যেই মানুষটির কণ্ঠে অনেকেই দিনের শুরু করতেন। সুবেহ সাদিকের নরম আলো আর তার আযানের সুর যেন গ্রামজুড়ে ছড়িয়ে দিত এক পবিত্র প্রশান্তি। আজ সেই কণ্ঠ আর শোনা যাবে না। তিনি ছিলেন আব্দুল গনি মোল্লা (৫৮)। গনি মোল্লা পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামের এক নিরহঙ্কার মুয়াজ্জিন এবং মাদ্রাসার নৈশপ্রহরী। সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে একদল মুখোশধারী দুর্বৃত্ত ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে তাকে। ঘটনাটি ঘটে চন্ডিপুর বাজারের সিকেবি আলিম মাদ্রাসা চত্বরে। যেখানে তিনি প্রতিদিনের মতো নৈশ প্রহরির দায়িত্ব পালন করছিলেন।
স্থানীয়রা জানান, গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়, পরে অবস্থার অবনতি হলে পাঠানো হয় বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেই মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। এই হত্যার পেছনে লুকিয়ে আছে এক ভয়াবহ সামাজিক অস্থিরতা।
জানা গেছে, গ্রাম্য বখাটে শাহাদাত হোসেন (২৫) বরিশাল থেকে একটি মেয়েকে নিয়ে এসে গোপনে বিয়ের আয়োজন করছিলেন। সে রাতে আব্দুল গনিকে জোরপূর্বক সেই বিয়ে পড়াতে চাপ দেয় শাহাদাত। কিন্তু নিয়মবহির্ভূত কিছুতে রাজি হননি গনি মোল্লা। সেই ‘না’ই হয়তো হয়ে দাঁড়ায় তার মৃত্যুদণ্ড।
ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে শাহাদাতকে আটক করা হয়েছে। তদন্ত চলছে, পুলিশ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের কারণ ও পরিকল্পনার বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে।
আজ চন্ডিপুরে শোকের ছায়া। একজন প্রহরী হয়তো অস্ত্রহীন ছিলেন, কিন্তু নীতির প্রহরায় অটল ছিলেন। তার রক্ত মাটি ছুঁয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেই রক্ত একজন মানুষ হিসেবে আমাদের বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছে। একজন মুয়াজ্জিন, এক রাত, আর এক নির্মম বিদায়ের গল্প হয়ে রইল।