রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান এই তিন পার্বত্য জেলাকে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রম জেলা সৃষ্টি পূর্বের নাম ছিল “কার্পাস মহল”।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা থেকে ১৯৮১ সালে বান্দরবান এবং ১৯৮৩ সালে খাগড়াছড়ি পৃথক জেলা সৃষ্টি করা হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার মূল অংশ রাঙামাটি পার্বত্য জেলা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে।
বৃটিশ আমল থেকে পার্বত্য অঞ্চলে বিদ্যমান বিশেষ প্রশাসনিক কাঠামোর মধ্যে চলছিলো, ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের পর এই কাঠামোতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। পার্বত্য চুক্তির পর থেকে সাপছড়ি ১ হাজার ৫১৮ ফুট উচ্চতার পাহাড়টির নাম পরিবর্তন করে ধীরে-ধীরে নতুন নাম করণ করা হয় ফুরোমোন।
সাপছড়ি পাহাড়ের পাদদেশে ১৯৬৫ সালে মানিকছড়িতে আমার জন্ম।
বাবা প্রয়াত রোহিনী রঞ্জন বড়ুয়া ১৯৭০ সালের দিকে ব্যবসায়ীক কারণে ভেদ ভেদী চলে আসেন।
ছোট বেলা থেকেই সেই দেশ স্বাধীনের পর থেকে সাপছড়ি পাহাড়ের গল্প লোক মুখে অনেক শুনেছি। ইংরেজরা সেই সাপছড়ি পাহাড়ে উঠতেন সেখানে বড় পুকুর আছে ইত্যাদি-ইত্যাদি।
মাঝে-মধ্যে সাপছড়ি পাহাড়ে চুড়ায় যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও বিভিন্ন কারণে আমার যাওয়া হয়নি।
গত ১০-১২ বছর ধরে সাপছড়ি পাহাড়ের চুড়ায় প্রতি বছর বৌদ্ধ ধর্মের কঠিন চীবর দানৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
২০২১ সালের অক্টোবর মাসে জানলাম আমার এলাকার সলিউশন রাঙামাটির পরিচালক মো. রাশেদুল ইসলাম প্রায় সময় পর্যটকদের দল নিয়ে সাপছড়ি (ফুরোমোন) পাহাড়ের চুড়ায় উঠে। শীত মৌসমে পাহাড়ে উঠার সঠিক সময় তাই আমি আমার ৫৬ বছর বয়সে ১ হাজার ৫১৮ ফুট উচ্চতায় সাপছড়ি(ফুরোমোন) পাহাড়ের চুড়ায় উঠার সিদ্ধান্ত গ্রহন করি।
তার পর আমি, আমার দুই ছেলে এবং তার বন্ধু সাপছড়ি (ফুরোমোন) পাহাড়ের চুড়ায় উঠার পরিকল্পনা নিয়ে তার আগে আমরা মো. রাশেদুল ইসলামের সাথে কথা চুড়ান্ত করি, রাশেদুল জানায় তার প্রায় ২০ ডাক্তার পর্যটক ৬ নভেম্বর-২০২১ তারিখ পাহাড়ের চুড়ায় উঠার কথা রয়েছে।
গত ৫ নভেম্বর হঠাৎ রাশেদুল আমাদের আবার জানায় জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সমগ্র দেশে হঠাৎ করে শুক্রবার ভোর থেকে গণপরিবহন ও পণ্যবাহী যানবাহন বন্ধ থাকায় ঢাকা থেকে তার সেই পর্যটকরা আসতে পারছেন না।
আমরা বাসায় সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম নিজেরাই ভোর বেলায় সাপছড়ি (ফুরোমোন) পাহাড়ের চুড়ায় উঠে যাবো।
চারজন সাপছড়ি (ফুরোমোন) পাহাড়ের চুড়ায় উঠার জন্য ৫ নভেম্বর রাতে আমরা ৬ লিটার খাওয়ার পানি, কলা, বিস্কুট, চনাচুর, লাল চা, চিপস, ১ লিটার কোমল পানিয়, ডিম ভাজি ও নুডুলস নিয়ে নিলাম। রাত ১০টায় রাশেদুল ফোন করে বলে বসলো ঢাকার পর্যটক না আসলেও রাঙামাটির কয়েকজন মিলে ৬ নভেম্বর-২০২১ ভোর সাড়ে ৫টায় (রাশেদুলের বাসার সামনে থেকে) আমরা রাঙামাটি বেতার কেন্দ্রে সামনে থেকে রওনা দিব।
আমার বাসা রাঙামাটি সদর হাসপাতাল এলাকা থেকে সাপছড়ি পাহাড়ের দুরত্ব ৮ কিলোমিটার মাত্র।
