রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:২৯ অপরাহ্ন

ই-পেপার

২৩ জুন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর ৭১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

প্রতিনিধির নাম:
আপডেট সময়: মঙ্গলবার, ২৩ জুন, ২০২০, ৮:১০ পূর্বাহ্ণ

অমিত হাসান হৃদয় ঢাকা জেলা প্রতিনিধি:

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এ দেশের বৃহত্তম ও প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসান এবং ভ্রান্ত দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা অতঃপর বাঙালি জাতির উপর পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচার, নির্যাতন, চরম অবেহলা ও দুঃশাসনে নিষ্পেষিত বাংলার জনগণের মুক্তি ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন প্রতিষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগ। জন্মলগ্নে এই সংগঠনের নাম ছিল ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’। ১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন ঢাকার কেএম দাস লেনে অবস্থিত ঐতিহাসিক ‘রোজ গার্ডেন’ প্রাঙ্গণে জননেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর অনুসারি মুসলিম লীগের প্রগতিশীল কর্মীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ নামে পাকিস্তানের প্রথম বিরোধীদলের আত্মপ্রকাশ ঘটে। সংগঠনটির প্রথম কমিটিতে মওলানা ভাসানী সভাপতি ও শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক এবং জেলে থাকা অবস্থায় যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান।

 

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ধর্মনিরপেক্ষ-অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি, শোষণমুক্ত সাম্যের সমাজ নির্মাণের আদর্শ এবং একটি উন্নত সমৃদ্ধ আধুনিক, প্রগতিশীল সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা বিনির্মাণের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দর্শনের ভিত্তি রচনা করে আওয়ামী লীগ। যার প্রেক্ষিতে ১৯৫৫ সালের কাউন্সিলে অসাম্প্রদায়িক নীতি গ্রহণের মাধ্যমে সংগঠনটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ শুধু এ দেশের প্রাচীন ও সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠনই নয়, বাংলাদেশের রাজনীতির মূলধারাও। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ইতিহাস একসূত্রে গাঁথা। ১৯৪৮ সালে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সূচিত ভাষা আন্দোলন ১৯৫২ সালে গণজাগরণে পরিণত হয়। অব্যাহত রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার তরুণ সংগ্রামী জননেতা শেখ মুজিবুর রহমান সেই সময়ে কারান্তরালে থেকেও ভাষা আন্দোলনে প্রেরণাদাতার গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করেন। ভাষা আন্দোলনের বিজয়ের পটভূমিতে ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টের কাছে মুসলিম লীগের শোচনীয় পরাজয় হয়। তারপরও প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব থেকে দূরে রাখা হয়। নানা ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে ১৯৫৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে প্রদেশে প্রদেশে কোয়ালিশন মন্ত্রিসভা গঠিত হয়।

 

পূর্ব বাংলায় আওয়ামী লীগ সরকার নিশ্চিত করে এক মুক্ত গণতান্ত্রিক পরিবেশ। আওয়ামী লীগের উদ্যোগেই মাতৃভাষা বাংলা অন্যতম রাষ্ট্রভাষার আনুষ্ঠানিক মর্যাদা লাভ করে। ২১শে ফেব্রুয়ারি ঘোষিত হয় জাতীয় ছুটির দিন “ভাষা শহীদ দিবস”। আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নির্মাণকাজ প্রায় সম্পন্ন হয়। প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলা একাডেমি। মাত্র ২০ মাসের রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেয়ে চরম খাদ্যাভাব ও দুর্ভিক্ষ থেকে বাঙালি জাতিকে রক্ষা করাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকার যে সফলতা অর্জন করে তাতে জনগণের কাছে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা বহু গুণ বেড়ে যায়। সে সময় মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করে জনগণের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এবং তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠন গড়ে তোলার কাজে আত্মনিয়োগ করেন। এরপর আইয়ুব খানের এক দশকের স্বৈরশাসন-বিরোধী আন্দোলন, ’৬২ ও ’৬৪-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৪-এর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রতিরোধ, ’৬৬-এর ঐতিহাসিক ৬-দফা আন্দোলন, ’৬৮-এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ৬-দফাভিত্তিক ’৭০-এর নির্বাচনে ঐতিহাসিক বিজয়, ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম” খ্যাত কালজয়ী ভাষণ ও পরবর্তীতে পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন, ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যার পর ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাঙালি জাতি স্বাধীন জাতি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

 

