শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:২৪ পূর্বাহ্ন

ই-পেপার

পাহাড়ে দখলদারদের উচ্ছেদে কঠোর প্রশাসন

প্রতিনিধির নাম:
আপডেট সময়: শুক্রবার, ২৬ জুন, ২০২০, ৮:৩৮ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

চট্টগ্রামে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের পাদদেশে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের উচ্ছেদে কঠোর অবস্থানে প্রশাসন। কোনো অবস্থাতেই এসব পাহাড়ে অবৈধ বসবাসকারীদের অবস্থান করতে দেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। অবৈধ বসবাসকারী কিংবা দখলদাররা যতই প্রভাবশালী হোক না কেন যে কোনো মূল্যে তাদের উচ্ছেদ করা হবে। সরকারি কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী যদি পাহাড় দখলের সঙ্গে জড়িত থাকে তাদের ব্যাপারে প্রশাসনিক তদন্ত করা হবে। এদিকে সর্বশেষ বুধবার নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি-ফৌজদারহাট সিডিএ লিংক রোডের দু’পাশে পাহাড় কেটে ও অবৈধভাবে গড়ে তোলা সাড়ে তিনশ’ স্থাপনা উচ্ছেদ করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। ১৬টি পাহাড়ে অভিযানে ঝুঁকিপূর্ণ ঘরবাড়ি উচ্ছেদের পাশাপাশি অবৈধ বিদ্যুতে ৩০টি মিটার জব্দ করা হয়। নবনির্মিত সিডিএ লিংক রোডের দু’ধারে করোনাভাইরাসের এ দুর্যোগ পরিস্থিতিতে গত ২ মাসে (এপ্রিল-মে) পাহাড় কেটে সরকারি জমিতে প্রচুর নতুন ঘর গড়ে তোলা হয়েছিল।

 

প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতরের যৌথ উদ্যোগে সিএমপি ও রেলওয়ের সহযোগিতায় এ বিশাল উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। কাট্টলি ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার তৌহিদুল ইসলাম এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন। নগরীর জঙ্গল সলিমপুর ও জালালাবাদের পাহাড়ে শত শত একর সরকারি জায়গা দখল করে অবৈধ বসতি স্থাপন করছিল প্রভাবশালীরা। এসব অবৈধ স্থাপনার বৈধতা মিলছে পিডিবির বিদ্যুৎ সংযোগ ও পুলিশ সদস্যদের দখলদারিত্বে। বায়েজিদ-ফৌজদারহাট সিডিএ লিংক ও রোড নির্মিত হওয়ার পর এসব জায়গায় বসতি স্থাপনে চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ইন্ধনে অসংখ্য সিন্ডিকেট রাতের আঁধারে পাহাড় কেটে বানিয়েছে এসব অবৈধ বসতি। স্বয়ং বায়েজিদ বোস্তামী থানার পুলিশ, এক কাউন্সিলর, সরকারি দলের নামধারী নেতাকর্মীদের দখলে রয়েছে সরকারি পাহাড়। ২০০৭ সালে ভয়াবহ পাহাড় ধসে ১২৯ জনের প্রাণহানির পর প্রতি বছরই বন্দরনগরী চট্টগ্রামে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের উচ্ছেদে তোড়জোড় দেখা যায়। বর্ষা এলেই ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের উচ্ছেদে নামে জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও পরিবেশ অধিদফতর। ফেব্রুয়ারিতে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে উচ্ছেদ অভিযানের সিদ্ধান্ত হলেও ৪ মাস পরে বাস্তবায়নে নেমেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনসহ অন্যান্য সংস্থা।

 

জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, পাহাড়ে অবৈধভাবে বসতি স্থাপনের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ বিভাগের যোগসাজশ রয়েছে। সরকারি পাহাড়ের মধ্যে পিডিবি বিদ্যুৎ লাইন টেনেছে। এখানে দখলদার সিন্ডিকেটের সঙ্গে যোগসাজশে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পিডিবি বৈদু্যুতিক খুঁটি বসিয়েছে এবং সংযোগ দিয়েছে। এসব কাজে পিডিবির লোকজন জড়িত। বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকলে এখানে বসতি বাড়ত না বরং কমে যেত। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ১৭ পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে অবৈধভাবে বসবাস করে ৮৩৫ পরিবার। এসব পরিবারের মধ্যে রেলওয়ের লেকসিটি আবাসিক এলাকা সংলগ্ন পাহাড়ে ২২ পরিবার, পূর্ব ফিরোজ শাহ এক নাম্বার ঝিল সংলগ্ন পাহাড়ে ২৮ পরিবার, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের মালিনাকানাধীন কৈবল্যধাম বিশ্ব কলোনি পাহাড়ে ২৮টি পরিবার, পরিবেশ অধিদফতরসংলগ্ন সিটি কর্পোরেশন পাহাড়ে ১০ পরিবার, রেলওয়ে, সওজ, গণপূর্ত অধিদফতর ও ওয়াসার মালিকানাধীন মতিঝর্ণা ও বাটালি হিল পাহাড়ে ১৬২ পরিবার, ব্যক্তি মালিকানাধীন একে খান পাহাড়ে ২৬ পরিবার, হারুণ খানের পাহাড়ে ৩৩ পরিবার, পলিটেকনিক কলেজ সংলগ্ন পাহাড়ে ৪৩ পরিবার, মধুশাহ পাহাড়ে ৩৪ পরিবার, ফরেস্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউটসংলগ্ন পাহাড়ে ৩৩ পরিবার, মিয়ার পাহাড়ে ৩২ পরিবার,

 

আকবরশাহ আবাসিক এলাকা সংলগ্ন পাহাড়ে ২৮ পরিবার, আমিন কলোনি সংলগ্ন ট্যাংকির পাহাড়ে ১৬ পরিবার, লালখান বাজার জামেয়াতুল উলুম মাদ্রাসা সংলগ্ন পাহাড়ে ১১ পরিবার, ভেড়া ফকিরের পাহাড়ে ১১ পরিবার, ফয়েসলেক আবাসিক এলাকা সংলগ্ন পাহাড়ে ৯ পরিবার এবং এমআর সিদ্দিকী পাহাড়ে আটটি পরিবার বসবাস করে আসছিল। এসব বসতির বেশির ভাগই ঝুঁকিপূর্ণ। বুধবার সবচেয়ে বড় উচ্ছেদে নামে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, পরিবেশ অধিদফতর ও রেলওয়ে। এ ব্যাপারে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের যে কোনো মূল্যে উচ্ছেদে কোনো ছাড় নেই। এতে সরকারি কারও সম্পৃক্ততার অভিযোগ পাওয়া গেলে তারও প্রশাসনকি তদন্ত হবে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনায় বিনা মালিকানার জমিতে কিভাবে বৈদ্যুতিক মিটার সংযোগ দেয়া হল সে বিষয়েও প্রশাসনিক তদন্ত করা হবে বলে জানান। পাহাড়ে অবৈধ বসতিতে মিটার ও সংযোগ দেয়া প্রসঙ্গে পিডিবি দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী শামছুল আলম যুগান্তরকে বলেন, জমির কাগজপত্র ছাড়া আমরা মিটার সংযোগ দেই না। যেসব মিটার বা সংযোগ দেয়া হয়েছে এসবের কাগজপত্র রয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর