রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:২৫ অপরাহ্ন

ই-পেপার

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য হারিকেন এখন বিলুপ্তির পথে

ডা.এম.এ.মান্নান, ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি:
আপডেট সময়: বুধবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২১, ৫:৪৩ অপরাহ্ণ

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ও আদরে লালিত হারিকেন এখন বিলুপ্তির পথে। গ্রাম বাংলার ছাত্র-ছাত্রীসহ সকল পরিবারের মাঝেই হারিকেন বাতি আলোকিত করতো। সন্ধ্যার পর হতেই রাতের অন্ধকার দূর করতে একটা সময় দেশের প্রতিটি গ্রামের মানুষের অন্যতম ভরসা ছিল হারিকেন, দোয়াত(কুপি)বাতি। ৯০ দশকের পূর্বে ও কিছুকাল পর দেশে বিদেশি চাকরিসহ নানা পেশায় উচ্চপর্যায়ে কর্মরত  থাকাদের মধ্যে অনেকেই পড়ালেখা করেছেন এই হারিকেনের মৃদু আলোয়। গৃহস্থালি এবং ব্যবসার কাজেও হারিকেনের ছিল ব্যাপক চাহিদা। বিয়ে জন্মদিন বা পারিবারিক কোন অনুষ্ঠানে লোকের সমাগম হলে ব্যবহার হতো হ্যাজাক, পাশাপাশি জমা রাখা হতো এই হারিকেন। যুগের পরিবর্তনের পাশাপাশি হারিকেনের স্থান দখল করেছে নানা ধরনের বৈদ্যুতিক, রিচার্জার বাতি। বৈদ্যুতিক ও চায়না বাতির কারণে গ্রাম ও শহরে হারিকেনের ব্যবহার বন্ধ হয়েছে। সেই আলোর প্রদীপ হারিকেন এখন গ্রাম থেকেও প্রায় বিলুপ্ত হচ্ছে।হারিকেন জ্বালিয়েই বাড়ির উঠানে বা বারান্দায় পড়াশোনা করত শিক্ষার্থীরা। রাতের বেলায় পথ চলার জন্য ব্যবহার করা হত হারিকেন। হারিকেনের জ্বালানি হিসেবে কেরোসিন তৈল(ডিজেল)আনার জন্য প্রায় বাড়িতেই থাকত কাচের বিশেষ ধরনের বোতল। সেই বোতলে রশি লাগিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হতো। গ্রাম গঞ্জের হাটের দিনে সেই রশিতে ঝোলানো বোতল হাতে যেতে হতো হাটে। এ দৃশ্য বেশি দিন আগের নয়। পল্লী বিদ্যুতায়নের যুগে এখন আর এমন দৃশ্য চোখে পড়ে না। বাংলার গ্রামীণ ঐতিহ্য দোয়াত, কুপি ও হারিকেন এখন শুধুই স্মৃতি হিসেবে অনেকের বাড়িতেই। তবে অনাদর আর অবহেলার পাত্র হিসেবে। বাংলাদেশ ডাক বিভাগের লোগোটি এখনএ হাতে হারিকেন ও বস্তাবন্দি চিঠিসহ লাঠি নিয়ে ছুটে চলে তার কর্ম পালনে। নিত্য নতুন প্রযুক্তি মানুষকে উন্নত করছে তাই হারিকেন ছেড়ে মানুষ এখন সৌর বিদ্যুৎ সহ বিদ্যুতের দিকে ঝুঁকছে। তাপবিদ্যুৎ, জলবিদ্যুত, সৌরবিদ্যুৎসহ জ্বালানি খাতে ব্যাপক উন্নয়নে ঐতিহ্যবাহী হারিকেন বিলুপ্তির পথে। বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার , যেমন চার্জলাইট, সৌরবিদ্যুৎসহ বেশ কিছু আলোর জোগান থাকায় এখন আর কেউ-ই ঝুঁকছেন না হারিকেন, দোয়াত, কুপি বাতি বা হ্যাজাকের দিকে। নতুন প্রজন্ম হয়তো জানবেও না হারিকেন কী ও হারিকেনের ইতিহাস!
ঘিওরকোল গ্রামের মোছা. রহিতন বেগম(৭৫), লাকী তালুকদার(৪০) জানান, আমাদের বাড়িতে দেশ স্বাধীনের পূর্ব হতেই কেরোসিনের বাতি এবং পরবর্তীতে হারিকেন ব্যবহার করা হতো। যাহা এখনও বিদ্যমান রয়েছে, দিনদিন প্রযুক্তির উন্নতি ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের জন্য এখন আর উক্ত সরঞ্জাম গুলোর ব্যবহার না করলেও স্মৃতি হিসেবে রেখে দিয়েছি। এই ব্যবহারিত হারিকেনটি ১৯৯৪ সনে কেনা ছিল। কালের বিবর্তনের সাথে সাথে সবকিছুই পরিবর্তন ঘটেছে।
নাগরপুর মহিলা অনার্স কলেজের সমাজ বিজ্ঞান এর প্রভাষক মো. মামুন মিয়া বলেন, হারিকেন আমাদের পরম বন্ধু ছিল, হারিকেন জ্বালিয়ে আমরা লেখাপড়া করেছি। এখনকার ছাত্রছাত্রীদের কাছে হারিকেন এর কথা কাল্পনিক মনে হবে। ঘরে বিদুৎ, সোলার থাকায় আজ হারিকেন এর কোন প্রয়োজন নেই, তবে ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য হারিকেন এর বিষয়ে ইতিহাসে স্হান দেওয়া উচিত।
উপজেলার বিভিন্ন বাজারের একাদিক ব্যবসায়ীরা জানান, আমরা র্দীর্ঘ দিন যাবৎ বাবসা করছি সেই ১৯৯০-‘৯৫  সালের কথা, দোকানে হারিকেন, কুপি, দোয়াত বাতি বিক্রি করতাম। আজ ৩৫/৪০ বছর পর এসে দেখি হারিকেন, কুপি বেচা কেনা নেই।
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, হারিকেন এর ঐতিহ্য বাংলার মানুষের অন্তরে মিশে আছে এবং থাকবে। সরকার ঘরে ঘরে বিদুৎ এর ব্যবস্হা করেছে। স্থানীয় প্রশাসনের  উদ্যোগে হারিকেন ধরে রাখার কোন  ব্যবস্হা নেই, এই হারিকেন এর ঐতিহ্য যুগের পর যুগ ধরে রাখার জন্য জাতীয় যাদুঘরে রাখার ব্যবস্হা করতে পারেন সরকার।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন
এক ক্লিকে বিভাগের খবর