সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৮ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

‘আমার ছেলের নাম দিয়ে প্রতারণা করা হচ্ছে, অ্যাকশন তো নেবই’

প্রতিনিধির নাম:
আপডেট সময়: বৃহস্পতিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২০, ৮:০৭ অপরাহ্ণ

অনলাইন ডেস্ক:আমার ছেলে অনিক নাকি একজন ডিরেক্টরকে ফোন দিয়ে বলেছে, ‘আমি ববিতার ছেলে, আমি সাংবাদিক আপনার একটা ইন্টারভিউ করতে চাই।’ কী অদ্ভুত কথা! আমার ছেলে কানাডার অন্টারিওতে পড়াশোনা শেষ করে জব করছে। ক’দিন পরেই পিএইচডি শুরু করবে, আর সে নাকি বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের পরিচালকদের ইন্টারভিউ করবে… গলার স্বরে বিস্ময় মিশিয়ে কথাগুলো বলছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অভিনেত্রী ফরিদা আক্তার পপি, যিনি চলচ্চিত্র পর্দায় ববিতা হিসেবেই পরিচিত।

সাংবাদিক পরিচয় দিয়েই ইন্টারভিউ করতে চাইল? এমন প্রশ্নের উত্তরে ববিতা বলেন, ‘এক্স্যাক্টলি।’ তিনি বলেন, ‘আমার নামে অসংখ্য ফেসবুক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। একাধিক অ্যাকাউন্ট দিয়ে কী যে করছে, কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। আমার বোন চম্পার নামেও অনেকগুলো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট রয়েছে। আমি বারবার এসব বন্ধ করতে বলেছি, বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় কথা বলেছি। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। যখন এবার আমার ছেলেকে জড়ানো হলো, এটা আসলে অসহনীয়- আমি তো এবার আইনি অ্যাকশন নেবই।’

বিভিন্ন সময় দেশের গণমাধ্যমগুলোতে খবর এসেছে, ববিতার নামে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে কে বা কারা চালাচ্ছে। আদতে তাঁর নামে কোনো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নেই। এরপর ছোট বোন চিত্রনায়িকা চম্পার নামেও প্রচুরসংখ্যক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে কে বা কারা চালাচ্ছে, আদতে চম্পা এসব ব্যবহার করেন না।

জনপ্রিয় অভিনেত্রী ববিতা বলেন, ‘বেশ কয়েকজন পরিচালককে আমার ছেলের নামে ফেসবুক আইডি খুলে নক দেওয়া হয়েছে। তারপর ফোন নম্বর নিয়ে কথাও বলেছে। কেউ যদি বলে আমি ববিতার ছেলে অনিক, তাহলে নিশ্চয়ই মানুষজন তো সাড়া দেবেই। অনেক প্রবীণ পরিচালক রয়েছেন, যাঁরা হয়তো সোশ্যাল মিডিয়ার এই বিষয়টি খুব ভালোভাবে বোঝেন না। নিশ্চয়ই তারা এ রকম ফাঁদে পড়তে পারেন, জানি না কেউ ভুক্তভোগী হয়েছেন কি না, তবে বিষয়টি নিয়ে আমি সত্যিই চিন্তিত।’

ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে প্রতারণা করা হচ্ছে উল্লেখ করে ববিতা বলেন, ‘যারা এসব সাইবার অপরাধ করছে। তাদের কৌশলও অভিনব। যেমন একজন ডিরেক্টরের সঙ্গে অনিক পরিচয়ে কথা বলার সময় ওই ডিরেক্টরকে বলে, “আঙ্কল আম্মু বলেছিল…’, ‘আচ্ছা আঙ্কল, আপনার ছবিতে যে রিয়াজ অভিনয় করেছিল ওটার নাম কী যেন?’  ‘আচ্ছা আঙ্কল, আপনার সবচেয়ে আলোচিত ওই ছবিটার নাম কী যেন?  মানে তাঁদের পেট থেকে কথা বের করে প্রতারক কথা চালিয়ে নিচ্ছে। ভাগ্যিস, আমাকে কেউ কেউ বলেছে বলেই আমি এখন সতর্কতার সঙ্গে বিষয়টি হ্যান্ডেল করব।’

ছেলে অনিকের বিষয়ে ববিতা বলেন, ‘অনিক এখন নিজের চাকরি আর পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত। কানাডার অন্টারিওর ওয়াটার লু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছে। চাকরি করছে। শিগগিরই পিএইচডি গবেষণা করবে। এখন তার জগৎ নিয়ে ব্যস্ত। আমার ছেলেটাকে যদি ডিস্টার্ব করা হয়, তাহলে কেমন লাগে বলুন তো। এটা টু মাচ হয়ে গেছে। চম্পা ও আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নিয়ে যা তা করেছে, অনেক নিষেধ সত্ত্বেও শোনেনি তারা। এবার আমার ছেলেটাকেও বিরক্ত করছে। এটা ভারি অন্যায়।’

আইনি পদক্ষেপ নেওয়া প্রসঙ্গে ববিতা বলেন, ‘আমি একেবারেই ফেসবুক ব্যবহার পছন্দ করি না। ঠিক ওই জগতে আমি অভ্যস্ত নই, আমার ভালো লাগে না। এমন একটি জগতে আমার নাম ব্যবহার করে প্রতারণা করছে- এটা তো খুবই অনৈতিক। আমি প্রথমে নিকটস্থ থানায় যোগাযোগ করব। এরপর সাইবার অপরাধ দমন সংশ্লিষ্ট বিভাগে যোগাযোগ করে আইনি পদক্ষেপ নেব।

১৯৬৮ সালে বড় বোন সুচন্দা অভিনীত জহির রায়হানের ‘সংসার’ চলচ্চিত্রে শিশুশিল্পী হিসেবে ববিতার আত্মপ্রকাশ ঘটে। এই চলচ্চিত্রে তিনি রাজ্জাক-সুচন্দার মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন। ছবিটি মুক্তি পায়নি। চলচ্চিত্র জগতে তাঁর প্রাথমিক নাম ছিল ‘সুবর্ণা’। তিনি কলম নামের একটি টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেছিলেন সে সময়।

পরে জহির রায়হানের ‘জ্বলতে সুরুজ কি নিচে’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে গিয়েই তাঁর নাম ‘ববিতা’ রাখা হয়। ১৯৬৯ সালে ‘শেষ পর্যন্ত’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন প্রথম নায়িকা চরিত্রে। এরপর নিজেকে তিনি প্রতিষ্ঠিত করেছেন এ দেশের অন্যতম জনপ্রিয় একজন অভিনেত্রী হিসেবে। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি একাধিক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অনেক সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। ববিতা ভারত উপমহাদেশের হয়ে অস্কারজয়ী একমাত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনি সংকেত’ সিনেমায় সৌমিত্র চ্যাটার্জির বিপরীতে অভিনয় করে দেশ-বিদেশে প্রশংসা পেয়েছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর