পাবনার ভাঙ্গুড়ায় হাত বাড়ালেই মিলছে নানা ধরনের মাদক। ছেয়ে গেছে এখানকার অলিগলি। প্রকাশ্যেই চলছে মাদক সেবন। এ মরণনেশায় জড়িয়ে পড়ছে কিশোর-তরুণ ও বয়স্করা। ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে নানান অপরাধ। এতে অতিষ্ঠ এলাকার সাধারণ মানুষ। পুলিশের দাবি মাদক নির্মূলে চেষ্টা চলছে।
সূত্র জানায়, উপজেলায় প্রায় ১৫ জন মাদকের বড় ডিলার মাথা গজিয়ে উঠেছে। এ মাদক ব্যবসায়ি বিভিন্ন মহল ম্যনেজ করে উপজেলায় জুড়ে মাদকের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে। তারা ভাঙ্গুড়া পৌর সদরসহ উপজেলার প্রায় অর্ধশতাধিক স্পটে নানা ধরনের মাদক বিক্রি করছে।
জানা যায়, উপজেলার পৌর সদরে ভাঙ্গুড়া সিএনজি স্ট্যান্ড, বড়াল ব্রীজ মাছ বাজার, কালিবাড়ি বাজার, পালপাড়া, আদর্শ গ্রাম, সারুটিয়া রেল গেট, জগাতলা বাজার, বড়াল ব্রীজ রেল স্টেশন, ভদ্রপাড়া বাঁশবাগান, মসজিদপাড়া, উপজেলা সংলগ্ন রেল লাইনপাড়া, জামাল কলেজের পিছনে, উপজেলার সদর ইউনিয়নে চড়-ভাঙ্গুড়া পূর্বপাড়া, নৌবাড়িয়া আইডিয়াল স্কুলের পিছনে, শরৎনগর রেল স্টেশন, কৈডাঙ্গা রেল ব্রীজ, নৌবাড়িয়া ছয় খাম্বা নামক স্থানে, অষ্টমনিষা ইউনিয়নে ঝবঝবিয়া পশ্চিমপাড়া, অষ্টমনিষা ঘোষপাড়া, শাহানগর, দিলপাশার ইউনিয়নে পাছ বেতুয়ান, দিলপাশার রেল স্টেশন বাজার, মাগুড়া, পুইঁবিল বাজার, পার-ভাঙ্গুড়া ইউনিয়নে হাটগ্রাম বাজর, ভেড়ামারা বাজার, রাঙ্গালিয়া, পাটুলীপাড়া বাজার, পার-ভাঙ্গুড়া গ্রামের সিমান্ত বাদপাড়া, খানমরিচ ইউনিয়নে করতকান্দি, চন্ডিপুর, মাদারবাড়িয়া, হেলেঞ্চা, মন্ডতোষ ইউনিয়নে বোয়ালমারি টুনিপাড়া, খালপাট বাদপাড়া, সুজাপাড়া ঢালান সংলগ্ন, দিয়ারপাড়া ও গজারমারার এসব স্থানে প্রতিনিয়ত প্রকাশ্যে বিক্রি ও সেবন করা হচ্ছে ইয়াবা, হেরোইন, ফেনসিডিল, গাঁজা, ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট, দেশি-বিদেশি ও চোলাই মদ। বিভিন্ন সময় কৌশলে এ উপজেলায় ঢুকে পড়ছে মাদক। জড়িত রয়েছে বেশ কয়েকজন তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী। যাদের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মাদক মামলাও রয়েছে। এর মধ্যে অনেকে আটক হলেও জামিনে বেরিয়ে পুনরায় মাদকের কারবার শুরু করেছে। এছাড়াও রয়েছে অটো ভ্যান চালক, ফুটপাতের দোকানি ও ফেরিওয়ালা। দীর্ঘদিন যাবত চলছে এসব মাদক বেচা-কেনা। মাদকের টাকা জোগাড় করতে মাদক সেবনকারীরা জড়িয়ে পড়ছে চুরি ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ডে। এদিকে মাঝে মধ্যে ছোটখাটো মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। কিন্তু ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে রাঘববোয়ালরা।
স্থানীয়রা জানান, হঠাৎ করে নানা ধরনের মাদক এলাকায় ছেয়ে গেছে। পুলিশের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে জরুরি ভিত্তিতে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে যুবসমাজ ধ্বংস হয়ে যাবে। মাদক সিন্ডিকেট শিকড় থেকে উপড়ে ফেলতে হবে। তা না হলে সমাজে এই মাদকের ভয়াল থাবা থেকে কেউই নিরাপদ নয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যাক্তি বলেন, সোমবার (১৫ জুলাই) পৌর সভার প্রাণ কেন্দ্রে সিএনজি স্ট্যান্ডের অনুষ্ঠানে সিএনজি মালিক সমিতির সভাপতি আঃ জাব্বার এর নেতৃত্বে চালকরা বিকেল থেকে প্রকাশ্যে মাদক সেবন করে নাচ-গান করছিল। এসময় খোকন আলী (৪৫) নামে এক সিএনজি চালক ঘটনাস্থলে মারা যান। এ ঘটনায় নিহত সিএনজি চালকের স্বজনেরা সভাপতি আঃ জাব্বার কে সভাপতি পদ থেকে অব্যহতি দেওয়ার দাবি জানান। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যন ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম হাসনাইন নতুন সভাপতি দিয়ে সিএনজি মালিক সমিতি পরিচালনা করার নির্দেশ দেন ।
ভাঙ্গুড়া উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম হাসনাইন রাসেল বলেন, বেশ কিছুদিন যাবত উপজেলায় মাদক ব্যবসায়ি ও মাদক সেবিদের আনাগোনা বেড়ে চলেছে। গতকাল সোমবার একজন মাদক বিক্রেতাকে ধরার জন্য অভিযান চালিয়েছি কিন্তু টের পেয়ে পালিয়ে যায় । কিছু মাদক ব্যবসায়িদের তালিকা থানার ওসির কাছে দিয়েছি। আগামি ১ মাসের মধ্য পৌর সভার মেয়র ও সুশীল সমাজকে নিয়ে মাদক মুক্ত ভাঙ্গুড়া গড়বো।
এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাজমুল হক বলেন, মাদকের বিষয়ে কোনো ছাড় নেই। চলতি বছরে ৬ মাসে থানায় ১২টি মাদক মামলা রুজু হয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশ তৎপর রয়েছে। মাদক কারবারি যেই হোক, তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।