চৌহালী সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলাধীন এনোয়েতপুরের স্থল ইউনিয়নে যমুনা নদীতে নৌকাডুবির ঘটনা নদীর পাড়জুরে চলছে শোকর মাথন। মঙ্গলবার দুপুরে প্রবল ঘূর্ণাবর্ত্য ও প্রবল ঢেউয়ের সাথে ধাক্কা খেয়ে যাত্রীবাহী নৌকাটি হঠাৎ ডুবে যায়। এতে ঘটনাস্থলে তিন বছর বয়সের এক শিশু, ওয়েলডিং মিস্ত্রি ও দিনমুজুর বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিখোঁজ হন আরও প্রায় ৩০ জন যাত্রী। নিহতদের মধ্যে পাষান আলী (৬৫) নামে বেলকুচি উপজেলার গয়নাকান্দি গ্রামের অধিবাসি ধানকাটার শ্রমিক ও শেখ কামাল (৪০) টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার সুবর্ণতলী এলাকার বাসিন্দা বলে পরিচয় জানা গেছে। শিশুটি অজ্ঞাত পরিচয়ের। তার মা-বাবাও নৌকা ডুবিতে নিখোঁজ রয়েছেন বলে জানা গেছে। স্থল ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের সদস্য আবদুন নুর নিহতের ঘটনা নিশ্চিত করে জানান, মঙ্গলবার দুপুর একটার দিকে এনায়েতপুর থানার অদুরর ঘাট থেকে জেলার চৌহালী উপজেলা সদরের দিকে যাত্রী পরিবহনকারী শ্যালো ইঞ্জিন চালিত নৌকাটি ছেড়ে যায়।
নৌকাটিতে ধান কাটার শ্রমিক শ্রেনীর লোকজনই বেশী ছিলেন। ধানকাটার শ্রমিকরা টাঙ্গাইলের করটিয়ায় যাবার কথা। যাবার পথে দুপুর পৌনে ২ টার দিকে যমুনার উল্লেখিত স্থলচর নামক স্থানে নৌকাটি প্রবল ঘূর্ণাবর্ত্য ও ঢেউয়ের কবলে পড়ে। নৌকাটি ডুবে দু’জন মারা যান। নৌকার মাঝি ইব্রাহীম হোসেন সহ প্রায় ৩৫ জন যাত্রী সাঁতরে উঠতে সক্ষম হলেও নারী ও পুরুষসহ কমপক্ষে আরও প্রায় ৩০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। এদিকে, এনায়েতপুর থানার ওসি মোল্লা মাসুদ দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌছে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন। ওসি রাশেদুল ইসলাম বিশ্বাস প্রতিবেদককে জানান, এনায়েতপুর থেকে ৮০/৯০জন যাত্রী নিয়ে নৌকাটি চৌহালীর দিকে যাওয়ার পথে স্থলচর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এক শিশু, ওয়েলডিং মিস্ত্রি ও এক বৃদ্ধের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। দুর্ঘটনা কবলিত নৌকার বেশ কিছু যাত্রিকে উদ্ধার করে স্থলচর বাজারে রাখা হয়। যাত্রিদের বেশিরভাগ ধান কাটার শ্রমিক। ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ নিখোজ যাত্রিদের উদ্ধারে কাজ করছে।
আজ বৃহস্প্রতিবার সকালে উপজেলার বিভিন্ন চর থেকে আর ৪জনের মৃতদেহর সন্ধান মেলে। প্রসঙ্গত: করোনায় চৌহালী উপজেলা লকডাউন ও গণপরিবহন বন্ধ থাকায় স্থানীয় প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে একটি দালাল চক্র পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে এনায়েতপুর থানার অদুর বেরিবাঁধ ঘাট থেকে শ্যালো ইঞ্জিন চালিত নৌকায় অবৈধভাবে যাত্রী চৌহালী ও টাঙ্গাইল পারাপার করছে। নৌকায় যমুনা পাড়ি দিয়ে প্রতিদিনই শত শত মানুষ ঢাকা ও নারায়নগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, বঙ্গবন্ধু সেতুর উভয় পাড়সহ বেলকুচি, চৌহালী ও এনায়েতপুর থানা এবং নৌ-পুলিশ এসব বিষয় অবগত থাকলেও রহস্যজনক কারনে শুরু থেকেই নিশ্চুপ থাকেন। সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার স্থলচরে যমুনায় আনুমানিক ৭৩ জন যাত্রী নিয়ে নৌকা ডুবির ঘটনায় খাসকাউলিয়া আজিমুদ্দি মোড় ও ঘুসুরিয়া থেকে আরো ৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। এ দিয়ে ৯ জনের লাশ উদ্ধার হলো। এখনো ১০ জন নিখোঁজ রয়েছে। ৫৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।নিখোজ ব্যক্তিদের সন্ধ্যানে যমুনার পাড়জুরে চলছে শোকের মাথন।
চৌহালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেওয়ান মওদুদ আহমেদ ও প্রত্যক্ষ দর্শীরা জানান, মঙ্গলবার দুপুরে এনায়েতপুর ঘাট থেকে ইব্রাহিম মাঝির ইঞ্জিন চালিত একটি নৌকা চৌহালীতে যাবার পথে স্থলচর এলাকায় পৌছলে প্রচন্ড বাতাসের কবলে পড়ে। তখন ৭৩ জন যাত্রী নিয়ে নৌকাটি যমুনায় ডুবে যায়। স্থানীয়রা ৫৪ জনকে জীবিত ও ৫ জনের লাশ উদ্ধার করে। এর মধ্যে ৩ জনের লাশ স্থল চর, এক জনের জোতপাড়া ও আরেক জনের লাশ কুকুরিয়া এলাকা থেকে উদ্ধার করে।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকালে আজিমুদ্দি মোড় এলাকা থেকে ২ জন, স্থলচর ১ জন ও খাষপুকুরিয়ার ঘুসুরিয়া ১ জনের লাশ নদীতে ভেসে উঠে তারা বিভিন্ন বয়সের এলাকাবাসীর সহযোগীতায় উদ্ধার করে পুলিশ। ধারনা করা হচ্ছে বাকি নিখোঁজ যাত্রীদেরও সলিল সমাধী হয়েছে। এ ঘটনায় জীবিত উদ্ধার হওয়া যাত্রীরা জানিয়েছে, তারা শাহজাদপুর ও বেলকুচি উপজেলার শ্রমজীবি মানুষ। সবাই টাঙ্গাইলের করটিয়া ও মির্জাপুরে ধানকাটার জন্য যাচ্ছিল। নৌকায় ধারন ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী তোলায় এই নৌকা ডুবির জন্যও অনেকটা দায়ী।
এছাড়া সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহমেদ জানান, ঈদের পরে এমন ঘটনায় পুরো জেলা বাসী শোকাহত। নিহতের পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। আহতদের সহায়তা দেয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।