মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের বেতন খাত থেকে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে বেতন স্থানান্তর সমস্যায় চার মাস ধরে আটকে আছে দেশের তেষট্টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ভাতা। এতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। বিষয়টি সুরাহার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ দফতরে দফতরে ঘুরাঘুরি করেও পাচ্ছেন না সুফল।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের গত ১১ নভেম্বর এক পত্র যার স্মারক নং ৩৭.০২,০০০০,১০৫,৩৩.০০১.২৪-৪১৯ মাধ্যমে জানা যায়, দেশের যে সকল বেসরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও এখনও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে রয়েছে সে সকল কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে দেওয়ার জন্য ফরোয়াডিং দেওয়া হয়।
এ পরিপ্রেক্ষিতে ১৩ ফেব্রুয়ারি কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) শোয়াইব আহমাদ খান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা সচিব ড. খ.ম কবিরুল ইসলাম বরাবর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন ৬৩টি বেসরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন ভাতা ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের বাজেট থেকে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে স্থানান্তর পুর্বক পুনঃউপযোজনের করে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ভাতা প্রদান নিশ্চিত করনের জন্য প্রতিবেদন প্রদান করেন।
এ বিষয়ে তাড়াশ আজিমনগর কম্পিউটার কারিগরি স্কুল ও বাণিজ্যিক কলেজের ভারপ্রাপ্ত সুপারিনটেনডেন্ট মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের বেতন খাত থেকে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে বেতন স্থানান্তর সমস্যায় চার মাস ধরে আটকে আছে দেশের ৬৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষক ও কর্মচারিদের বেতন। এর মধ্যে আমার প্রতিষ্ঠানের ১৩ জন শিক্ষক ও কর্মচারি ভুক্তভোগী রয়েছে। দ্রুত এই সমস্যার সমাধান চান তিনি।
ওই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক মোঃ হাফিজুর রহমান ও কর্মচারি আতাউর রহমান বলেন, পরিবারে বাবা-মা, স্ত্রী সন্তান নিয়ে ৪ মাস ধরে বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। তারপর এখন চলছে রমজান মাস। রোজা রাখতে ভালো কিছু বাজারও করতে পারছি না। অসুস্থ্য বাবা মা’র চিকিৎসা ও ঔষধ কেনা সম্ভব হচ্ছে না। আসছে ঈদের আগে বেতন না পেলে পরিবারের সকলের পোশাক ও ঈদের বাজার করতে না পারলে মৃত্যুছাড়া কোন উপায় নেই।
কাজিপুর আনোয়ারা আজাদ মাধ্যমিক কারিগরি ও ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট (স্কুল এন্ড কলেজ) অধ্যক্ষ মোছাঃ মারজিয়া বেগম বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানের ৩০ জন শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন বন্ধ চার মাস। তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। বিষয়টি সুরাহার জন্য শিক্ষা দফতরে দফতরে ঘুরাঘুরি করেও পাচ্ছি না কোন সুফল। দ্রুত এই সমস্যার সমাধান চান তিনি।
সিংড়া দুর্গাপুর আডিয়াল টেকনিক্যাল হাইস্কুলের অধ্যক্ষ মোঃ ইয়ারুল হক বলেন, মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে এমপিও স্থানান্তর সমস্যায় শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন বন্ধ চার মাস। স্বল্প বেতনে চাকরি করা বেসরকারি শিক্ষকরা বেতন বন্ধে জীবন চলাচলে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। এই রোজায় একটু ভালো বাজার করার সাধ্য হচ্ছে না। সামনে ঈদ, দুশ্চিন্তায় ভুগছে ভুক্তভোগী শিক্ষক কর্মচারীরা।
এ বিষয়ে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সচিব ড. খ.ম কবিরুল ইসলাম কে টেলিফোন ও মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সিনিয়র সহকারী সচিব মোঃ এনামুল হক বলেন, সচিব স্যার মিটিং এ আছেন। আমরা উক্ত বিষয়ে অবগত হয়েছি। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে করণীয় নিয়ে আমাদের দিক থেকে কোনো ঘাটতি থাকবে না।