৬ নভেম্বর-২০২১ শনিবার সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে দেড় হাজার ফুট উচ্চতায় রাঙামাটি সাপছড়ি (ফুরোমোন) পাহাড়ে ভোর সাড়ে ৫টায় রাঙামাটি বেতার কেন্দ্রের সামনে থেকে রওনা করি।
আমাদের গাইড হিসাবে দায়িত্বে ছিলেন সলিউশন রাঙামাটির পরিচালক মো. রাশেদুল ইসলাম।
ভ্রমনে আমরা যাঁরা ছিলাম নির্মল বড়ুয়া মিলন(আমি নিজে), আব্দুর রহিম, বিপ্লব বড়ুয়া বাপ্পি, মো. মামুন, স্বাধীন বড়ুয়া নিশু, মো. আসলাম, নিশুর বন্ধু হৃদয় সরকার ও মো. সাব্বির।
চারটি মোটরসাইকেল নিয়ে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক দিয়ে শালবাগান পুলিশ ক্যাম্পের সামনে যৌথখামার যাত্রী ছাউনির পাশে রেখে সেখান থেকে সবাই যাঁর-যাঁর ব্যাগ পিঠে নিয়ে পায়ে হাঁটা শুরু। আমি ছিলাম একেবারে খালি হাতে আমার ব্যাগ বা খাওয়ার বাপ্পি, নিশু ও হৃদয়ের ব্যাগে।
ইটের রাস্তা দিয়ে প্রায় দুই কিলোমিটার হাঁটার পর বেশ কয়েকটি চাকমা আদিবাসীদের বাড়ি কয়েকটি সিএনজি অট্রোরিক্সা রাস্তার পাশে রাখা আছে। এসব বাড়ি-ঘর ফেলে দুইশত গজ দুরে যাওয়ার পর ইটের রাস্তা শেষ। পায়ে হাঁটার মাটির রাস্তা তার মধ্যে ছোট-ছোট গাছের সাকো, খেয়াল করে দেখলাম পাহাড়ের ওপর ঝর্ণা থেকে চাকমা আদিবাসীদের বাড়িতে পানির সংযোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে আমরা ২ দলে ভাগ হয়েছি, প্রথম দলে আমাদের গাইড রাশেদুল ইসলাম, আব্দুর রহিম, মো. মামুন, মো. আসলাম ও মো. সাব্বির। ওরা আগে আর ২য় দলে আমি নিজে, বিপ্লব বড়ুয়া বাপ্পি, স্বাধীন বড়ুয়া নিশু ও হৃদয় সরকার।
পাহাড়ে তখনও কুয়াশায় ভরা মাটির রাস্তায় হেটে এক থেকে দেড় কিলোমিটার যাওয়ার পর দেখলাম রাস্তা ১টি বামে, ১টি ডানে পাহাড়ের চুড়ার দিকে গেছে। আমাদের গাইড রাশেদুল ইসলাম বুদ্ধি খাটিয়ে মাটির রাস্তার ওপর ডান দিকে তীর চিহ্ন দিয়ে রেখেছে যাতে খুব সহজে আমরা এরো চিহ্ন দেখে ওপরের দিকে পথ চলতে পারি।
চিহ্ন দেখে ওপরে উঠার পর বসার জন্য চমৎকার একটি স্থান পেলাম আমরা। দুই পাশে বোধিবৃক্ষ মধ্যখানে ১টি বটবৃক্ষ, পথচারীরা বসার কয়েটি কাঠ দিয়ে বেঞ্চ তৈরী করা। সেই স্থানে বসলে ঝর্ণার পানির শব্দ কানে আসে, প্রবল বাতাস।
সেই বটবৃক্ষে তলে আমরা দুই দল এক সাথে বসে বিশ্রাম নিলাম। হালকা বিস্কুট, পানি ও চা খাওয়ার আর পাহাড়ের মাঝা-মাঝি স্থান থেকে পাহাড়ের নীছের দৃশ্য উপভোগ করা।
বিশ্রাম শেষ হওয়ার সাথে-সাথে স্বাধীন বড়ুয়া নিশু দেখলাম আমাদের আগে যে সকল পর্যটক রাঙামাটি সাপছড়ি (ফুরোমোন) পাহাড়ের চুড়ায় উঠাকালিন তাদের ফেলে যাওয়া ব্যবহারিত মাস্ক, চিপসের খালি প্যাকেট, চানাচুরের খালি প্যাকেট, সিগারেটের খালি প্যাকেট, চকলেটের খোসা, পানির খালি বোতল এবং পর্যটকদের ফেলে রেখে যাওয়া বিভিন্ন ধরনের আবর্জনা এক জায়গায় জমা করে তাতে আগুন লাগিয়ে ধ্বংস করা হয়। এসময় বেশ কয়েক ভিডিও ধারন করা হয়। এসময় স্বাধীন বড়ুয়া নিশু বলেন, ব্যবহারিত মাস্ক, চিপসের খালি প্যাকেট, চনাচুরের খালি প্যাকেট, চকলেটের খোসা, পানির খালি বোতল এবং প্লাষ্টিকের ফেলে রাখা যে কোন বস্ত মাটির সাথে মিশে যেতে বা ধ্বংস হতে ৪শত বছর সময় লাগে যা আগামী প্রজন্মের জন্য পরিবেশকে ধ্বংস করছি। পর্যটকদের কাছে সে বিনীতভাবে হাত জোর করে অনুরোধ জানায়, সচেতন হউন এবং পরিবেশ রক্ষায় নিজেদের ভুমিকা রাখুন ইত্যাদি।
স্বাধীন বড়ুয়া নিশু রাঙামাটির প্রথম সারির বিদ্যাপিঠ লেকার্স পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ রাঙামাটি থেকে সে ২০১৫ সালে এসএসসি পাশ করে তার পর সে বাংলাদেশের শ্রেষ্ট কলেজ নামে পরিচিত ঢাকা কমার্স কলেজ থেকে সে ২০১৭ সালে এইচএসসি পাশ করে তার পর নিশু বাংলাদেশস্থ ব্রিটিশ কাউন্সিলে মাধ্যমে আইএলটিএস কোর্স করে থাইল্যান্ডের মহাসারখাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যটন এবং হোটেল ব্যবস্থাপনা অনুষদে ভর্তি হয়। নিশু আন্তর্জাতিক পর্যটন ব্যবস্থাপনা ৩য় বর্ষের ছাত্র। সে মহাসারখাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম এবং একমাত্র বাংলাদেশী ছাত্র। পর্যটন এবং হোটেল ব্যবস্থাপনা অনুষদে ৫ হাজার ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে ২০২১ সেরা ৫জনের মধ্যে সে সেরা এবং প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করে। স্বাধীন বড়ুয়া নিশু রাঙামাটি পার্বত্য জেলার প্রথম বিভাগ লীগের ফুটবল খেলোয়াড় এবং একজন পরিবেশবাদি।
আমরা যে বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম তার কিছু দুরে ঝর্ণা থেকে পানি পড়ার শব্দ অনেক জোরে কানে আসছে, সবাই মিলে ঝর্ণা দেখতে গেলাম। আমাদের গাইড অবশ্য এর মধ্যে জাম্বুরা গাছ থেকে একটি জাম্বুরা নিয়ে অন্যদের খাওয়ানোর জন্য প্রস্তুত করেছে।
রাঙামাটি বন বিভাগের তদারকির অভাবে স্থানীয়রা অপরিকল্পিত ভাবে বন উজার করার ফলে পাহাড়ি ঝর্ণা দিয়ে অনেক কম পানি আসে কিন্তু অনেক উপর থেকে পানি বেয়ে পড়ার ফলে শব্দ শোনা যায়।
ঝর্ণার পাশে গিয়ে দেখলাম সাপছড়ি (ফুরোমোন) পাহাড়ের চুড়ায় এবং তার আশ-পাশের কয়েক কিলোমিটার দুরে পাইপ লাইন দিয়ে আদিবাসি গ্রামে এবং ক্যাম্পে পানি নেয়ার দৃশ্য। পাহাড় থেকে পানি সংগ্রহের কৌশল অত্যান্ত চমৎকার তবে সনাতন পদ্ধতি।
বটবৃক্ষে তলে বিশ্রাম নেয়া এবং ঝর্ণা দেখার পর আমরা আবার পাহাড়ের চুড়ায় উঠতে শুরু করলাম এবার কিন্তু মুল চুড়ায় উঠতে গিয়ে ৮০-৯০ ডিগ্রি দাড়ানো উচ্চতায় ছোট-ছোট মাটির সিড়ি বেয়ে হাতে লাঠি নিয়ে অনেক সাবধানে পা ফেলে উঠতে হয়ে।
মাঝ পথে খানিক সমতল বিশাল আকারের একটি পাথর তার পাশে স্থানীয় আদিবাসিরা আদা, কচু ও কলা বাগান করেছে। পিঠে একটি ব্যাগ নিয়ে খালি হাতে উঠতে যে পথ দিয়ে মুসকিল বা পা পিছলে পড়ার ঝুঁকি অথচ সেই পথ বেয়ে স্থানীয়রা ফসল চাষাবাদ করে জীবন যাপন করে থাকেন সাপছড়ি (ফুরোমোন) পাহাড়ের বসবাসকারী আদিবাসি পরিবারের সদস্যরা। এ রাস্তা দিয়ে উঠার সময় পিছনে ফিরে থাকালে দুরের দৃশ্য অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর এবং সুন্দর দেখা যায়। তবে যাদের হার্টের সমস্যা আছে বা দুর্বল চিত্তের মানুষ তারা এ পথ দিয়ে সাপছড়ি (ফুরোমোন) পাহাড়ের চুড়ায় না উঠার পরামর্শ রইল।
আমরা প্রায় এক ঘন্টা ৭০- ৮০-৯০ ডিগ্রি পাহাড়ের সুরু পথ দিয়ে লাঠি হাতে পৌঁছে গেলাম সাপছড়ি (ফুরোমোন) পাহাড়ের চুড়ায়।
চুড়ায় উঠার সাথে সাথে প্রথমের চোখে পড়লো একটি আমলকির গাছ, তার থেকে ১০ গজ দুরে ফুরোমোন পেট্রোলিং বেইস ক্যাম্প, আমলকি গাছের ডান পাশে ক্যাম্পের হেলিপ্যাড।
