রুবিনা আজাদ, আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল:
মৃত্যু মানুষের জীবনে চির সত্য। কিন্তু কিছু আকস্মিক মৃত্যু কোন রকমেই সহজে মেনে নেয়ার মতো নয়। কিছু মৃত্যু হাজারো, লাখো-কোটি মানুষের হৃদয় স্পর্শ করে ছড়িয়ে দেয় হাহাকার আর অফুরন্ত শুন্যতা। একটি মৃত্যু শুধু একটি পরিবার নয় ভাসিয়ে দেয় তার অনুসারী, ভক্ত, আর হৃদয়ের মমতা, স্নেহ মাখা স্পর্শের লোকজনকে। রক্তক্ষরণ হয় সবার। আর তিনি যদি হন কোন মহান মাতা ! তাহলে তাঁর মৃত্যু-শোকের সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে যায় এলাকার সর্বস্তরের মানুষের হৃদয়কে।
ঠিক তেমনি মমতাময়ী মা শাহান আরা আবদুল্লাহ’কে হারিয়ে মাতৃ হারার শোকে মূহ্যমান আগৈলঝাড়া, গৌরনদী, বরিশাল নগরিসহ গোটা দক্ষিনাঞ্চলের জনপদ। হৃদয়ের হাহাকার থেকে বাদ পরেনি ঢাকাসহ দেশের কোটি মানুষের হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার মূর্ত প্রতীক শাহান আরা আবদুল্লাহর শুভাকাক্সখীরাও।
শাহান আরা আবদুল্লাহ। এক স্নেহময়ী, মমতাময়ী মা। যার বটবৃক্ষের মতো সুবিশাল হৃদয়ের ছায়ায় আশ্রিয় ছিলো নিজের সন্তানের মতো হাজারো, লাখে-কোটি নেতা কর্মী। রবিবার (৭জুন) রাত সাড়ে এগারোটায় ঢাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে সকলের মায়া ত্যাগ করে পাড়ি জমিয়েছেন পরপারে (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)।
তাঁর মৃত্যুতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোকার্ত পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন। শোক জানিয়েছেন রত্নগর্ভা মা শাহান আরা আবদুল্লাহ’র জন্য অশ্রু সজল তার পরিবার সদস্যদের সাথে অগনিত শুভাকাক্সখীরা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে, পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন, পরীবিক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক (মন্ত্রী), সাবেক চীফ হুইপ, বরিশাল-১ আসনের সংসদ সদস্য, বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি, আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ’র সহধর্মিনী শাহান আরা আবদুল্লাহ’র ছিলেন রত্নগর্ভা মাতৃ রুপের পাশাপাশি ঐতিহাসিক বর্নাঢ্য রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অংগনে বিচরণ করা কিংবদন্তি প্রতীক। আমরা হারালাম ক্ষনজন্মা এক ঐতিহাসিক মহিয়ষী নারীকে।
ছাত্র জীবন থেকেই বরিশালের রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিচিত লাভ করেন শাহার আরা বেগম। গৌরনদীর মেয়ে ও আগৈলঝাড়ার গৃহবধু শাহান আরা আবদুল্লাহ ছিলেন বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য। দায়িত্ব পালন করেছে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতিসহ বিভিন্ন সামজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে। তিনি নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন রাজনৈতিক, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের ভিত গড়ার কাজে।
মুক্তিযোদ্ধা শাহান আরা আবদুল্লাহ ‘৭৫ এর ১৫ আগস্টের জাতির পিতার সাথে বর্বোরোচিত নশংস হত্যাকান্ডে শহীদ হওয়া তার শ্বশুর সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ও তার শিশুপুত্র সুকান্ত আবদুল্লাহ হত্যার প্রত্যক্ষদর্শী। নিজেও হয়েছিলেন ঘাতকের বুলেটে গুরুতর আহত।
ব্যাক্তি জীবনে তিনি স্বামী আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, একমাত্র মেয়ে কান্তা, ছেলে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ, এফবিসিআইসি’র অন্যতম পরিচালক সেরনিয়াবাত মঈন আবদুল্লাহ, বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের অন্যতম নেতা সেরনিয়াবাত আশিক আবদুল্লাহ, নাতি নাতনিসহ অসংখ্য আত্মীয় স্বজন ও গুনগ্রাহী রেখে গেছেন।
৮ জুন সোমবার সকালে মরহুমার লাশ বরিশাল পৌছলে জেলা প্রশাসন, বরিশাল সিটির্পোারেশন, মুক্তিযোদ্ধা, আগৈলঝাড়া ও গৌরনদী উপজেলা আওয়ামী লী নেতৃবৃন্দসহ রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সামজিক ও সাস্কৃতিক ব্যাক্তিত্বরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মরহুমার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। এসময় শোকার্ত পরিবার সদস্যদের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা জ্ঞাপন করেন তারা।
সকালে বরিশাল মুসলিম গোরস্থান মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে গার্ড অব অর্নার প্রদান এবং জানাজা শেষে বরিশাল মুসলিম গোরস্থানে মরহুমার দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে। লাশ দাফনের মধ্য দিয়ে শাহান আরা আবদুল্লাহর ঐতিহাসিক বর্ণাঢ্য জীবনের অবসানের সাথে পতন হলো একটি জলন্ত ণক্ষত্রের।