অবশেষে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দীর্ঘ ৯ মাসের এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অভ্যুদ্বয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় ঐক্যের রূপকার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বাঙালি জাতির স্বতন্ত্র জাতি-রাষ্ট্র ও আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠার সুমহান ঐতিহ্যের প্রতীক। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বঙ্গবন্ধুর সরকার স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে যখন অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামে এগিয়ে নিতে নিবেদিত ঠিক তখনই স্বাধীনতাবিরোধী চক্র আন্তর্জাতিক শক্তির সহায়তায় ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যাসহ জাতীয় চার নেতা হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার চতুর্মুখী ষড়যন্ত্র করা হয়। ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে সংগঠনের সভাপতি নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘ ৬ বছরের নির্বাসন শেষে ১৯৮১ সালের ১৭ মে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নব উদ্যমে সংগঠিত হয়। জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাঙালি জাতির হারানো গণতান্ত্রিক অধিকার পুনরুদ্ধারের এক নতুন সংগ্রামের পথে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পথপরিক্রমায় অনেক অশ্রু, ত্যাগ আর রক্তের বিনিময়ে বাঙালি জাতি ফিরে পায় ‘ভাত ও ভোটের অধিকার।

 

আজ বঙ্গবন্ধু-কন্যা, রাষ্ট্রনায়ক জননেত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে ও সুদক্ষ রাষ্ট্র পরিচালনায় সুশাসন, স্থিতিশীল অর্থনীতি, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, উন্নয়নে গতিশীলতা, ডিজিটাল বাংলাদেশ, শিক্ষার প্রসার, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ, কর্মসংস্থান, বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, খাদ্য নিরাপত্তা, নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুগান্তকারী উন্নয়নের ফলে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে একটি আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উন্নীত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ সফলভাবে উৎক্ষেপণ এবং সাবমেরিনের মালিকানা অর্জনের মধ্য দিয়ে জল-স্থল-মহাকাশ জয় করেছে বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগের ইতিহাস, বাঙালি জাতির গৌরবোজ্জ্বল অর্জন ও সংগ্রামের ইতিহাস। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাসহ বাঙালি জাতির যা কিছু শ্রেষ্ঠ অর্জন, তার মূলে রয়েছে জনগণের এই প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব। জন্মলগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শক্তির উৎস জনগণ, শক্তির উৎস সংগঠনের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। এ দেশের সকল গণতান্ত্রিক-প্রগতিশীল আন্দোলনের সাহসী মিছিলের নাম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। জনগণের ভেতর থেকে উত্থিত একটি প্রগতিশীল সংগ্রামী রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ হচ্ছে সমাজের অগ্রসর চিন্তা-চেতনা, আদর্শ, লক্ষ্য ও কর্মসূচি বাস্তবায়নের অগ্রবাহিনী। নেতা-কর্মীদের ইস্পাতদৃঢ় মনোবল এবং ঐক্যবদ্ধতার ফলে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র সফল হয়নি, কোনোদিন হবে ও না।

 

সাত দশকের লড়াই-সংগ্রামের অভিযাত্রায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বাংলার মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার ও অর্থনৈতিক মুক্তির অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নিরন্তর সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে। আওয়ামী লীগের অর্জিত সাফল্যের ধারাবাহিকতায় বাংলার জনগণ বিশ্বাস করে নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই বাংলাদেশ একটি উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।

 

দেশবাসীকে ঐতিহাসিক ২৩ জুনে সীমিত পরিসরে যথাযথভাবে স্বাস্থ্য বিধি মেনে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ বাঙালি জাতির স্বাধীনতা, মুক্তি, গণতন্ত্র ও প্রগতি প্রতিষ্ঠায় আত্মদানকারী দেশমাতৃকার সকল শহীদ সন্তান এবং করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আলহাজ্জ মকবুল হোসেন, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম এমপি, কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য বদর উদ্দীন আহমদ কামরান, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী আলহাজ্জ অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহসহ মৃত সকলের প্রতি আত্মার মাগফেরাত ও শান্তি কামনা করে পরম করুণাময়ের নিকট প্রার্থনা করার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। একই সাথে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর নীতি, আদর্শ, চেতনা ও মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল বাঙালি হৃদয়ে দেশপ্রেমের বহ্নিশিখা প্রজ্জলিত করে সংকট জয়ের ঐক্যবদ্ধ ভাবে সুরক্ষা সৃষ্টির অনুরোধ জানাচ্ছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর