একটা সময় আর্থিক সংকটে লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। বন্ধু হাবিব তাঁর মেসে জায়গা দেন রাজকে। শুরু হয় এক ঘরে ১৫ জনের ঠাসাঠাসি করে থাকা। রাজ বলেন, ‘সে এক কঠিন সময়। বন্ধুর কল্যাণে মেসে থাকার জায়গা হলো। ১৫ জন একসঙ্গে থাকি। পকেটে টাকা নেই। পড়ালেখা বন্ধ হয় হয় অবস্থা। কী করব, বুঝে উঠতে পারছিলাম না। তখন পরিবারের ওপর নির্ভরশীল হওয়ার সুযোগটাও ছিল না। দিশাহারা অবস্থা আমার।’
ওই সময় ধানমন্ডির আড্ডাই কিছুটা আলোর পথ দেখায় রাজকে। সেখানে বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত কিছু মানুষ আসতেন। তাঁদের সঙ্গে পরিচয় হয় রাজের। এই শহরে কিছু একটা করে টিকতে হবে, এই ভেবে মুঠোফোন সংযোগদাতা প্রতিষ্ঠান বাংলালিংকের ‘দেশ-৫’ বিজ্ঞাপনচিত্রে ‘সাইড আর্টিস্ট’ হিসেবে কাজ করেন রাজ। সেই সময় নিয়ে তিনি বলেন, ‘আড্ডায় পরিচিত হওয়া একজন নিয়ে গেলেন পরিচালক পিপলু আর খানের অফিসে। বিজ্ঞাপনচিত্রের মূল মডেল আরিফিন শুভ, সারিকা, নিলয়। বিজ্ঞাপনে আমার কাজ অনেকটা এক্সট্রার মতো। মূল মডেলের সঙ্গে ছড়ানো-ছিটানো ছেলেমেয়েদের দলে আমি। মহড়া হলো কয়েক দিন। এরপর শুটিং।
প্রথমবারেই পেলাম আট হাজার টাকা। সেই আনন্দের কথা বলে বোঝানো যাবে না।’
ঢাকায় বাঁচতে আর চলতে এর পর থেকে প্রায়ই বিজ্ঞাপনচিত্রে বাড়তি শিল্পী হিসেবে কাজ করতে লাগলেন শরিফুল রাজ। এর মধ্যে দু-এক জায়গায় চাকরিও করেছেন। তবে বেশি দিন মন টেকেনি। কিন্তু ধীরে ধীরে মডেলিংয়ের জগৎ ঘিরে আগ্রহ বাড়তে থাকে রাজের। ২০১১ সালে মডেল বুলবুল টুম্পার গ্রুমিং স্কুলে ভর্তি হন। ২০১২ সাল থেকে শুরু করেন মডেল হিসেবে র্যাম্পে হাঁটা। পরবর্তী সময়ে মডেল আজরা মাহমুদের সঙ্গে কাজের সুযোগ হয়। র্যাম্পের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ফটোশুটেও মডেল হতে থাকেন। রাজ বলেন, ‘তখন নিজেকে কিছুটা গুছিয়ে এনেছি। নিয়মিত ফটোশুট, র্যাম্পে কাজ করছি। এতে আর্থিক সংকট কিছুটা কাটে।’
হঠাৎ পাল্টে যায় দিন
২০১৫ সালের কথা। হঠাৎ একদিন র্যাম্প মডেলিংয়ের কোরিওগ্রাফার বুলবুল টুম্পার ফোনে রাজকে জানান নির্মাতা রনি একটি সিনেমা বানাবেন। রাজের তলব এসেছে রনির অফিস থেকে। ‘আগে থেকেই রেদওয়ান রনির নাটকের ভক্ত আমি। টুম্পা আপার ফোন পেয়ে খানিকটা ভয়ে ভয়ে রনি ভাইয়ের অফিসে গেলাম। অডিশন হলো।
পরদিন আবার ডাকলেন। তাঁর “আইসক্রিম” ছবিতে কাজের প্রস্তাব করলেন। এরপরই সব বদলে যেতে থাকল।’ এভাবেই সিনেমার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার কথা বলেন রাজ।
‘আইসক্রিম’-এর জন্য প্রস্তুতি নিতে র্যাম্প, ফটোশুট বন্ধ করে দেন রাজ। কিন্তু ছবি মুক্তির পর আবারও আর্থিক সংকট আঁকড়ে ধরে তাঁকে। রাজ বলেন, ‘“আইসক্রিম” ছবি মুক্তির আগপর্যন্ত অন্য কোনো কাজ করিনি। একটা সময় পকেটে এক টাকাও ছিল না। রনি ভাইয়ের অফিসেই থাকতে লাগলাম। খেয়ে–পরে বাঁচার জন্য পরে আবার মডেলিংয়ে ফেরার চেষ্টা করি। ২০১৭ ও ২০১৮ সালে আবার র্যাম্প আর ফটোশুট করে চলতে থাকি। কিন্তু ২০১৯ সালে এসে একের পর এক সিনেমার ডাক আসে।’
লক্ষ্যই সিনেমা, আছে অনিশ্চয়তা
রাজের পুরো পরিবারই সিনেমাপ্রেমী। সুযোগ পেলেই এখনো ‘রূপবান’ কিংবা ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ দেখতে বসে যান রাজের মা। তাই সিনেমার ঝোঁক পরিবার থেকেই পেয়েছেন রাজ। এখন সিনেমাই একমাত্র লক্ষ্য তাঁর। আর্থিক সংকট থাকলেও একটি সিনেমা করার পর আরেকটির অপেক্ষায় থাকেন। তবু ঘাবড়ে গিয়ে হাল ছেড়ে দেননি। রাজ বলেন, ‘সিনেমাটা করতে চাই। “আইসক্রিম” ছবিতে কাজ করার পর সিনেমাই আমার একমাত্র লক্ষ্য হয়ে গেছে। একেই আঁকড়ে ধরে থাকতে চাই।’
#চলনবিলের আলো / আপন