আমরা যখন সাপছড়ি (ফুরোমোন) পাহাড়ের চুড়ায় ক্যাম্পের হেলিপ্যাডে পৌঁছেছি তখন সময় সকাল ৮টা তখনও পাহাড়ের গায়ে ঘন কয়াশায় ভরা। আমরা ক্যাম্পের হেলিপ্যাড এবং তার পাশে দেখলাম সিগারেটের, চিপসের, জুসের, চনাচুরের, বিস্কুটের খালি প্যাকেট, পানির খালি বোতল ও মাস্ক ইত্যাদি।
আমরা ফুরোমোন পেট্রোলিং বেইস ক্যাম্পের হেলিপ্যাড পৌছার কিছুক্ষণ পর সেনাবাহিনীর পোষাক পরহিত অবস্থায় একটি খাতা আর কলম হাতে ক্যাম্পের একজন সদস্য আমাদের নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বর খাতায় লিপিবদ্ধ করে নিলেন। ক্যাম্পের সেই সদস্যার কাছ থেকে জানতে পারলাম আমরা পাহাড়ে উঠার আগের দিন (৫ নভেম্বর-২০২১) শুক্রবার ফুরোমোন বৌদ্ধ বিহারের কঠিন চীবর দান উৎসব অনুষ্ঠান ছিলো, এ হেলিপ্যাডে মেলার দোকান-পাট বসানো হয়েছে তাই পাহাড়ের চুড়ায় এক সাথে এত প্লাষ্টিকের আবর্জনা।
সাপছড়ি (ফুরোমোন) পাহাড়ের চুড়ায় উঠার পর নিজ চোখে চেয়ে দেখলাম নীচের দৃশ্য সমুহ অত্যান্ত মনোমুগ্ধকর চোখ জুড়ানো সুন্দর এবং দেখার মত, সমুদ্রের পৃষ্ঠ থেকে ১ হাজার ৫১৮ ফুট উচ্চতায় উঠে নীচের দৃশ্য উপভোগ করা জীবণে এটাই প্রথম। এর আগে ভারতের দার্জিলিং টাইগার হিলে উঠে পৃথিবীতে প্রথম সূয্য উঠার দৃশ্য দেখার সৌভাগ্য আমি ও আমার পরিবারের সদস্যদের হয়েছিলো। ফুরোমোন পাহাড়ে উঠার পর আশা করি যে কারোই ভাল লাগবে। তবে ফুরোমোন পেট্রেলিং বেইস ক্যাম্পের ছবি তোলা নিষেধ।
ক্যাম্প থেকে আমাদের তথ্য সংগ্রহ করতে আসা সেই আইন-শৃক্সখলা বাহিনীর সদস্যর সাথে কথা হলো, তিনি জানালেন আকাশ যখন পরিস্কার থাকে অথাৎ বেলা ১টা-৪টার মধ্যে সাপছড়ি (ফুরোমোন) পাহাড়ের চুড়ায় দাঁড়িয়ে রাঙামাটি, রাউজান এবং চট্টগ্রাম শহর দেখা যায়।
তাদের ক্যাম্পের খাওয়ার ও ব্যবহারের পানির কিভাবে সংগ্রহ করা হয় ? জানতে চাইলে তিনি ক্যাম্পের সদস্য জানান, যেখানে আমরা বটবৃক্ষের তলায় বসে বিশ্রাম নিয়ে ছিলাম তার পাশে যে পাহাড়ের পানির ঝর্ণা রয়েছে সেই ঝর্ণা থেকে ক্যাম্পের জন্য পানি সংগ্রহ করা হয়।
ক্যাম্পের রেশন এবং প্রতিদিনের মাছ,মাংস, তরিতরকারি ও দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিষ-পত্র সংগ্রহের বিষয়ে জানা গেল, প্রতিদিন ক্যাম্পের লোক রাঙামাটি জোন সদর থেকে ফ্রেশ (মাছ, মাংস,ডিম, কাঁচা তরিতরকারী) ইত্যাদি সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন। সেই সাথে দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিষ-পত্র প্রতিদিন আনার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া হেলিকপ্টারের সাহায্যে রেশন এবং ক্যাম্পের প্রয়োজনী সামরিক সরঞ্জাম নিয়মিত সরবরাহ করা হয়।
এছাড়া ক্যাম্পের জ¦ালানী কাঠ স্থানীয় বন-জঙ্গল থেকে সংগ্রহ করা হয়।
সাপছড়ি (ফুরোমোন) পাহাড়ের মাঝখানে এবং পাহাড়ের পাদদেশে রাঙামাটি সদর উপজেলার সাপছড়ি ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি স্থানীয় আদিবাসিদের গ্রাম ও বনধ্যান কেন্দ্র রয়েছে তারমধ্যে পাহাড়ের উত্তর অংশে চেয়ারম্যান পাড়া, ফুরোমোন সাধনাতীর্থ আন্তর্জাতিক বনধ্যান কেন্দ্র দক্ষিণ অংশে যৌথ খামার, পশ্চিম অংশে মাঝখানে মোনতলা ইত্যাদি গ্রামে ফুরোমোন পেট্রোলিং বেইস ক্যাম্পের সেনাবাহিনী ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা প্রতি তিনদিন অন্তর টহল (পেট্রোলিং) করেন।
আমাদের গাইড রাশেদুল ইসলাম অত্যান্ত প্রাণবন্ত একজন মানুষ সে দ্রুত আমাদের জন্য তার বাসা থেকে রান্না করে নিয়ে যাওয়া ঘি দিয়ে মাংস খিচুড়ি কলা পাতায় করে খাওয়ার ব্যবস্থা করে ফেলে এবং সুন্দর করে পরিবেশনের মাধ্যমে আমাদের সবাইকে খেতে দেয়। অনেক পথ পাহাড়ি রাস্তায় হাঁটা তাই সবারই পেটে ক্ষিদে তাই দেরী না করে বাসা থেকে নিয়ে যাওয়া পুরাতন ব্যানার হেলিপ্যাডের বিছিয়ে সবাই এক সাথে খাওয়া শুরু তার আগে অবশ্য স্মৃতিময় ছবি তোলা হয়। আনন্দঘন মুহুর্তে আমরা সবাই খিচুড়ি খেলাম অনেক ভাল লাগলো আজীবন স্মরণীয় বিষয়।
খিচুড়ি খাওয়ার পর আমাদের চারজনের খাওয়ার পানি পর্যাপ্ত ছিলো কিন্তু বাকি ৫জনের খাওয়ার পানির সংকট কারণ তাদের পরিকল্পনা ছিলো বিশ্রাম নেয়ার স্থানের পাশে যে ঝর্ণা ছিলে সেই ঝর্ণা থেকে তারা তাদের খাওয়ার পানি সংগ্রহ করবে কিন্তু পানি সংগহ করতে গিয়ে কিসের যেন একটা দুর্গন্ধ তাদের নাকে আসায় তারা আর ঝর্ণার সেই পানি খাওয়ার জন্য নেয়নি। তাই আমাদের চারজনের মজুত রাখা খাওয়ার পানি অন্য ৫জনকে খেতে দেই। আমরা আবার ক্যাম্পের রান্না ঘরের সঙ্গে ড্রামে ক্যাম্প সদস্যদের মজুত রাখা খাওয়ার পানি থেকে ৫ বোতল পানি সংগ্রহ করি।
আমাদের খিচুড়ি খাওয়া শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পর ফুরোমোন পেট্রোলিং বেইস ক্যাম্পের সদস্যরা এবং আমাদের সাথে থাকা ¯^াধীন বড়–য়া নিশু মিলে আগের দিন মেলা উপলক্ষে হেলিপ্যাডে বসানো দোকান-পাটের ফেলে যাওয়া সিগারেটের, চিপসের, জুসের, চনাচুরের, বিস্কুটের খালি প্যাকেট, পানির খালি বোতল,ভাত,সবজির প্যাকেট ও মাস্ক ইত্যাদি আবর্জনা পরিস্কার করে ধ্বংস করার জন্য এক জায়গায় জড়ো করা শুরু করেছে। আমরাও কিছু আবর্জনা হেলিপ্যাডের মাঝখানে জমা করে রেখে দিলাম পুড়িয়ে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে।
আমরা সবাই মিলে হেলিপ্যাডের ওপর দাড়িয়ে একক এবং দলবদ্ধভাবে বেশ কিছু ছবি তোলার পর সাপছড়ি (ফুরোমোন) পাহাড়ের মুল চুড়ায় রয়েছে বৌদ্ধ মন্দির এবার সবাই সেই চুড়ায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে নিজেদের সাথে থাকা ব্যাগ ও অন্য সকল জিনিষ-পত্র গুছিয়ে নিয়ে নিলাম।
হেলিপ্যাড থেকে ফোরমোন পেট্রোলিং বেইস ক্যাম্পের পশ্চিম অংশ দিয়ে প্রায় দেড় থেকে দুই কিলোমিটার সরু পাহাড়ি পথ দিয়ে মুল চুড়ায় অথাৎ ফুরোমোন বৌদ্ধ মন্দিরে পৌছালাম। মাঝ পথে রাশেদুল তার সাথে আরো তিনজনকে নিয়ে ক্যাম্পের দিকে চলে আসে।
ফুরোমোন বৌদ্ধ মন্দির পাঁকা ঘরে একটি বৌদ্ধ মুর্তি রয়েছে। তার সামনে বৌদ্ধধর্মীয় পতাকা, তার পাশে বড় একটি মাঠ, মাঠের শেষ পান্তে বেশ লম্বা একটি কাঠের বেড়ার ওপরে টিন দিয়ে একটি ঘর সেই ঘরের পাশে (পশ্চিম পাশে) টিনের শৌচাগার তাতে পানির সংযোগ থাকলেও কিন্তু পানি নাই। বড়-বড় বেশ কয়েকটি বটবৃক্ষ রয়েছে তার সাথে ফুলের বাগানও আছে। এসবের শেষে অথাৎ ফুরোমোন বৌদ্ধ মন্দিরের উত্তর অংশ দিয়ে পাঁকা করা বিশ্রামের ছাউনি তার ঠিক মাঝখান দিয়ে সুন্দর টাইলস করে বাঁধানো সিড়ি যে সিড়ি দিয়ে একেবারে পাহাড় থেকে নিছে যাওয়ার সিড়ি করা আছে।
শুভ্রা রানী বড়ুয়া আমার স্ত্রী বাসা থেকে রান্না করে দেয়া নুড়ুলস্ আমরা সাথে করে নিয়ে ছিলাম সেই নুড়ুলস্, চিপস ও বিস্কুট খেলাম।
আমি আমাদের বড়ছেলে বাপ্পি, ছোট ছেলে নিশু তার বন্ধু হৃদয় সাপছড়ি (ফুরোমোন) পাহাড়ের মুল চুড়ায় যে বৌদ্ধ মন্দির এলাকায় অনেক মজা করেছি এবং পাহাড়ের মুল চুড়ায় ভ্রমন করাকে দারুন ভাবে উপভোগ করেছি।
নিরিবিলি স্থানে খাওয়া, ছবি তোলা আর গল্প করার আনন্দই আলাদা। এসব স্থানে রাত্রি যাপনের ইচ্ছা হবে সকল পর্যটকের কিন্তু সেই ধরনের ব্যবস্থা আজও সাপছড়ি (ফুরোমোন) পাহাড়ের মুল চুড়ায় গড়ে উঠেনি। সাপছড়ি (ফুরোমোন) পাহাড়ের মুল চুড়ায় ভ্রমনকালিন আমার কাছে নিরাপত্তার বিষয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয়নি। মোবাইল নেটওয়াক ভাল। বিদ্যুৎ সংযোগ আছে। অত্যান্ত সুন্দর ও মনোরম প্রাণ জুড়ানো পরিবেশ। এককথায় যদি বলা হয় যে কোন দেশী-বিদেশী পর্যটক সাপছড়ি (ফুরোমোন) পাহাড়ের মুল চুড়ায় উঠলে এ স্মৃতি সহজে ভুলতে পারবেন না।
সাপছড়ি (ফুরোমোন) পাহাড়ের মুল চুড়ায় যে বৌদ্ধ মন্দির রয়েছে তার উত্তর অংশ দিয়ে কিছু দুর সিড়ি দিয়ে নামলে ফুরোমোন সাধনাতীর্থ আন্তর্জাতিক বনধ্যান কেন্দ্র পাওয়া যায়। তার পর ইটের রাস্তা সেই রাস্তা দিয়ে মোটরসাকেল, সিএনজি অট্রোরিক্সায় করে বা জিপ গাড়ি (চাঁদের গাড়ি) দিয়ে চেয়ারম্যান পাড়ার পাশ দিয়ে সোজা মানিকছড়ি-মহালছড়ি পাঁকা সড়কে উঠা যায়।
আমরা আমাদের মোটরসাইকেল রেখে এসেছি সেই শালবাগান পুলিশ ক্যাম্পের সামনে অথাৎ রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের যৌথখামার এলাকার যাত্রী ছাউনিতে তাই ইচ্ছা থাকার পরও সাপছড়ি (ফুরোমোন) পাহাড়ের মুল চুড়া থেকে বৌদ্ধ মন্দিরের উত্তর অংশ দিয়ে সিড়ি দিয়ে নেমে ফুরোমোন সাধনাতীর্থ আন্তর্জাতিক বনধ্যান কেন্দ্রের পাশ দিয়ে ইটের রাস্তা দিয়ে চেয়ারম্যান পাড়ার পাশ দিয়ে মানিকছড়ি-মহালছড়ি পাঁকা সড়ক হয়ে রাঙামাটি শহরে ফিরতে পারিনি।
সময় আর সুযোগ হলে উপরের উল্লেখিত রাস্তা দিয়ে আরো একবার সাপছড়ি (ফুরোমোন) পাহাড়ের মুল চুড়ায় ভ্রমনে যাবো।
আমরা ৫জন মিলে সাপছড়ি (ফুরোমোন) পাহাড়ের মুল চুড়া থেকে নামতে শুরু করি। ফোরমোন পেট্রোলিং বেইস ক্যাম্পের স্থানে পৌছালে ক্যাম্পের সদস্যরা সমাদর করে বলে বসলেন আমরা যেন দুপুরের খাওয়ার তাদের ক্যাম্পে খেয়ে আসি। তাছাড়া ক্যাম্পের লোকজন আমাদের সাথে অনেক ভাল ও বন্ধ্ত্বপূর্ণ আচরণ করেছেন। আমরা তাদের আচরণে খুশি হয়েছি আপ্যায়ন গ্রহনের প্রয়োজন হয়নি।
এর মধ্যে আমাদের গাইড রাশেদুল তার জরুরী প্রয়োজন থাকায় আমাদের ৫জনকে পাহাড়ের চুড়ায় রেখে তার সাথে আরো ৩জনকে নিয়ে আমাদের প্রায় দুইঘন্টা আগে পাহাড়ের চুড়া থেকে নেমে পড়ে। মোবাইল ফোনে যোগাযোগ থাকায় কোন ধরনের সমসা বা একে আপরকে খুঁজতে হয়নি।
আমরা ৫জন ফুরোমোন পেট্রোলিং বেইস ক্যাম্পের সামনে থেকে যে পথ ধরে আমরা পাহাড়ের চুড়ায় উঠেছিলাম আবার সেই পথ ধরে নীচের দিকে নামতে শুরু করি।
পাহাড় থেকে নামতে সহজ এবং পরিশ্রম কম ও দ্রুত সময়ে নামা যায়। আবার বিশ্রাম স্থানে পৌছালে সবাইকে নিয়ে গল্প করার ফাকে একজন আদিবাসি নারী মাথায় বহন করে চাকমা ভাষায় হাল্লোং (থুরুং) ভিতরে নিয়ে মুলা শাক নীচের দিকে নামছেন। তার কাছ থেকে জানতে চাইলাম এই শাক কোথায় তিনি বিক্রয় করবেন ? প্রতি উত্তরে সেই আদিবাসি নারী বলেন, রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের পাশে যৌথখামার এলাকার মোড়ে যে স্থানের কয়েকটি ছোট-ছোট কৃষিপণ্য বেচার জন্য নেয়া হচ্ছে।
তার কিছুক্ষণ পর প্রায় ৬০-৬৫ বছরের আদিবাদি একজন নীচ থেকে পাহাড়ের উপরের দিকে উঠছেন তার কাছ থেকে জানতে চাইলাম তিনি কোথায় গেছেন ? ওপরে কোন গ্রামের অদিবাসি তিনি ? ফুরোমোন পেট্রোলিং বেইস ক্যাম্পের সদস্যরা স্থানীয় আদিবাসিদের সাথে কেমন আচরণ করেন ? সরকারি কি সুযোগ সুবিধা এ পাহাড়ে বসবাসরত আদিবাসিরা পেয়ে থাকেন ? সাপছড়ি (ফুরোমোন) পাহাড়ের গ্রাম গুলোতে কোন ধরনের সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ আছে কি-না ? ইত্যাদি বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়।
উত্তরে তিনি বলেন, তিনি মানিকছড়িতে গিয়েছিলেন। তার গ্রামের নাম মোনতলা আদাম। ফুরোমোন পেট্রোলিং বেইস ক্যাম্পের সদস্যরা স্থানীয় আদিবাসিদের সাথে নিজের আপন ভাইয়ের মত আচরণ করেন। সরকারি সুযোগ সুবিধা বলতে লিটন বড়ুয়াকে সাপছড়ি ইউনিয়নে তাদের ওয়ার্ডের মেম্বার বানানোর পর তাদের গ্রামে (আদামে) খাম্বা দিয়ে বিদ্যুৎ লাইন করে দেয়া হয়েছে, তবে বিদ্যুৎ লাইনে সংযোগ এখনো দেয়া হয়নি। তিনি আরো বলেন, ফুরোমোন পাহাড়ের গ্রাম গুলোতে আগে ঝামেলা ছিল। ২০১৯ সালর পর থেকে এখন কোন ধরনের সমস্যা নাই।
বেশ কিছুক্ষণ আমরা বিশ্রাম নিয়ে পাহাড় থেকে কিছুটা নামার পর আরো একজন স্থানীয় আদিবাসিকে পেলাম আমরা তার হাতে বাজারের ব্যাগ, ব্যাগে দেখা যাচ্ছে, চিপস, বিস্কুট, শিশুদের পড়ার বই এবং তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য। তার বয়স ৩০-৩৫ বছর হবে, তার কাছে জানতে চাইলাম, বন্ধু তুমি কখন এ পাহাড় থেকে নেমে বাজারে গেলে ? সেই ভোর ৬টায় টিপিন ভাত খেয়ে ঘর থেকে বের হয়েছি। এখন প্রায় বেলা ১২টা বাজে দুপুরে ভাত ঘরে পৌছে খাওয়া হবে। চিপস-বই কার জন্য জানতে চাইলে মিষ্টি হাসি দিয়ে সে বলে, চিপস-বই ছেলের জন্য কিনে আনছি। একটু মজা করে বলে বসলো চিপস ৪টা নিছি বৌও খাবে।
সাপছড়ি (ফুরোমোন) পাহাড়ের গ্রাম গুলোতে বসবারত আদিবাসিদের জীবণ-যাত্রা হয়তো বা এভাবে কাটে।
আমরা পাহাড় থেকে প্রায় নেমে পাহাড়ের পাদদেশে আদিবাসিদের ছোট গ্রামে চলে এসেছি।
আমি দোকানদারের কাছে জানতে চাইলাম, দাদা এখানে ভেদ ভেদী আদাম (গ্রাম) থেকে বউ আনা হয়, তার ঘর কোনটি ? দোকানদার তার দোকানের একটু সামনে এসে রাস্তার অপর প্রান্তে একটি ঘর দেখিয়ে দিল এবং ভেদ ভেদী এলাকার মেয়েটি ঘরের বাইরে ছিল, নারী আমার দিকে থাকিয়ে উত্তর দিল, তার বাবার ঘর ভেদ ভেদী আদামে যুব উন্নয়ন অফিসের সামনে, আমি যখন বলে উঠলাম আমাদের পুরাতন বাড়ি তো ভেদ ভেদী গ্রামে এবং যুব উন্নয়ন অফিসের সামনে তখন সেই আদিবাসি নারী তার বাবার নাম বলায় আমি চিনতে পারি। তার বাবা ঝুক্কম চাকমা সে আমার বাল্যকালের পরিচিত একজন। পাশের আদিবাসি নারী-পুরুষরা বলে উঠলেন আপনি তো এ আদামের বেয়াই অথাৎ তাদের গ্রামের একজন আত্মীয়।
সাপছড়ি (ফুরোমোন) পাহাড়ের পাদদেশের গ্রামটি ফেলে ইটের রাস্তা ধরে হেটে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে চলে আসলাম আমরা যে স্থানে ভোর বেলা আমরা আমাদের মোটরসাইকেল গুলো রেখে গিয়ে ছিলাম।
নিশুর হাতে লাগানো ডিজিটাল স্মার্ট ব্যান্ড এর সাহায্যে জানা গেল সাপছড়ি (ফুরোমোন) পাহাড়ের চুড়ায় উঠতে এবং নামতে আমাদের ১৩৫৯০ ধাপ পায়ে হাঁটতে হয়েছে।
রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক শালবাগান পুলিশ ক্যাম্পের সামনে যৌথখামার যাত্রী ছাউনি থেকে ফুরোমোন বৌদ্ধ বিহার মুল চুড়া পর্যন্ত।
এখানে এসে দেখা হয় সেই পাহাড় থেকে শাক নিয়ে আসা আদিবাসি নারীটি সড়কের পাশে বসে তার শাক বিক্রয় করছেন।
সাপছড়ি (ফুরোমোন) পাহাড়ের মুল চুড়ায় ভোর ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত ৬ ঘন্টা ভ্রমন করে আমার অনেক ভাল লেগেছে। আবার অপর প্রান্ত দিয়ে সাপছড়ি পাহাড়ে উঠার ইচ্ছা প্রবল রয়েছে।
সাপছড়ি (ফুরোমোন) পাহাড়ের চুড়ায় উঠা-নামার বাহন হিসাবে পর্যটকদের জন্য যদি সরকারি অথবা বে-সরকারি ভাবে ক্যাবল কার চালু করার ব্যবস্থা করা হয় আর রাত্রি যাপনের সু-বন্ধবস্থ করা হয় তাহলে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের ভ্রমন তালিকায় এক নাম্বারে স্থান পাবে সাপছড়ি (ফুরোমোন) পাহাড়। পর্যটকরা তাদের যে অর্থ খরচ করে সাজেক বা বান্দরবান ভ্রমন করে থাকেন তার চেয়ে অনেক কম টাকায় সমুদ্র পৃষ্ট থেকে ১ হাজার ৫১৮ ফুট উচ্চতায় পাহাড়ের চুড়ায় উঠে মেঘের রাজ্যে ঘুরে আসতে পারবেন এছাড়া সবুজে ঘেরা রাঙামাটি পার্বত্য জেলার সৌন্দর্য প্রাণ ভরে উপভোগ করার সুবর্ণ সুযোগ তো রয়েছে।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলায় শহরে প্রবেশ মুখে আদিকাল থেকে দাঁড়িয়ে থাকা সাপছড়ি (ফুরোমোন) এ পাহাড় বলতে গেলে রাঙামাটি জেলার ঐতিহ্য। সাপছড়ি (ফুরোমোন) পাহাড়ের সবুজায়ন ও প্রকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় সরকারের স্থানীয় প্রশাসন এবং বন বিভাগকে এগিয়ে আসতে হবে। বন্ধ করতে হবে সাপছড়ি (ফুরোমোন) পাহাড় থেকে পাথর উত্তোলনসহ সকল ধরনের বনজসম্পদ আহরণ। সাপছড়ি (ফুরোমোন) পাহাড় রক্ষার জন্য বনবিভাগের নজরদারী করার লক্ষে আলাদা ফাঁড়ি স্থাপন করা প্রয়োজন। এবিষয়ে পরিবেশ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের উদ্ধর্তন মহলের নিদের্শনা এবং স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের আন্তরিকতা অতিব জরুরী। পাহাড় আজ হারিয়ে ফেলছে তার নিজ¯^ ¯^তন্ত্রতা, প্রতিনিয়ত উজার হচ্ছে বন কিন্তু নেই তার প্রতিকার।
রাঙামাটির ঐতিহ্য রক্ষায় ধর্ম-বর্ণ-গোত্র, দলমত নির্বিশেষে, সকল ভেদাভেদ ভুলে আসুন আমরা সাপছড়ি (ফুরোমোন) পাহাড়ের রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হই।
আমাদের সাপছড়ি (ফুরোমোন) পাহাড়ের চুড়ায় ভ্রমনের জন্য কতৃজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। ফুরোমোন পেট্রোলিং বেইস ক্যাম্পের বন্ধুদের সেই সাথে সলিউশন রাঙামাটিকে।
যাঁরা সাপছড়ি (ফুরোমোন) পাহাড়ের চুড়ায় ভ্রমন করতে ইচ্ছুক তাঁরা সলিউশন রাঙামাটির পরিচালক রাশেদুল ইসলাম, মোবাইল- ০১৮৩০০৪১২১৭ এছাড়া রাঙামাটি ট্যুরিষ্ট গাইড এসোসিয়েশন পরিচালক বিপ্লব বড়ুয়া বাপ্পি, মোবাইল-০১৮৭১৬৫৭৮৫৭ যোগাযোগ করতে পারেন। নিরাপত্তা সংক্রান্ত, মোবাইল- ০১৭৬৯৩১২১৯৪।
রাঙামাটিতে রয়েছে : থাং নাং (উচ্চতা- ২৪০৯ ফুট বা ৭৩৪.২৬ মিটার) বরকল উপজেলায় অবস্থিত।
সাপছড়ি (ফুরোমোন) উচ্চতা-১ হাজার ৫১৮ ফুট রাঙামাটি সদর উপজেলার সাপছড়ি ইউনিয়নে অবস্থিত।
#চলনবিলের আলো / আপন