আসন্ন ঈদুল আযহা (কোরবানি ঈদ) উপলক্ষে সরকারের ভিজিএফ (ঠএঋ) কর্মসূচির আওতায় গরিব ও অসহায়দের জন্য বরাদ্দকৃত চাউল বিতরণের আগেই পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার অষ্টমনিষা ইউনিয়ন পরিষদে চাউল আত্মসাতের পরিকল্পনার অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুলতানা জাহান বকুল ও ৯ জন ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, অষ্টমনিষা ইউনিয়নে মোট ১,২৭০ জন উপকারভোগীকে ঈদ উপলক্ষে ১০ কেজি করে ভিজিএফ চাউল দেওয়া হবে। অথচ বিতরণ শুরুর আগেই ৯ জন ইউপি সদস্যদের স্বাক্ষরসহ একটি পৃথক তালিকা তৈরি করা হয়েছে, যেখানে ৮০টি কার্ড বরাদ্দ দেখানো হয়েছে বিভিন্ন অফিস ও ব্যক্তি বিশেষের নামে। ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের তৈরিকৃত তালিকাটি অনুযায়ী বরাদ্দ: পিআইও অফিস ১০টি, সাংবাদিক ৫টি, মানিক টাইপিং ১০টি, গ্রাম পুলিশ ১০টি, শাহিন ৫টি, ট্যাগ অফিস ৫টি, থানা ২০টি ও পরিষদ সচিব ১৫টি মোট ৮০০ কেজি চাউল এভাবে বরাদ্দ দেখানো হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ইউনিয়ন জুড়ে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, প্রকৃত দরিদ্রদের বাদ দিয়ে একটি চক্র নিজেদের স্বার্থে চাউল আত্মসাতের চেষ্টা করছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ইউপি সদস্য বলেন, “ঈদের আগে থানা থেকে, বিভিন্ন অফিস থেকে, এমনকি রাজনৈতিক নেতারাও ঈদের বোনাস চায়। আমরা যে সামান্য ভাতা পাই, তা দিয়ে তো এসব খরচ মেটানো সম্ভব না। তাই সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ঈদ খরচ মেটাতে কিছু কার্ড বরাদ্দ রেখেছি। তবে তালিকাটা ছিল গোপনীয় এখন সেটা প্রকাশ পাওয়ায় আমরা সবাই লজ্জায় পড়ে গেছি।”
তালিকা তৈরির বিষয়টি স্বীকার করে ইউপি সদস্য রতন আলী বলেন, “চাউল বিতরণের সময় অনেক গরীব-দু:খী কার্ড ছাড়াও চলে আসে। তাদের কথা চিন্তা করে আমরা সবাই মিলে বসে কিছু চাউল আলাদা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখানে আমাদের কোনো অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না।”
ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে অষ্টমনিষা ইউপি চেয়ারম্যান সুলতানা জাহান বকুলের বক্তব্য জানার জন্য ইউনিয়ন পরিষদে তার অফিসে গেলে তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় কোনো মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. ফেরদৌস আলম বলেন, “আমার অফিসের নাম ব্যবহার করে তারা যে তালিকা তৈরি করেছে, সেটি আমার নজরে এসেছে। বিষয়টি তদন্ত করে সত্যতা পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ভাঙ্গুড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “ভিজিএফ চাউলের বরাদ্দে থানার নাম ব্যবহার করা হয়েছে বিষয়টি অত্যন্ত দু:খ ও লজ্জাজনক। আমরা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখছি।”
খসড়া তালিকায় সাংবাদিক লেখার বিষয়ে ভাঙ্গুড়া প্রেসক্লাবের সভাপতি রায়হান আলী বলেন, এ বিষয়টা সাংবাদিক সমাজের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এর সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের শাস্তির দাবি জানাই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছা. নাজমুন নাহার বলেন, বিষয়টি আমার নজর এসেছে। তদন্ত করে সত্যতা পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে স্থানীয়রা বলছেন, “চাউল এখনো আসেনি, অথচ আগেই ভাগাভাগির তালিকা তৈরি হয়েছে এটা দুর্নীতি নয় তো কী? তারা প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন, প্রকৃত উপকারভোগীদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে এবং দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে।”