখী কর্তৃপক্ষের তিনটি, কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের ১৫টি, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ৩৩টি, বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সির একটি, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের পাঁচটি, মৃত্তিকা উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের দুটি, তুলা উন্নয়ন বোর্ডের একটি, জাতীয় কৃষি প্রশিক্ষণ একাডেমির একটি এবং গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউটের একটি প্রকল্প রয়েছে। কমিশন সূত্রে আরও জানা যায়, কৃষি খাতের সব সেক্টরের মধ্যে বনের অননুমোদিত নতুন প্রকল্প রয়েছে ১৭টি।
এ ছাড়া মৎস্য সাব-সেক্টরে রয়েছে ২৬টি নতুন প্রকল্প। প্রাণিসম্পদ সাব-সেক্টরে প্রকল্পের সংখ্যা ২৩টি এবং সেচ সাব-সেক্টরে ২৭টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া খাদ্য সাব সেক্টরে নতুন প্রকল্পের সংখ্যা ১৮টি। এডিপিতে বরাদ্দহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্পের তালিকায় এসব প্রকল্প যুক্ত করা হয়েছে। তবে ঢালাওভাবে প্রকল্পগুলো অনুমোদন পাবে না। আগামী অর্থবছরের শুরুতেই অর্থাৎ আসছে জুলাই মাসের শেষ দিকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে এসব প্রকল্পের গুরুত্ব নির্ধারণ করা হবে। প্রকল্পগুলো প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় এই তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হবে। যেসব প্রকল্প প্রথম গুরুত্বের তালিকায় থাকবে সেগুলো আগে প্রক্রিয়াকরণ করে অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হবে। প্রকল্পের গুরুত্ব নির্ধারণে করোনা ভাইরাস মোকাবিলার বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে বলে জানান তিনি। কৃষি খাতের গুরুত্ব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) এবং বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির সাবেক সভাপতি ড. শামসুল আলম বলেন, করোনার এই চরম দুর্দিনে বন্ধু হিসেবে দাঁড়িয়েছে কৃষি খাত। ব্যাপক বোরো ধান চাষ হওয়ায় খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা করতে হচ্ছে না। মূল্যস্ফীতিও অসহনীয় পর্যায়ে যায়নি। করোনার প্রভাবে শিল্প ও সেবা খাত পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলেও কৃষি খাত কিন্তু চালুই ছিল। করোনা ভাইরাস কৃষি খাতের গুরুত্বকে বুঝিয়ে দিয়েছে। তাই আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি হতে যাওয়া অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়ও বিশেষ গুরুত্ব পচ্ছে স্বাস্থ্য ও কৃষি খাত। সেইসঙ্গে আগামী বাজেটেও এই দুই খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
আগামী অর্থবছরের জন্য উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নতুন প্রকল্প হচ্ছে অনাবাদি পতিত জমি ও বসতবাড়ির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতে সবজি ও ফলচাষ জোরদার করা। এটি বাস্তবায়নে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। এ ছাড়া সিলেট অঞ্চলে আধুনিক প্রযুক্তির বিস্তার, পতিত জমিতে চাষাবাদ ও শস্য বহুমুখীকরণ চর্চার মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প। এটিতে ব্যয় হবে ২২২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এ ছাড়া উত্তরবঙ্গের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক এবং অনগ্রসর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কৃষি সহায়তা ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৭৬ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৬ হাজার ৬২৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এবার ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপিতে ১ হাজার ৭৫৮ কোটি ৫৯ লাখ টাকা বাড়িয়ে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৩৮২ কোটি ১২ লাখ টাকা।
#লেখক: মোঃ নাজমুল হুদা
সাংবাদিক ও সাবেক ছাত্রনেতা: